উত্তাল পল্টন এখনও নীরব কেন?

প্রকাশিত: ৭:৩৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৫, ২০১৯

জুনায়েদ শামসি

বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ যেনো সরগরম থাকে প্রতিটি মুহুর্ত। ইস্যুর পর ইস্যু ঘিরে রাখে নোংরা ময়দানটাকে। ইসলামী রাজনীতির একই অবস্থা।  প্রচলিত দুটি ধারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদ্যমান। আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট। বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির কন্টাক্টাররা প্রচলিত রাজনীতির দুই ধারার কোনো একটির সাথে যেনো লেজুড় বেঁধে রয়েছেন দীর্ঘকাল থেকে। কেউ মহাজোটের অংশীদার কেউ আবার ঐক্যফ্রন্টের অংশীদার।

২০০৮ থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতার ভাগিদার হিসেবে বসে আছে মসনাদে। অদ্যবদি পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতার মসনাদে বিদ্যমান। তাদের সাথে অল্প সংখ্যক ওলামায়ে কেরাম পরোক্ষভাবে রয়েছেন। কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফন্টের সাথে তথাকথিত জমহুর ওলামায়ে কেরাম দীর্ঘ কাল থেকে রয়েছেন প্রতক্ষভাবে চুক্তির ভিত্তিতে।

জমহুর ওলামায়ে কেরাম এর স্লোগান অনেকটাই সুন্দর এবং সু-স্বাধু। আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষ ইসলাম বিরুদ্ধ সরকার।তাদের সাথে লেজুড় রেখে রাজনীতির বৈধতা নেই ইসলামে। তারা বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে ইসলামের বিপক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। আর বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট ইসলামী মুল্যবোদে বিশ্বাসি সংগঠন।

বিএনপি ইসলামের বন্ধু হিসেবে তাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের পতন যেনো সময়ের দাবি। ইহা মুলত জমহুরিয়াতের দোহাই দেয়া ওলামায়ে কেরাম এর স্লোগান।

আওয়ামী লীগ বিএনপি সবই প্রচলিত রাজনীতি করে ক্ষমতার মসনদ ঠিকিয়ে রাখার জন্য। ক্ষমতার জন্য তারা কতোবা কিছু করতে পারে। তা আমাদের কারো অজানা নয়। ক্ষমতা ঠিকিয়ে রাখার সার্থে রাতের আধাঁরে শাপলা চত্বর শুন্য করার চেষ্টা আওয়ামী লীগ যেভাবে করতে পারে ঠিকই বিএনপির লালিত জামাত একই দিনে সারাদেশে ভোমা হামলা করে দায় আলেমদের উপর চাপিয়ে ক্ষমতার মসনদ শক্ত রাখার ষড়যন্ত্র করেছিল।

কওমী আলেমদের জেল-জুলুম আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেভাবে হয়েছে। ঠিক তেমনিভাবেই বিএনপি সরকারের আমলেও কিন্তু কওমী আলোমদের জেল-জুলুম রিমান্ড ইত্যাদি সহ্য করতে হয়েছে। বাংলাদেশে ইসলামের জন্য কওমী ছাত্রদের শাহাদাতের ইতিহাস বিএনপি সরকারের আমলেও ছিলো আওয়মী লীগ সরকারের আমলে কওমী ছাত্রদের শাহদতের দৃষ্টান্ত রয়েছে।

তথাকথিত বামরাই ইসলাম ও মুসলমানের দুশমন এ কথা আমাদের কারো অজানা নয়। আওয়ামী লীগে যেভাবে বামদের আশ্রয় দিয়ে থাকে (যদিও এবারের মন্ত্রীসভাতে মহাজোটের অংশীদার বামদের স্থান হয়নি) বিএনপিতেও ঠিক তেমনি বামদের আশ্রয় রয়েছে। ইসলামের নামে যারা রাজনীতি করে নবিও সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করে তারাও কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের অংশীদার।

বিএনপি আওয়ামী লীগ আমাদের জন্য ফিফটি ফিফটি। তারা দু দলই চায় ক্ষমতায় থাকতে। ক্ষমতার জন্য ইসলামী রাজনীতিবিদদের ব্যবহার করা হয়। শাপলার মাধ্যমে বিএনপি জামাত চেয়েছিলো ক্ষমতার মসনদ দখল করতে। সেটা বুঝার জন্য হয়তো “বিশ্বাসের বহুবচন” শ্রদ্ধেয় রশীদ জামীল ভাইয়ের লিখিত বইটি আমাদের পড়তে হবে।

