

অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের উত্তর হামছাদি বেড়ী সংলগ্ন খাল, রাদা বাড়ীর পাশে ফসলি জমি ও চর রমনী ইউনিয়নে চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। ফলে বেড়ী ও ফসলী জমি তলীয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এনিয়ে এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক ও হতাশা বিরাজ করছে। ফসলি জমি ধবংস করে সরকারি খাল, বেড়ির খাল, মেঘনানদী, বিলসহ যত্রতত্র বালু উত্তোলন করছে।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অমান্য করেই এসব নদী, ফসলি জমি, পুকুর খাল থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করছে বালু। বীরদর্পে কারোর কথা কর্ণপাত না করে বালু তোলা অব্যাহত রেখেছে অসাধু মহল।
অভিযোগ উঠেছে, এসব বালু ব্যবসা আর ব্যবসায়ীদের পিছন থেকে সাহায্য করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। ফলে একদিকে ঘর- বাড়ি ভাঙনের ভয়ে দিন কাটছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। অন্যদিকে পরিবেশ হারিয়ে ফেলেছে তার নিজস্ব ভারসাম্য।
সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তর হামছাদীতে ইসমাইল ও আনোয়ার ফরাজীর একটি করে ড্রেজার ও চররমনী ইউনিয়নে খোদ চেয়ারম্যান ইউছুপ ছৈয়ালের নেতৃত্বে তার ভাতিজা বাবুল, ফিরোজ মেম্বার,শাহজাহান মেম্বারের ভাই জিল্লাল, জয়নাল আবেদীন,খালেক মেম্বারের ভাতিজাসহ প্রত্যেকের ২টি করে মেশিন দিয়ে তারা বালু উত্তোলন করছে।
এসব বালু বিক্রি করে তারা মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলি জমি, মেঘনা নদী, ওয়াপদা খাল, বেড়ির খাল।
উত্তর হামছাদীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়ির খাল থেকে গত আড়াই বছর ধরে হেভিওয়েট ড্রেজার মেশিন দিয়ে ১০ ইঞ্চি পাইপ দ্বারা বালু উত্তোলন করে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বালু বিক্রি করা হয়েছে। এনিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলে তারা হুমকি ধামকি দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি মামলা দিয়েও হয়রানী করছে বালুখেকো ইকবাল হোসেন ওরপে সেলিম পাটওয়ারী।
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন একই পরিবারের ৪ জনসহ মামলার এজাহারে উল্লিখিত ১২ জন নিরীহ জনতা এবং অজ্ঞাতনামা আরো ১৫জনকে আসামী। তবে মামলার এজাহারে বিক্ষুব্ধ জনতা দলবদ্ধ হয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের কিছু পাইপ ভাঙচুর করে বলে উল্লেখ করা হয়।
মাত্রাতিরিক্ত বালু উত্তোলনের ফলে বেড়িবাঁধ চরম হুমকির মুখে রয়েছে এবং খালের পাড়ে বসবাসরত মানুষের ঘরবাড়ি যেকোনো সময় খালে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে এলাকাবাসী শঙ্কা প্রকাশ করছে।
ড্রেজারে নিয়মিত প্রায় ১৫ টি স্পটে বালু উত্তোলন চলছে মাসের পর মাস। বোমা মেশিন, শ্যালো মেশিনসহ অবৈধ যান্ত্রিক মেশিনের বিকট শব্দে এলাকায় কথা শোনা বা বলার অবকাশ নেই। কিন্তু আইনে বলা হয়েছে, নদীর ভূ- প্রাকৃতিক পরিবেশ, মৎস, জলজ প্রাণী বা উদ্ভিদ বিনিষ্ট হলে বা হবার আশংকা থাকলে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এ বিষয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি মোবারক হাওলাদার বলেন, ‘বেড়ির খাল থেকে বালু উত্তোলনের ফলে যেকোনো সময় বেড়ি ধ্বসে যাবে। পাড়ে বসবাসরত মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে পড়বে। এখনেই কিছু কিছু পাড় ভেঙে পড়ছে। আমরা এর প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদেরকে ইকবাল হোসেন ওরপে সেলিম পাটওয়ারী মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।
পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। কিন্তু এসব আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অনেক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা চালিয়ে যাচ্ছে এ অবৈধ বালু ব্যবসা’।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্দিষ্ট সীমানার মধ্য হলে প্রত্যকটি বালু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দৈনিক বা সাপ্তাহিক টাকা গ্রহণ করে স্থানীয় ভুমি অফিসের কর্মচারি, স্থানীয় রাজনৈতিক চুনোপুটি নেতা সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের পকেটে মাসোহারা চলে যায় বলে তারা নিশ্চুপ রয়েছেন। অন্যদিকে চরম হতাশা ও দুশ্চিন্তার মধ্যে দিয়ে দিন পার করছেন স্থানীয় বালু উত্তোলনের খালের পাশে বসবাসরত সাধারণ মানুষেরা।
কেউ কেউ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হয়ে বালু সংরক্ষনের জন্য দিচ্ছেন ফসলি জমি। বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে গিয়ে নিরাপত্তাজনিত অভাব অনুভব করছে এলাকার সচেতন মানুষ। এদিকে প্রশাসনের সুদৃষ্টি চেয়েছেন এলাকাবাসী।
বেড়ির খাল থেকে বালু উত্তোলন, বিক্রি ও মামলা দিয়ে হয়রানি করার বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইকবাল হোসেন ওরপে সেলিম পাটওয়ারী সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
/এসএস