
এম শামসুদদোহা তালুকদার
লেখক, অ্যাক্টিভিস্ট, বিশ্লেষক
(২০১৯ সালের বিশ্ব ইজতেমা কবে হবে কেউ জানে না! জানুয়ারিতেই হয় সাধারনত। এ বছর জানুয়ারির মাঝ মাঝখানে চলে আসছি আমরা। কিন্ত কোন খবরা-খবর পাচ্ছি না। তাই ২০১৮ সালের ইজতেমার একটু স্মৃতিচারণ করি)
২০১৮ সাল! এ বছরের বিশ্ব ইজতেমায় বিশ্ব তাবলীগের আমীর দাবীদার মৌলভী সাদ কালন্ধবী সাহেব এ দেশে এসেও টংগী গিয়ে বয়ান ও মুনাজাত করকে পারলেন না। কেন? তা আমরা সবাই জানি।
তিনি ছিলেন কি ছিলেন না! সেটা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই।এটা আসলে উপর লেবেলের ব্যাপার। এমনটাই মনে হয়েছে কাল সরেজমিরে পৌঁছে। ইজতেমায় তেমন কোন প্রতিক্রিয়ার সুযোগ নেই। তারা এসেছেন ঈমান ও আমলের বয়ান শুনতে। কে বয়ান করছেন সেটা মূখ্য নয়। কারণ বয়ান তো সব একই ধরনের।
কার সুর ভালো, কার গলা ভালো, কে কাঁন্দাইতে পারে, কে হাসাইতে পারে, এমন কিছু তো ইজতেমায় থাকে না। ধীর-লয়ে বাংলা অনুবাদ নির্ভর ওয়াজ শুনতে শুনতে আপনি ঘুমিয়েও পড়তে পারেন।
অবশ্য ক্ষুধা থাকলে খেতেও পারবেন, কেউ বাধা দিবেনা। একদিকে বয়ান চলছে, অন্যদিকে বড় একটা পাত্রে পাঁচ সাতজনে একত্রে বসে গরুর গোশত উইথ টমেটো এন্ড পটেটো রান্না সালুন দিয়ে ভাত খাচ্ছে।
জুমআর পর বয়ান শুরু হলো। রেওয়াজ অনুযায়ী ঘোষনা করা হয় না কে বয়ান করবেন! তবে আলাদা একজনে কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে কেন যে এরা শুরু করেনা! সেটা আমার বুঝে আসে না। তবে বক্তা হজরতে প্রচুর কুরআন ও হাদীসের আয়াত উদ্বৃত করে বয়ান করেন। আর বক্তব্যের বিষয়বস্তু বরাবরের ন্যায়ই ঈমান ও আমলের মাধ্যমে আখেরাতের কামিয়াবি।
জুমআর নামাযের পর কায়দা করে বসে ওয়াজ শুনবো সেটা আর হয়ে উঠেনি। কারণ, নামায পড়েছি তুরাগের কিনারে। নামায শেষে মুল মাঠে যেতে সময় লেগেছে। সবাই ফিরছে বাড়ীতে। তাঁদেরকে ঠেলে এক জায়গায় থিতু হবার আগেই বয়ান শেষ।
জুমার কারণে সবাই হাজির, আবার সরে পড়ায় ঘন্টা খানিকের মধ্যে ভাংগা হাটের মতো লাগছিল ময়দান। বক্তা উর্দূতে বয়ান করছিল আর দোভাষী বাংলায়। এছাড়া শীতের কারণেও ছন্দপতন হয়েছে। নিয়ম শৃংখলার কোন বালাই নাই। এরা ভেজা লুংগী শুকাতেই যেন টংগী এসেছে। ও গুলো না শুকানো পর্যন্ত নামানো যাবেনা। বয়ান শোনার শিষ্টাচারিতা বলতে কিচ্ছু নাই ।
