কাদিয়ানিরা মুসলমান নয় কেন ?

প্রকাশিত: ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২০

কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে সদা সোচ্চার বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের মুসলমানরা। যেহেতু কাদিয়ানিদের উৎপত্তি ভারত উপমহাদেশে তাই তাদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিও কঠোর আওয়াজে ভারত উপমহাদেশ থেকেই উচ্চারিত হয়েছে। মির্জা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানির মত-পথে যারা ধর্ম মানে তারাই মূলত কাদিয়ানি হিসেবে পরিচিত। কাদিয়ানিদের কাফের ঘোষণার দাবি নিয়ে অনেকেই জানতে চান তারা কাফের কেন হবে! ইসলামের দৃষ্টিতে কাদিয়ানিরা কাফের কেন তা জানার আগে সংক্ষেপে কাদিয়ানীদের পরিচয় জানা জরুরী।

কাদিয়ানি কারা : কাদিয়ানিদের পরিচয় দিতে গিয়ে মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী লেখেন, ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর সুদুরপ্রসারী নীলনকশায় কাদিয়ানি মতবাদের জন্ম। মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ইংরেজদের ফর্মুলা অনুযায়ী মিথ্যা নবুওয়তের দাবি করে। তার অনুসারীদের কাদিয়ানি সম্প্রদায় বলা হয়। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন নস্যাৎ করা এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ ও অনৈক্যের বীজ বপন করাই হচ্ছে কাদিয়ানী মতবাদের উদ্দেশ্য।

মির্জা গোলাম আহমদ তৎকালীন ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের গুরুদাসপুর জেলার কাদিয়ান নামক গ্রামে ১৮৩৫ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মির্জা গোলাম মুর্তজা, মা’র নাম চেরাগ বিবি। শিক্ষা দীক্ষায় আরবি ব্যাকরণ, যুক্তিবিদ্যা, দর্শন ও চিকিৎসা বিদ্যায় পড়া লেখা করেন।

ছাত্রত্ব শেষ করে শিয়ালকোট জেলা প্রশাসনের অধীনে স্বল্প বেতনে কিছু দিন কেরানির চাকরী করেন। পরে আদালতে মোক্তার নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ফেল করেন। তারপর আর কোথাও চাকরি করার সুযোগ না পেয়ে ইংরেজ বেনিয়া গোষ্ঠীর এজেন্ট হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেন।

কাদিয়ানি নবুওয়ত ; ব্রিটিশ ষড়যন্ত্রের ফসল : উনবিংশ শতাব্দিতে ব্রিটিশ বেনিয়া গোষ্ঠী যখন ভারতবর্ষ দখল করে নেয় তখন স্বাধীনতা সংগ্রামের সিপাহসালার হযরত শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. ফাতওয়া দিয়েছিলেন ‘হিন্দুস্তান দারুল হারব’ হয়ে গেছে ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জিহাদ করে দেশকে স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ।

এই ফাতাওয়ার ফলে উপমহাদেশে স্বাধীনতা সংগ্রামের দাবানল জ্বলে উঠে। ওলামা মাশায়েখ ও মুজাহিদীনে ইসলাম আজাদী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রতিটি জায়গায় স্বাধীনতা প্রেমী জনতা সাহসিকতার সাথে ইংরেজদের মুকাবিলা করেন।

শহীদে বালাকোট হযরত সাইয়েদ আহমদ বেরেলভীর নেতৃত্বে ভারতে, শায়খ মুহাম্মদ আহমদের নেতৃত্বে সুদানে এবং জামালুদ্দিন আফগানীর নেতৃত্বে যখন আফগানিস্তানে ইসলামি সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষে জিহাদী আন্দোলন চাঙ্গা হয়ে উঠে, সাধারণ জনগণও ঈমানী চেতনা ও জিহাদী জযবা নিয়ে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন এসব অঞ্চলে চেপে বসা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাদের ক্ষমতা ও আধিপত্য অটুট রাখার জন্য নতুন নতুন ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করতে থাকে। তারা বুঝতে পারে, ইসলামি পুনর্জাগরণের যে দীপশিখা প্রোজ্জ্বলিত হয়ে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছে এবং মুসলমান বিপ্লবীদের অন্তরে জিহাদের চেতনা যেভাবে জাগ্রত হচ্ছে ব্রিটিশ সাম্রজ্যোর ক্ষমতার মসনদ যে কোন সময় জ্বালিয়ে ছাই করে দিতে পারে। এই ভয়েই তারা ‘দালাল সৃষ্টি করো শাসন করো’ নীতির জন্ম দিল।

