এটিএম হেমায়েত উদ্দিন; একজন ত্যাগী নেতার জন্য কান্না

প্রকাশিত: ৪:১১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০১৯

এম. শামসুদদোহা তালুকদার। কলামিস্ট ও বিশ্লেষক।

আজকাল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ মনে খুব অস্বস্তি নিয়ে দিন গুজরান করছেন। প্রিয় সহকর্মী, প্রিয় নেতা আজ শয্যাশায়ী। আমি এটিএম হেমায়েত উদ্দিন স্যারের কথা বলছি।

স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এ দেশে যে কয়জন পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক নেতা দ্যুতি ছড়িয়েছেন, তিনি তাঁদের একজন। বিশেষ করে, ইসলামী রাজনীতির ময়দানে তিনি অন্যতম সিপাহসালার।

আপনার অনেক সমর্থক থাকতে পারে কিন্তু আপনাকে সম্মান নাও করতে পারে! এটিএম হেমায়েত উদ্দিন স্যার এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তিনি ব্যক্তিগত জীবণে সৎ ও যোগ্য, সেটা রাজনৈতিক জীবনেও প্রতিফলন ঘটিয়ে যাচ্ছেন। তাই তাঁর প্রতি সবার সম্মাণটাও ঈর্ষনীয় পর্যায়ে। নিজ দলে জনপ্রিয়তায় শীর্ষদের কাতারে তিনি একজন।

তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল বা শীর্ষ নেতাদের একজন। পদপদবী মূখ্য নয়, তিনি এ সবে গুরুত্ব দেন না। তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও যোগ্যতার যথার্থ মূল্যায়ন করে বুকে টেনে এনে আগলে রেখেছিলেন মরহুম পীর সাহেব রঃ চরমোনাই। আমৃত্যু তিনি তাঁকে নিয়ে ইসলামী রাজনীতির প্রসারে দেশময় ছুটে বেড়িয়েছেন। সে আমল থেকে এখন পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন পদে যোগ্যতার সাথে দায়িত্ব করে আসছেন।

বর্তমান মুহতারাম আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম ও সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমও তাঁকে উপযুক্ত মর্যাদা দিচ্ছেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এ দলটির গোড়াপত্তনের সাথে যারা জড়িত, তিনি তাঁদের একজন। তাঁর সাহস তথা নির্ভিকতা আইএবি’র কর্মীদের অণুপ্রেরণা। তাঁর বক্তব্য শুনে অভ্যাগতদের রক্তে নাচন শুরু হয়। ঝিমিয়ে পড়া কর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠে তাঁর জ্বালাময়ী বক্তব্য শুনে। মূহুর্মূহ শ্লোগান উঠে,
“মুক্তির মূলমন্ত্র- ইসলামী শাসনতন্ত্র।”
“শুরু নেতা নয়, নীতিও চাই- পীর সাহেব চরমোনাই।”

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের তিনশো আসনের প্রার্থীদের সন্মুখে দেয়া তাঁর তরবিয়াতি ভাষণ আমার শোনার তৌফিক হয়েছে। তাঁর আলোচনা শুনলে মনে হয় একজন দক্ষ সেনাপতি, তাঁর বাহিনীকে নিয়ে সত্যি ই তিনি জিহাদে অবতীর্ণ হতে চলেছেন।

হ্যাঁ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিয়াসত অন্য সবার চেয়ে আলাদা। আর সেটা ধরে রাখতে যারা চব্বিশ ঘন্টা ফিকির করে যাচ্ছেন তিনি তাঁদের একজন।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একজন ইমাম, খতীব, তাহফিজুল কুরআন মাদরাসার শিক্ষক ও পরিচালক, একটি কলেজের নামকরা শিক্ষক ও আপাদমস্তক রাজনীতিক। প্রতিদিন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হেড কোয়ার্টারে না গেলে তাঁর যেন ঘুম আসবে না। তাই বিকালে ছুটে যান পার্টি অফিসে দিনশেষে করণীয় আঞ্জাম দিতে।

মুহতারাম আমীর ও নায়েবে আমীরের অবর্তমানে মহাসচিবকে পরামর্শ দেন তিনি। পরামর্শ দিয়েই ক্ষান্ত হন না, নেমে পড়েন কর্মযজ্ঞে। তাঁর দেখাদেখি জুনিয়ররাও তাতে শামিল হয়। মাঝরাত পর্যন্ত কাজ করে পল্টন থেকে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে গাবতলীগামী গাড়ীতে উঠে পড়েন ফার্মগেটের রাজাবাজারের অভিমুখে নিজ বাড়ীর পানে।

রাজপথে মিটিং মিছিলে সর্বাগ্রে থেকে তিনি দ্বীনের মশাল তুলে ধরছেন। তাঁর ভাষণ শুনতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে তরুন নেতা-কর্মীরা। প্রিয় এটিএম স্যারের ভাষণ শোনার মজাই আলাদা।

এমন মানুষখানার কন্ঠ আজ ধরে এসেছে। কান্না জড়িত কন্ঠে সবাইকে এ দ্বীনি কাফেলাকে এগিয়ে নিতে অনূরোধ করেন। অডিয়েন্স থেকে তখন হু হু করে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। তবুও তিনি থেমে থাকছেন না শরীরে দূরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারের বীজ থাকা সত্ত্বেও।

এই তো সেদিন, জাতীয় নির্বাচনের পর তিনি ত্যক্তবিরক্ত, ক্ষুব্ধ। নির্বাচনে ভোট ডাকাতি কোন বিবেকবান মানুষ মেনে নিতে পারেন না। জনগনের রায় প্রদানে যারা বাধা দিয়ে তা হাইজ্যাক করেছে, তার প্রতিবাদে আইএবি কর্তৃক আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি জামা টুপি পরে রওয়ানা দিচ্ছিলেন। অথচ তখন ছিলেন স্কয়ার হাসপাতালের বেডে। কর্মরত ডাক্তার নার্স বাঁধ সাধলেন, হুজুর! আপনাকে এ অবস্থায় আমরা ছাড়বো না কিছুতেই। আপনার শরীর ভালো না। আপনাকে শয্যায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। এক মূহুর্তের জন্যও বাইরে যাওয়ার নিয়ম নাই। শেষ পর্যন্ত আসতে পারেননি তিনি।

আরো ভালো চিকিৎসা ও ডাক্তারের পরামর্শের জন্য গত সপ্তাহে কোলকাতা গেলেন। একাধিক ডাক্তারের পরামর্শও নিলেন। টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাক্ষাৎকারের তারিখ ১৪ জানুয়ারি। বসে না থেকে তিনি চলে এলেন ঢাকায়, উদ্দেশ্য জুমার নামায পড়ানো। আবার ফিরবেন ওখানে। আহা! জীবন থেকে একটা জুমা পড়ানো থেকে বঞ্চিত করলেন না প্রিয় রাজাবাজার মসজিদের মুসুল্লীদেরকে !

আমরা অধ্যাপক হাফেজ মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন স্যারের আরোগ্য লাভের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করছি। তাঁর নেতৃত্ব ও কন্ঠ বড়ই দরকার এ উম্মাহর জন্য!

মন্তব্য করুন