ইজতেমা কর্তৃপক্ষ “ডিভাইড এন্ড রুল” সিস্টেমে ইজতেমা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দুটো ইজতেমা হবে বছরে। প্রথমটায় ১৬ জেলার জনগন, পরেরটায় ১৬ আবার পরের বছর প্রথমটায় অন্য ১৬, পরেরটায় বাকী ১৬ মোট ৬৪ জেলা দু’বছরে। এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে কেউ হাজির হবেন না। জেলাওয়ারি দর্শক শ্রোতা! আইডিয়াটা পছন্দ হইছে। কারণ, অত্যধিক মানুষের উপস্থিতি খুব বেশী ভোগান্তি সৃষ্টি করে। এর বাইরে জেলাওয়ারি ইজতেমাও শুরু হইছে।
ইজতেমা ঘিরে গুজবও চালু ছিল। কাকরাইলে নাকি ওয়াসিফরা পাল্টা ইজতেমার জন্য লোক ডাকছিল। ওয়াসিফের পোলা ওসামার একটা এমন একটা অডিও প্রকাশ পেয়েছে।
কিন্তু আল্লাহর শোকর! সমস্যা ঘটিয়ে সা’দ সাহেব ইজতেমা মাঠে যাননি তবে কাকরাইল মসজিদে তিনি দীর্ঘ বয়ান ও মুনাজাত করেছেন। আজ তিনি বাংলাদেশ বিমান যোগে দিল্লী ফিরে গেছেন সাথীদের নিয়ে।
তবে এজন্য আলহামদুলিল্লাহ বলার সময় হয় নাই। শংকা রয়ে গেছে। কয়েকদিন পরের ইজতেমায় তিনি নাকি বীরদর্পে ফিরে আসবেন এবং মুনাজাত করবেন। তাঁর আমীরগিরি যারা মানবে না তাঁরা চাইলে আলাদা ইজতেমা করতে পারবে। এমন তথ্য দিলো প্রথম আলো।
সুতরাং ইজতেমা বিষয়ক ব্যাপারটা আরো খাদের তলানীতে গেলো মনে হচ্ছে। যেখানে সরকার আছে, প্রথম আলো আছে সেখানে আপনাকে ভয় করতে হবে। ক্রিকেট টীম নিয়ে যাদের ব্যবসা, এমন কাজী ইরতেজারা থাকলে আপনাকে হতাশ হতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ার ওয়াসিফুল, ডঃ কাজী ইরতেজা, নায়ক অনন্ত জলিল আর ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এ নামগুলোর সাথে তাবলীগ জামাত ও ইখলাসটা যায় না! এটা কেমন যেন লাগে! ভাবতে একা একা লাগে!
ইজতেমায় গেছি। আমি বরের পক্ষে না কণের পক্ষেও না। তাহলে কোন পক্ষের ? আসুন ডায়রীর পাতা উল্টাই!
এক বাচাল টাইপের লোভী ব্যক্তির অভ্যাস ছিল বিনা দাওয়াতে বিয়ে বাড়ীর অনুষ্ঠানে গিয়ে খাবারে অংশ নেয়া। একদিন এমনি এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে খাবার টেবিলের অন্য একজন লোকের সাথে আলোচনা শুরু করে দিলো।
ভাই আপনি কোন পক্ষের?
মানে?
ও আচ্ছা বরপক্ষের বুঝি?
মানে ??
বুঝেছি আপনি কণে পক্ষের । বেশ ভালো, বেশ,,,।
আরে মিয়া! আপনি বর বা কণে পেলেন কই? এটা তো ‘নুনুকাটা’ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান। খতনা বুঝেন ! খতনা? সুন্নাতে রাসুল (সঃ)!
[পাবলিক ভয়েসের মতামত বিভাগে প্রকাশিত যে কোন লেখার দায় লেখকের। পাবলিক ভয়েস কর্তৃপক্ষ সেটার দায় নেয় না]