২০১৮ সনে ঐক্যফ্রন্টে নতুন যোগ দিয়েছেন কাদিয়ানী মতবাদের অনুসারী নাস্তিক তাসলিমা নাসরিনের সহচর দক্ষিণা ইয়াহুদীদের গুপ্তচর খ্যাত কমিউনিস্ট নেতা ড.কামাল সাহেব। আরো অনেক বামপন্থিরা বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ হয়েছেন।

এতো কিছুর পরও আমাদের জমহুর ওলামায়ে কেরাম এখনো ঐক্যফন্টের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসলামকে ক্ষমতার মসনদে /অথবা নাটের গুরু যারা, তারা নিজেদের ক্ষমতায় নিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখছেন।

বর্তমান চলতি ইস্যুতে কথা বলা যেনো আমার লক্ষ্য। শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী দা.বা. বাংলাদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলিমে দীন। উনার সম্পর্কে বাংলাদেশের কোনো ওলামায়ে কেরাম আজ অবদি কালাম করেননি। শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী দা.বা. এর একটি বক্তব্য নিয়ে টানাটানি চলছে পুরো বাংলাদেশ। নারীবাদী তথাকথিত বামপন্থিরা আজ যেনো আধাজল খেয়ে মাঠে নেমে পড়েছে।

তাঁর বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগ ব্রিফিং করেছে -এটা আহমদ শফীর ব্যক্তিগত বক্তব্য।  বিএনপি মহাসচিব ব্রিফিং করেছেন-আহমদ শফীর বক্তব্যে আমরা হতবাক। ঐক্যফ্রন্ট আমাদের জমহুরদের জোট প্রধানের বক্তব্যে আহমদ শফি দা.এর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। আমরা অতিতে দেখেছি শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফিকে নিয়ে কেউ বাঝে কোনো মন্তব্য করার সাথে সাথেই পল্টন সহ প্রতিটি ময়দান যেনো বক্তার হুংকার এবং শ্রোতার স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠত।

কিন্তু আজ পর্যন্ত জমহুর ওলামায়ে কেরাম এর জোট প্রধান এবং মহাসচিব এর উল্লিখিত মন্তব্যের পরও পল্টন সহ নিরব।  মাইক্রোফন কাছে পেলে তড়িঘড়ি করে ফতোয়া বেরিয়ে যায়। আহমদ শফীর দরদ যাদের উৎলে উঠত। আজ তারা কোথায়। সেই বাম রাম কামালের জবাব দেবার মতো সাহস কি নেই৷ না কোনো স্বার্থের কারনে জবাব দেয়া যাচ্ছে না। সেই নিরবতার পিছনের কাহিনী কারো কাছে অজানা নয়। গোলামির জিঞ্জিরে আবদ্ধ থাকার নাম ইসলামী রাজনীতি নয়।

কিছুদিন আগে নির্বচন ২০১৮ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের আগে যেনো একটি ফটো আমার চোখে বেসে উঠেছিল। গত ৩ ডিসেম্বর বর্তমান বাংলাদেশের অন্যতম প্রবীন বুযূর্গ আলেমেদ্বীন, অধিকাংশ সংগঠনেই আল্লামা আহমদ শফী সাহেব দা.বা. এর পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মুরুব্বী হযরত মাওলানা আশরাফ আলী সাহেব দা.বা. এর নেতৃত্বে একদল ওলামায়ে কেরাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাংসদ, বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাহেবের আলেমদের সাথে এক নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় যোগদেন।

এই ফটো নিয়ে কোনো ইস্যু হয়নি। ইস্যু হওয়ার কথা ছিলো। কারন তাদের মতবিনিময় সভায় অংশ্রগ্রহণ আওয়ামীলীগকে সমর্থন বলে মনে করা স্বভাবিক। এই জায়গায় যদি দুর্লভপুরি বা মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ থাকতেন। তাহলে হয়তো সমালোচনার ঝড় উঠতো ফেবু পাড়ায়।

আবদেন
আমাদের জমহুর উলামায়ে কেরাম এর কাছে। ত্যাগ করুন সকল জোট-ফ্রন্ট। ইসলামের জন্য হলেও নিজের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে হলেও ইসলামী দলহুলো নিয়ে এক কাতারে সমবেত হোন।

 

মন্তব্য করুন