মির্জা কাদিয়ানি যিন্দিক কেন? : মদের বোতলের ওপর যমযমের লেবেল লাগিয়ে সরবরাহ করা যেমন জঘন্যতম অপরাধ, আর কুকুরের গোস্তকে হালাল উপায়ে জবেহকৃত জন্তুর গোস্ত বলে লেবেল লাগিয়ে বিক্রি করা যেমন দণ্ডনীয় অপরাধ ঠিক তেমনিভাবে মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি স্বীয় কুফরি মতবাদের ওপর ইসলামের লেবেল লাগিয়ে সরলপ্রাণ মুসলমানদের ধোঁকা দেয়াও দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই মির্জা অবশ্যই যিন্দিক।

গোলাম আহমাদ ছিল অত্যন্ত ধূর্ত ও চালবাজ। সে অত্যন্ত সুকৌশলে মুসলমানদের মাঝে তার ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তুার করতে থাকে। প্রথমে সে নিজেকে একজন মুজাদ্দিদ বা মহান সংস্কারক, তারপর ইমাম মাহদী, কখনো বা নিজেকে ঈসা (আলাইহিস সালাম) দাবী করে। তারপর নিজেকে ‘ছায়া নবী’ সবশেষে একজন ‘পূর্ণ নবী’ বলে জোরেশোরে প্রচার চালাতে থাকে। শরীয়তের অনেক বিধান রহিত ঘোষণা করে এবং অনেক হুকুম-আকহাম রদবদল করতে থাকে। একদল লোককে তার অনুসারী হিসেবে পেয়ে যায়। তাদেরকে নিয়ে দল প্রতিষ্ঠা করে নাম দেয় ‘আহমদীয়া মুসলিম জামাত’।

কাদিয়ানিরা কাফের কেন এ বিষয়ে কিছু সরল কথা : গোলাম আহমদ কাদিয়ানী প্রচার করতে থাকে যে,মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শেষ নবী নয় বরং যুগের চহিদা মোতাবেক নবুওয়াতের ধারা অব্যহত থাকবে এবং অন্যান্য নবী ও রাসূলগণের মত সে ও একজন নবী এবং রাসূল। এ ছাড়াও ইসলামের অসংখ্য মৌলিক আকিদা বিষয়ে কাদিয়ানীদের রয়েছে বিভ্রান্তকর অবস্থান। যা মুসলিম সমাজে বিভিন্নভাবে বিভ্রান্তি তৈরি করে রাখে।

আল্লাহ তাআলা মানব জাতির যোগ্যতা ও উপযোগিতা হিসাবে কালক্রমে তাদের বিভিন্ন শরীয়ত দিয়েছেন। আর এর পূর্ণতা ও পরিসমাপ্তি বিধান করেছেন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে। দ্বীনের পূর্ণাঙ্গতা লাভের পর যেহেতু এতে কোনোরূপ সংযোজন ও বিয়োজনের প্রয়োজন বা অবকাশ নেই তাই মানবজাতির জন্য নতুন শরীয়তেরও প্রয়োজন নেই। সুতরাং আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূল প্রেরণের ধারা চিরতরের জন্য বন্ধ করে দিয়েছেন। এটা ইসলামের অন্যতম মৌলিক বিশ্বাস। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, (অর্থ) ‘‘আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণতা দান করেছি, আর আমি তোমাদের জন্য আমার নেয়ামতকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি এবং দ্বীন হিসেবে ইসলামকে তোমাদের জন্য মনোনীত করেছি।’’ (সূরা মায়েদা : ৩) পবিত্র কুরআনে অন্যত্র বলা হয়েছে, (অর্থ) ‘‘মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যকার কোনো বয়স্ক পুরুষের পিতা নন, তবে তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী।’’-সূরা আহযাব : ৪০

আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেনঃ “মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের কোন পুরুষের পিতা ছিলেন না। তবে তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী।” [সূরা আহযাবঃ ৪০]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অন্যান্য নবীর মুকাবিলায় আমাকে ছয়টি বিষয় দ্বারা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করা হয়েছে, ১. আমাকে অল্প কথায় বেশি ভাবপ্রকাশের যোগ্যতা দেওয়া হয়েছে, ২. আমাকে গাম্ভীর্যজনিত প্রতাপ-প্রতিপত্তি দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে, ৩. আমার জন্য গণীমতের মাল হালাল করে দেওয়া হয়েছে, ৪. সমগ্র ভূপৃষ্ঠকে আমার জন্য নামায পড়ার উপযোগী জায়গা ও পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ হিসেবে স্থির করা হয়েছে, ৫. আমাকে সমগ্র সৃষ্টি জগতের রাসূলরূপে প্রেরণ করা হয়েছে, ৬. আমার দ্বারা নবীদের সিলসিলার পরিসমাপ্তি ঘটানো হয়েছে।’’ (সহীহ মুসলিম, মাসাজিদ, হাদীস : ৫২৩)

অপর এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার ও নবীদের উদাহরণ এমন একটি প্রাসাদ, যা খুব সুন্দর করে নির্মাণ করা হয়েছে, তবে তাতে একটি ইটের জায়গা খালি রেখে দেওয়া হয়েছে। দর্শকবৃন্দ সে ঘর ঘুরে ফিরে দেখে, আর ঘরটির সুন্দর নির্মাণ সত্ত্বেও সেই একটি ইটের খালি জায়গা দেখে আশ্চর্য বোধ করে (যে, এতে একটি ইটের জায়গা কেন খালি রইল!) আমি সেই একটি ইটের খালি জায়গা পূর্ণ করেছি। আমার দ্বারা সেই প্রসাদের নির্মাণ পরিসমাপ্ত হয়েছে, আর আমার দ্বারা রাসূলদের সিলসিলা পরিসমাপ্ত করা হয়েছে।’’ অপর এক রেওয়ায়াতে বলা হয়েছে, ‘‘আমি হলাম সেই খালি জায়গার পরিপূরক ইটখানি। আর আমি হলাম সর্বশেষ নবী।’’ (সহীহ বুখারী ১/৫০১; সহীহ মুসলিম, ২/২৪৮)

অন্য এক হাদীসে বলা হয়েছে, ‘‘বনী ইসরাঈলের নবীগণ তাঁদের কর্মকান্ডে নেতৃত্ব ও দিক-নির্দেশনা দান করতেন। যখন তাদের এক নবী দুনিয়া থেকে বিদায় নিতেন, তাঁর জায়গায় আর একজন নবী অধিষ্ঠিত হতেন। কিন্তু আমার পরে কোনো নবী আসবেন না। তবে আমার পরে খলীফা হবে এবং তারা সংখ্যায় অনেক হবে।’’-সহীহ মুসলিম, ইমারা, হাদীস : ১৮৪২; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৫৮৭

বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর কারক আল্লামা ইমাম ইবন্‌ কাসীর (রহঃ) বলেন, “অত্র আয়াতের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, তাঁর মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরে কোন নবী নাই। নবী যখন আসবেন না রাসুল আসার তো কোন প্রশ্নই উঠেনা। এ ব্যাপারে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অসংখ্য মুতাওয়াতির হাদীস বর্ণিত হয়েছে। (৩য় খন্ড, ৪৯৩ পৃষ্টা, মিসরিয় ছাপা)

নিম্নে কতিপয় হাদীস উল্লেখ করা হলঃ ১মঃ বাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ “আমার উম্মতর মধ্য থেকে ত্রিশজন মিথ্যাবাদী আসবে প্রত্যেকেই নিজেকে নবী বলে দাবী করবে। অথচ আমি হলাম শেষ নবী; আমার পরে কোন নবী নেই।” ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন। [তিরমিযী ৮/১৫৬ হাদীস নং ৩৭১০]

