

গত ২৪ ঘন্টার আক্রান্ত হিসেবে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বাংলাদেশে ৫ হাজার ছুইঁ ছুঁই অবস্থায় আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাআক্রান্ত হয়েছেন ৩০৯ মৃত্যুবরণ করেছেন ৯ জন। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে ১৪০ জনের মৃত্যু হলো। দেশে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ৪,৯৯৮ জনে।
শনিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
বুলেটিনে জানানো হয়, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় তিন হাজার ৪২২টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে তিন হাজার ৩৩৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সব মিলিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৩ হাজার ১১৩টি। নতুন যে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে তার মধ্যে আরও ৩০৯ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
ফলে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৯৯৮ জনে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন আরও নয়জন, এদের মধ্যে পাঁচজন নারী ও চারজন পুরুষ, তিনজন ঢাকার এবং ছয়জন ঢাকার বাইরের বাসিন্দা।। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৪০ জনে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকার এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয় বুলেটিনে।
মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে বই পড়া, বাগান করা এবং শারীরিক ব্যায়াম করার পরামর্শ দেয়া হয় বুলেটিনে। রোজার ইফতারে পানিসহ তরল খাবার বেশি করে গ্রহণেরও পরামর্শ দেয়া হয় এসময়।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এখন গোটা বিশ্বে তাণ্ডব চালাচ্ছে। চীন পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিয়ে উঠলেও এখন মারাত্মকভাবে ভুগছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সোয়া ২৮ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ ছুঁই ছুঁই। তবে আট লাখ রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর প্রথম দিকে কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর মিললেও এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুও।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। নিয়েছে আরও নানা পদক্ষেপ। এসব পদক্ষেপের মূলে রয়েছে মানুষে মানুষে সামাজিক দূরত্ব বজায়, বিশেষত ঘরে রাখা। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনী, র্যাব ও পুলিশের টহল জোরদার করেও মানুষকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না বিধায় করোনাভাইরাসের বিস্তার উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
এদিকে মরণঘাতী করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশে ইতোমধ্যে যাবতীয় গণজমায়েত বন্ধ করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে মসজিদে গিয়ে জামাত এবং জুমার নামাজেও উপস্থিতি একেবারে সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। রমজানের শুরুতে বৃহস্পতিবার তারাবীহ সংক্রান্ত বিবৃতি দিয়েছেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ।
ধর্মপ্রতিমন্ত্রী জানান, আসন্ন রমজানে দেশের সব মসজিদে তারাবির নামাজ চালু থাকবে। ইমাম, মুয়াজ্জিন, হাফেজসহ সর্বমোট ১২ জন মুসল্লি এতে অংশ নিতে পারবেন বলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহর।
করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সীমিত আকারে দেশের মসজিদগুলোতে তারাবী চালু থাকবে। প্রত্যেক মুসল্লী ঘর থেকে অজু করে আসবেন। অসুস্থ বা সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা মসজিদে না এসে ঘরে নামাজ আদায় করবেন। তারাবীতে সর্বোচ্চ ১২ জন মুসল্লি উপস্থিত থাকতে পারবেন।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে গত ৬ এপ্রিল ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দেশের মসজিদগুলোকে মুসল্লি সংখ্যা সীমিত করা হয়। মসজিদে ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের সমন্বয়ে পাঁচ ওয়াক্তের জামাতে সর্বোচ্চ পাঁচজন করে এবং জুমার জামাতে ১০ জন করে অংশ নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়।
বুধবার কওমি মাদরাসার শীর্ষ সংস্থা আল হাইয়াতুল উলাআর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ বৈঠক করেছেন। বৈঠক থেকে আলেমদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ প্রশাসনের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা ফোনে মতবিনিময় করেছেন।
সেই আলোচনায় মক্কা-মদিনায় মসজিদুল হারামাইনের আদলে রমজানে তারাবিসহ অন্যান্য নামাজের জামাতের অনুমতি দেয়ার বিষয়ে অনুরোধ জানান আলেমরা।
আরআর/পাবলিক ভয়েস