

সে অনেকদিন আগের কথা.. মুনাযেরে জামান, আহলে হকের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর মুহতারাম নুরুল ইসলাম ওলিপুরী সাহেবকে নিয়ে একটি মজার গল্প আছে আমার জীবনে। মনে হলো কিছু লেখা দরকার এ বিষয়ে। খুবই আবদার থাকবে, লেখাটা কোন দল-মতের দিকে নেবেন না!
গল্পটা বরিশাল-ঢাকা রুটের বৃহৎ এক লঞ্চের কেবিনের! আমার খুব কাছের এক বন্ধু, ভাইকে নিয়ে! ভাই অনেকটাই ইসলামী মুক্তমনা টাইপের। মাযহাব মানে তবে ভাগ ভাগ করে। ইমাম যদি কেরাত জোরে পড়ে তাহলে মুক্তাদির কেরাত পড়ার ক্ষেত্রে আবু হানিফা রহ. কে অনুসরণ করে আবার ইমাম যে নামাজে কেরাত আস্তে পড়ে সেখানে মুক্তাদির কেরাত পড়ার ক্ষেত্রে শাফেয়ী রহ. এর মাযহাব মানে। তাছাড়া তিনি শিবির সমর্থকও। অবশ্য একান্ত ব্যাক্তিগত জায়গা থেকে এমন কিছু মুক্তমনা অবস্থান আমারও পছন্দ। কিন্তু আমি যেহেতু শরিয়তের ক্ষেত্রে নিজেকে কোন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পছন্দ করি তাই এসব ব্যক্তিগত পছন্দ জীবনে অ্যাপ্লাই করি না।
তো, ইসলামী মুক্তমনা সেই ভাইটিসহ ঢাকা যাচ্ছিলাম। দেশ, ইসলাম, আলেম-ওলামা নিয়ে কথাবার্তার মধ্যেই কিভাবে যেন মুহতারাম ওলিপুরী আমাদের আলোচনার মধ্যে চলে এলেন। এক পর্যায়ে ওই ভাইটি ওলিপুরীকে যাচ্ছে-তাইভাবে বিনা সাবান দিয়ে ধৌত করা শুরু করলেন। কারণ তিনি জাকির নায়েক এবং জামায়াত-শিবিরকে অনেকটা আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে কথা বলেন। ওই ভাইটির মেজাজ সবচেয়ে বেশি খারাপ ছিলো কারণ তিনি বিনা দলিলে সবাইকে ইহুদী খ্রিস্টানদের দালাল ঘোষণা করে থাকেন। স্বাভাবিকভাবেই আমার মুহতারাম ওলিপুরী ব্যাপারে তেমন কোন ধারণা ছিলো না তখন! এখনও যে খুব বেশি আছে তাও না। কিন্তু আমি ওলিপুরী সাহেবকে একজন নিরেট এবং ঐক্যপ্রয়াসী মানুষ ভেবে পছন্দ করতাম। সেজন্য তেমন কিছু না জানা সত্বেও সেদিন লঞ্চের কেবিনে তর্ক-বিতর্কটা খুবই বাজে পর্যায়ে চলে গেছিলো। এমনকি সেই তর্কের সূত্র ধরে প্রায় এক বছর আমাদের সামগ্রিক যোগাযোগ বন্ধ ছিলো। বিষয় হলো ওই ছেলে ওলিপুরী সাহেবকে খুব বাজে কিছু ট্যাগ দিচ্ছিলো। যে কারণে আমিও ‘যেতে যেতে পথে একটু হাই’ হয়ে গেছিলাম। ফলাফল যা হওয়ার হলো।
পরিস্থিতি কতটা বাজে হইছিলো সেটা একটা উদাহরণ দিলে বুঝবেন! ওই ছেলে সকালে লঞ্চ ঢাকায় ভিড়ার পর কেবিন থেকে আমাকে না বলেই বের হয়ে চলে গেছে। ভাড়াও দিয়া গেছে। আমি ঘুমায়া ছিলাম। উইঠা দেখি সে গ্যাছেগা! এরপর তার সাথে আমার সম্পর্ক ঠিকঠাক হইছিলো। একসাথে বার্ডসআই রূফটপে নাস্তাও করছিলাম।
