কিছু কথা কিছু ব্যাথা

প্রকাশিত: ১:৫১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৬, ২০১৯

মুফতী বুরহান উদ্দীন

আমীরে হেফাজতের বক্তব্য নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে এককথায় তুফান চলছে৷ প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান পরিষ্কার করছেন৷ বক্তৃতা বিবৃতি ফেসবুক লাইভ কিংবা টকশোতে৷ সবার বক্তব্যই কাঙ্খিত৷ অনাকাঙ্খিত কাউকে কিছু বলতে এখনো পর্যন্ত শুনা যায়নি৷ সো কারো বক্তব্য নিয়ে মাথা ঘামানো দরকার আছে বলে মনে হয়না৷

তারপরও… মস্তকধারীরা আপন মস্তক শুধু ঘামাচ্ছেন না রীতিমতো ভেজাচ্ছেন৷ সমস্যাটা কাঙ্খিত অনাকাঙ্খিতের সংজ্ঞা নির্ধারনে৷ প্রত্যেকের চিন্তা চেতনা, মন মানসিকতা বলে দেয় তার কোন বক্তব্য কাঙ্খিত কোনটা অনাকাঙ্খিত৷ আমি একজন ধার্মিক মানুষ৷ হ্যাঁ, মানছি, কাগজে কলমে৷ অন্তত ফ্রেন্ড সার্কেলে৷ দিলের খবর উপরওলার হাতে ছেড়ে দিয়েছি ৷তিনি দেখছেন৷

আমি আমার যাবতীয় কাজে ধর্মকে ফলো করার চেষ্টা করি৷ স্বস্তি পাই৷ কোন বিষয়ে ধর্মকে আমার টানতে হয়না৷ বিষয়টাই ধর্মের মোড় ঘুরে আমার কাছে আসে৷ তাই, আমার বক্তব্যে কাঙ্খিত অনাকাঙ্তিতের বিষয়টা একরকম৷ বিপরিতে একজন সেকুল্যর৷ যিনি তিনবেলা খেয়ে না খেয়ে সেকুল্যরি করে বেড়ান৷ তার বক্তব্যে কাঙ্খিত অনাকাঙ্খিতের বিষয়টা ভিন্নরকম৷ আমাদের পাড়ায় একজন “স্পেশাল বাম” আছেন৷ না, তিনি একা না৷ তাকে ঘিরে একটা স্পেশাল বামগোষ্ঠি আছে৷ জামাত ব্যমোতে তার ইনপেকসন হয়ে গেছে৷ জামাতের মডার্ণ ইসলামের বিরোধিতা করতে করতে এখন এ “মহাপুরুষ” একটি আলট্রা মডার্ণ ইসলাম আবিষ্কারের পথে৷ হাতেগুনে উনত্রিশটি ভালোকাজের তিনি কর্মবিধায়ক৷

এ প্রেক্ষাপটে তার কাছ থেকে আমাদের “প্রত্যাশিত” বক্তব্য কী ছিল৷ হ্যাঁ,সেটাই আমরা পেয়েছি৷ তিনি আল্লামা শফীর বক্তব্যের আগাগোড়া না বুঝে বা না বুঝার ভান করে ভ্রু নাঁচিয়ে আর ভূড়ি দুলিয়ে রসিয়ে রসিয়ে জ্ঞান ঝেড়ে গেলেন “ক্লাস ফোর ফাইভ পর্যন্ত পড়তে হবে এ ধরনের কথা ইসলামে নেই”৷ সেইম আশংকা বিদাতীদের পক্ষ থেকেও ছিল৷ লেকিন ওহ লোগ তো দো কদম আগে নিকলা৷ নাস্তিক আর নাস্তিকাদেরকে টুপি আর স্টাইলিশ হিজাব পরিয়ে এনে মানববন্ধন করে গেল৷ আর চিরাচরিত অভ্যেসমতে গালাগালির বন্যা বইয়ে গেল৷

একই কাজ করলেন ড: কামাল ও মির্জা ফখরুল৷ ড:কামাল স্বঘোষিত নাস্তিক৷ তিনি তার অবস্থান অনুযায়ী আল্লামা শফীর জেল চেয়ে গেলেন৷ আর মির্জা ফখরুল সর্বসাকুল্যে একজন সেকুলারমাত্র৷ তার বক্তব্য ড: কামালের চে হালকা হওয়াটাই স্বাভাবিক৷ তিনি আল্লামা শফির বক্তব্যে হতবাক হওয়া পর্যন্ত সীমিত থাকলেন৷ কিন্তু মির্জার এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া ইসলামি মহলের কেউ কেউ ব্যক্ত করলেন অনাকাঙ্খিত ভাবে৷ বলে গেলেন, “অন্তত তার কাছ থেকে এমন বক্তব্য আশা করিনি”৷

কারন দর্শালেন “তিনি ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী”৷ আমরা বুঝি বা না বুঝি,আমাদের এ ধরনের বক্তব্যে ওরা মুখটিপে হাসে৷ আর নিজেদের রাজনৈতিক কূটচালে সফলতার আভাস দেখে৷ জামাত বা অন্যান্য ইসলামি দলকে বিএনপি সাথে নিয়েছে শুধুমাত্র এদেশের ধর্মপ্রিয় জনগনের সমর্থন পাওয়ার লোভে৷ এটা স্রেফ রাজনৈতিক একটা চাল৷ মির্জা ফখরুলেরা না ইসলামকে পছন্দ করে না এর অনুশাসন মানে৷ এ ক্ষেত্রে ওরা আর আওয়ামীলীগ আইনুদ্দীন রহ: এর ভাষায় “একই পাখির দু ডানা”৷ ধর্মব্যবসা৷

ব্যস আর কিছুইনা৷ নির্বাচনের আগে সে তার ধর্মিয় অবস্থান পরিষ্কার করেছিল৷ এরপরও তাকে ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী বলতে হলে আমার মতে প্লাস্টিকের মুখ লাগবে৷ চামড়ার মুখ দিয়ে হবেনা৷ তাদের ব্যপারে আমাদের কেউ কেউ এমন বক্তব্য দেন যেন তারা খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতিতে নেমেছে৷ এটা ওদের দোষ না বরং আমাদের চাওয়ার বাড়াবাড়ি৷

জিয়ার সাথে এখনের বিএনপির তুলনা করতে যারা পছন্দ করেন তাদের উচিত মাহমুদুর রহমানের দুসপ্তাহ আগে দেয়া বক্তব্যটা শুনে নেয়া৷ তিনি এখনের বিএনপির সঠিক চিত্রটাই এঁকেছেন৷ আল্লামা আহমদ শফির বক্তব্য নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে কথা হওয়াটা স্বাভাবিক৷ এটাকে আমি অস্বীকার করছিনা৷ তবে পক্ষের লোক থেকে বিপক্ষের বক্তব্য পাওয়াটা যেমন অনাকাঙ্খিত তেমনি বিপক্ষের লোক থেকে পক্ষীয় কথা শুনতে চাওয়াটাও বাড়াবাড়ি৷ আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সহীহ বুঝ দিন৷

মন্তব্য করুন