২য়ঃ প্রখ্যাত সাহাবী আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ “আমি এবং পূর্ববর্তী অন্যান্য নবীদের উদাহরণ হল, এক লোক একটি ঘর অত্যন্ত সুন্দর করে তৈরী করল। কিন্তু ঘরের এক কোনে একটা ইট ফাঁকা রেখে দিল। লোকজন চর্তুদিকে ঘুরে ঘরে তার সৌন্দর্য্য দেখে বিমোহিত হচ্ছে কিন্তু বলছে, এ ফাঁকা জায়গায় একটি ইট বসালে কতই না সুন্দর হত!” রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আমি হলাম সেই ইট এবং আমি হলাম সর্বশেষ নবী।” [বুখারী, হাদীস নং ৩২৭১ মুসলিম হাদীস নং ৪২৩৯]

৩য়ঃ প্রখ্যাত সাহাবী আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ “বনী ইসরাইলকে পরিচালনা করতেন তাদের নবীগণ। এক নবী মৃত্যু বরণ করলে আরেক নবী তার স্থানে এসে দায়িত্ব পালন করতেন। তবে আমার পরে কোন নবী আসবে না; আসবে খলীফাগণ।” [সহীহ বুখারী- ৩২৬৮]

৪র্থঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলী (রাঃ) কে লক্ষ্য করে বলেনঃ “মুসা (আঃ) এর নিকট হারুন (আঃ) যেমন তুমি আমার নিকট ঠিক তদ্রুপ। তবে আমার পরে কোন নবী নেই।” [বুখারী-৪০৬৪, মুসলিম হাদীস নং ৪৪১৮]

৫মঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “আমার পরে কেউ নবী হলে উমার ইবনুল খাত্তাব নবী হতেন।” [সুনান তিরমিযী হাদীস নং-৩৬১৯]

৬ষ্ঠঃ আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলে করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ “পূর্ববর্তী অন্যান্য নবীদের উপর ছয়টি বিষয়ে আমাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। আমাকে দেয়া হয়েছে অল্প শব্দে অনেক বেশী অর্থবোধক কথা বলার যোগ্যতা, আমি অনেক দূর থেকে শত্রুবাহিনীর মধ্যে ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে বিজয় প্রাপ্ত হই। গনিমত তথা পরাজিত শত্রুবাহিনীর ফেলে যাওয়া সম্পদ আমার জন্যে বৈধ করা হয়েছে। যমিনের মাটিকে পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম এবং সেজদা প্রদানের স্থান বানানো হয়েছে। সমগ্র সৃষ্টিকুলের জন্য আমাকে নবী বানানো হয়েছে এবং আমার মাধ্যমেই নবী আগমনের ধারাকে সমাপ্ত করা হয়েছে।” [মুসলিম হাদীস নং-৭১২]

এছাড়াও অসংখ্য সহীহ হাদীস দ্বারা দ্যার্থহীনভাবে প্রমাণিত হয় যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আখেরী-সর্বশেষ নবী । তাঁর পরে কোন নবী আগমণ করবে না।

পূর্ববর্তী সালাফে সালেহীন এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ একমত যে, যুগে যুগে মুসাইলামাতুল কাযযাব, তুলাইহা, আসওয়াদ আনাসীর মত অনেক ভন্ড ও মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব হয়েছে কিন্তু সবাইকে আল্লাহ ও তার রাসূলের অভিশম্পাতের অধিকারী হয়ে লাঞ্ছিত অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হয়েছে এবং তারই ধারাবহিকতায় মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানিও নিকৃষ্ট অবস্থায় পায়খানায় পড়ে মৃত্যবরণ করে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।

কুরআন ও হাদীস এবং ইজমায়ে উম্মাহর সর্বসম্মত আকীদা হলো মুহাম্মদ সা. খাতামুন নাবিয়্যিন বা সর্বশেষ নবী ও রাসূল। এটা মুসলিম উম্মাহর এমন আকীদা যাতে সন্দেহ করার কোন অবকাশ নেই। তাই ধর্মপ্রাণ মানুষকে এসব থেকে সতর্ক থাকতে হবে সব সময়। কোনো ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দেয়া যাবে না।

কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা না করলে ক্ষতি কী : কাদিয়ানীরা অমুসলিম রূপে ঘোষিত ও চিহ্নিত না হলে তাতে মুসলমানদের ধর্মীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে কি কি সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ বিষয়টি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, এমন একটি সম্প্রদায় যারা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে অমুসলিম, তারা যদি সরকারীভাবে অমুসলিম ঘোষিত হয়ে পৃথক একটি ধর্মাবলম্বী দল হিসাবে চিহ্নিত না হয় তাতে মুসলমানদের ধর্মীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে বহুবিধ সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং হতে থাকবে। যেমন :

১. তাদের রচিত ও প্রকাশিত বইপত্রকে মুসলমানদের লেখা বই-পুস্তকের মত মনে করে পাঠ করে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয় এবং ঈমান হারিয়ে বসে।

২. তাদের উপাসনালয়কে মসজিদ মনে করে সেখানে গিয়ে নামায পড়ে। এতে মুসলমানদের কাছে ঈমানের পরে সর্বোচ্চ যে ইবাদত নামায, তা নষ্ট হয়।

৩. কাদিয়ানী ধর্মমতের অনুসারী কোনো ব্যক্তি মুসলমানের ইমাম সেজে তাদের ঈমান-আমল নষ্ট করতে পারে।

৪. তারা মুসলমান পরিচয়ে নিজেদের মতবাদ-মতাদর্শ প্রচার করলে তাতে সাধারণ মুসলমান তাদেরকে মুসলমানেরই একটি দল মনে করে তাদের মতবাদ গ্রহণ করে নিজেদের সবচেয়ে বড় সম্পদ ঈমান হারিয়ে ফেলে।

৫. তারা মুসলমান নামে পরিচিত হওয়ার কারণে তাদের সাথে মুসলনামানের মত আচার-আচরণ ও চলাফেরা করে। অথচ তাদের সাথে মুসলমানের সম্পর্ক হওয়া উচিত এমনই, যেমন কোনো অমুসলিমের সাথে হয়ে থাকে।

৬. অনেক সাধারণ মুসলমান তাদেরকে মুসলমান মনে করে নিজেদের বিবাহের উপযুক্তা মেয়েদের তাদের সঙ্গে বিবাহ দিয়ে অমুসলিমদের হাতে নিজেদের কন্যা তুলে দেয় এবং মুসলিম পাত্রের জন্য কাদিয়ানী ধর্মাবলম্বী লোকের মেয়েকে মুসলমান না করে বধু হিসেবে বরণ করে। ফলে এরূপ দম্পতি আজীবন ব্যভিচারের গুনাহে লিপ্ত থাকে।

৭. কোনো সম্পদশালী মুসলমান কোনো কাদিয়ানী ধর্মাবলম্বী গরীবকে যাকাত দিলে তার ফরয যাকাত আদায় হবে না।

৮. যে কোনো কাফের তথা অমুসলিমের জন্য হারাম শরীফে ঢোকা নিষেধ। অথচ কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের লোকেরা মুসলিম পরিচয় দিয়ে হজ্ব ও চাকরি-বাকরির নামে সৌদি আরবে গিয়ে হারাম শরীফে প্রবেশ করে তার পবিত্রতা নষ্ট করার সুযোগ পায়।

সুতরাং কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে মুসলমান থেকে পৃথক একটি ধর্মের অনুসারী দল ঘোষণা করে ভিন্ন নামে চিহ্নিত না করা হলে এরূপ বহু সমস্যা সৃষ্টি হয়, হতে পারে এবং ভবিষ্যতে হতে থাকবে। এতে মুসলমান সমাজের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার কারণে তারা যদি উত্তেজিত হয়ে উঠে তবে এতে দেশের আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে এবং মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, যা কারও কাম্য নয়। কাজেই তাদেরকে অবিলম্বে পৃথক একটি ধর্মাবলম্বী দল ঘোষণা করে পৃথক নামে তাদেরকে একটি সংখ্যালঘু দল হিসাবে মর্যাদা দিলে এবং তাদের জন্য ইসলামী পরিভাষাসমূহ যেমন : নামায, রোযা, মসজিদ, হজ্ব ইত্যাদির ব্যবহার নিষিদ্ধ করলে তা দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পক্ষে সহায়ক হবে বলে আমরা মনে করি। এটাই সচেতন মুসলিম সমাজের প্রাণের দাবি।

তথ্যসূত্র : মাসিক আল কাউসার।

মন্তব্য করুন