তো, মূল কথা হইলো গিয়া ওই ছেলে অর্থাৎ আমার সেই ভাই এবং বন্ধু গতকাল মুহতারাম ওলিপুরীর একটি ওয়াজ শেয়ার দিয়ে ওনাকে প্রচন্ড প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। যদিও ভাইটি ওলিপুরী সাহেবের সেই বয়ানটাও পুরোটা শুনেনি। কেবল শুরু অংশ শুনেছে জিকির নিয়ে তাতেই সে অনেকগুলো মেশিনে মোডিফাই করে ভেবে নিয়েছে এই বয়ান চরমোনাইর বিপক্ষে গেছে। অথচ সেখানে ওলিপুরী সাহেব স্পষ্টই বলেছেন, উচ্চ আওয়াজে জিকির সম্পূর্ন জায়েজ! পীর-মুরিদি নিয়েও তিনি স্পষ্ট অবস্থান প্রকাশ করেছেন এবং চরমোনাই নিয়ে তেমন কোন কথা নেই। কিন্তু তারপরও সে ওলিপুরী সাহেবকে এখন সমর্থন করছে কারণ সে ভাবছে ওলিপুরী সাহেবকে দিয়ে এখন চরমোনাইর জিকিরকে শায়েস্তা করা যাবে অথচ এই জিকির কেবল চরমোনাইওয়ালাদের না! এমন শায়েস্তা শায়েস্তা খেলাটাই এখন চলছে দেদারসে।
এখন বিষয় হলো, মুহতারাম ওলিপুরী সাহেব যে বক্তব্য বয়ান দিচ্ছেন তা অবশ্যই তিনি বুঝে শুনেই দিচ্ছেন। এগুলো উনার চিন্তা-ভাবনা করা অবস্থান। এমনকি আমার ব্যাক্তিগত অভিমত হলো, এই অবস্থান তৈরির জন্যই ওনার সন্তান মাওলানা কামরুল ইসলাম আগে পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন বা সেই পরিবেশের কারণে মুহতারাম ওলিপুরী সাহেবও কিছুটা ব্যাথিত হয়েছেন এবং ব্যাক্তিগত সেই নাখোশি বয়ানে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু সমস্যা হলো, মুহতারাম ওলিপুরী সাহেবকে অপছন্দ করা মানুষের তালিকা অনেক দীর্ঘ। জামায়াত-শিবির, আহলে হাদিস, এমনকি মধ্যপন্থা অবলম্বন করা অসংখ্য কওমী তরুণও উনার আগ্রাসী বয়ান-বক্তৃতা পছন্দ করেন না। তাছাড়া গতকাল এক লেখা থেকে জেনেছি তিনি সিলেটেও অনেক মানুষের কাছে অপছন্দের। এর আগে তিনি আল্লামা সাঈদী হাফিজাহুল্লাহু তায়ালা ইস্যূতে আল্লামা আজিজুল হক রহ. কে কার্যত অপমান করেছিলেন। সেই লেখা থেকে আরও বড় তালিকা পাওয়া গেছে এই অপছন্দতার তালিকার। যারা বিভিন্ন কারণে মুহতারাম ওলিপুরী সাহেবকে অপছন্দ করেন…
(প্রতিভাবান তরুণ লেখক সালেহ রশীদের সেই লেখাটি শেষে সংযুক্ত করে দিচ্ছি। যদিও ফেসবুকে তিনি লেখাটি রাখেননি এবং না রাখার কারণও বর্ণনা করেছেন তারপরও লেখাটি আমরা সংগ্রহ করে রেখেছিলাম। আশা করি তিনি কষ্ট পাবেন না। আমার এই লেখাটি পূর্ণাঙ্গ করার জন্য সেই লেখাটি জরুরী অনেক। তাই সংযুক্ত করে দিলাম শেষে।)
…এসবের কারণে মুহতারাম ওলিপুরীর প্রত্যেকটা কথার চতুর্মূখী ব্যখ্যা হয়ে থাকে। যার যার ইচ্ছামত ব্যাখ্যা করেন। তাছাড়া ওলিপুরী সাহেবের একান্ত কাছের যারা তাদের থেকেই জেনেছি, তিনি বর্তমানে তরতাজা ভাবে অপছন্দ করেন মাওলানা হাফিজুর রহমান সিদ্দিক সাহেবকে। যদিও হাফিজুর রহমান সাহেব লাখ টাকা নিয়ে মাহফিল করা অবস্থাতেই তার মাদরাসার মাহফিলের প্রধান অতিথি ছিলেন ওলিপুরী সাহেব। দুজনের মিষ্টি টাইপের হাস্যজ্জল ছবিও আছে অনেক। তারপরও এখন এসে ওলিপুরী সাহেব হাফিজ সাহেবকে অপছন্দ করার কী কারণ আছে তা জানাটা কঠিনই বটে। আবার অন্যদিকে বিভিন্ন কারণে হাফিজুর রহমান সাহেবের সাথে মাওলানা মামুনুল হক সাহেব এবং মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবীরও কিছু দুরত্ব আছে। কেন কিসের কারণে দুরত্ব সে ব্যাখ্যা অনেক লম্বা। তবে এক কথায় বলতে গেলে এখানে হাফিজুর রহমান সাহেবের চরম অহংকার এবং মানুষকে মানুষ মনে না করাটা একটা বড় কারণ। তাছাড়া হাফিজুর রহমানের বিভিন্ন ইস্যূতে ঔদ্ধত আচরণ কারও অজানা নয়। যেসব কারণে বিগত প্রায় দেড়-দুই বছর ধরে মাওলানা হাফিজু্র রহমান সাহেবের সাথে উল্লেখিত আলেমদের মাহফিল, বয়ান করতে দেখা যায় না।
তবে এগুলো কোন দুরত্বই আকিদাগত, মাসলাকগত, মত-পথ বা কোনকিছুর দুরত্ব নয় বরং এটা কেবলই হিউম্যান বিইং ডিসটেন্স বা সোজা ভাষায় বললে মানসিক দুরত্ব। যে কারণে এ বছর অনেক জায়গা থেকে হাফিজুর রহমান সাহেবের মাহফিল ক্যান্সেল করানো হয়েছে বিভিন্ন উপায়ে। এই বিষয়টাকে আবার সুযোগ সন্ধানী আলী হাসান ওসামারা একটি গোষ্ঠিগত দ্বন্ধে রুপ দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে একটা বিপ্লব আহবানও করেছেন ঈদ-ই-মিলাদুন্নবীর মত বিদয়াত পালন করা উসামা সাহেবরা। এভাবেই হুট করে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায়। তার মধ্যে ওলিপুরী সাহেবের ‘গলাকাটা’ শিরোনামের একটি বক্তব্য ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি বড় আলোচনায় রুপ নিয়েছে। এখন বলতে গেলে এই বিষয় নিয়ে ভেতরে ভেতরে একটা বহুত বড় অস্থিরতা চলতেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
অপরদিকে ওলিপুরী সাহেবের বর্তমান অবস্থান নিয়ে সবচেয়ে সংযত আছে চরমোনাইওয়ালারাই। তাদেরকে চারদিক থেকে সমানভাবে উসকানী দেওয়া হচ্ছে বলেই মনে হলো। যদিও এবার সোশ্যাল মিডিয়ার পরিস্থিতি তারা বেশ কৌশলের সাথেই মোকাবেলা করতে পেরেছে তবে কতক্ষণ পারবে তা দেখার বিষয় আছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহযোগী সংগঠন ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল মুহা. নেসার উদ্দীন এবং ইশা ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ ফজলুল করীম মারুফ এসব বিষয়ে ফেসবুকে কোন কথা বলতে নিষেধ করে জোর নির্দেশনা দেওয়ার পরও এই সংগঠনের পরিচয় দেওয়া অনেককে দেখা যাচ্ছে ওলিপুরী সাহেবকে নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যপূর্ণ কথা বলে যাচ্ছে। আমরা এমন কয়েকজনকে চিহ্নিতও করেছি। তারা চাইলে প্রমান সহ সংগঠনে আমরা তাদের নাম, ফেসবুক আইডি সরবরাহ করতে পারি। কিন্তু কার্যত এতে কোন লাভ নেই তা সবাই-ই জানে। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে (!) এদেশের আলেমদের মধ্যে এই অনৈক্য আর দুরত্ব নতুন কিছু নয়। কিন্তু সেই অনৈক্য আর দুরত্বের মাধ্যম এবার হলেন নুরুল ইসলাম ওলিপুরী সাহেব এটা ভাবতেই গা শিউরে উঠতেছে।
আমার মত যারা এই মানুষটিকে সকল দল-মতের উর্ধ্বে উঠে ভালোবাসতেন বা বিভিন্ন সময় উনাকে ডিফেন্ড করে মানুষের সাথে দুরত্ব পর্যন্ত তৈরি করে ফেলেছে তারা বিষয়টি নিয়ে লজ্জা পাচ্ছে। কথা বলতেও একধরণের আনইজি ফিল করতেছে। টাকার ঝণঝণানি আর প্রচুর ফেম পাওয়া এই ওয়াজের ময়দান ইস্যূতে বাংলাদেশের উঠতি প্রজন্মের ওলামায়ে কেরাম যারা ভবিষ্যত আকাবির হবেন তাদের মধ্যে এমন প্রকাশ্য দুরত্ব চলে আসবে ভাবেতেই পারি না। বিশেষ করে ওলিপুরী সাহেবের মত মানুষ হাফিজুর রহমান সিদ্দিকীর ইলম মাপতে গিয়ে মামুনুল হকের ঠ্যাং পর্যন্ত নামবেন এটা কল্পনাই করতে পারি না আমরা।
পরিশেষে, ভবিষ্যত বাংলাদেশের ওলামায়ে কেরামদের ঐক্যের অবস্থা খুব খারাপ দিকে যাচ্ছে। যা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য বেশ কঠিন পরিস্থিতি নিয়ে আসবে বলেই মনে হচ্ছে। তাই সবাই আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করা উচিত যাতে আলেমদের ঐক্য না হোক অন্তত কোন দুরত্ব যেন আর তৈরি না হয়।
মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী সাহেবকে নিয়ে সালেহ রশীদের সেই লেখাটি পড়ুন।
ওলিপুরী যেহেতু বিতর্কে চলে এসেছেন, তাই কিছু বেদনার কথা বলি।
এক.
মাওলানা মামুনুল হক সাহেবের প্রচণ্ড তারিফ করেছেন ওলিপুরী। হাফিজুর রহমান সিদ্দিকীকে গলাকাটা লকব দিয়ে বললেন, এরকম গলাকাটারা উনার পায়ের ধুলার সমান নয়।
কী মিঠে লাগছে, তাই না? কিন্তু এখানে কিছু একটা আছে। না থেকে উপায় নেই। কারণ- মামুনুল হক সাহেবের পিতা আল্লামা আজিজুল হক রহ. ছিলেন আল্লামা ওলিপুরীর বোখারীর উস্তাদ। কিন্তু বাংলাদেশে আল্লামা ওলিপুরীই একমাত্র ব্যক্তি, যে আজিজুল হক সাহেবের সনদকে প্রত্যাখান করেছেন। আজিজুল হক সাহেবের পক্ষ থেকে ৫০ সালা দস্তার প্রদান অনুষ্ঠানে মাওলানা সাইদী সাহেব কেন দাওয়াত পেলেন, সে জন্য প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে আল্লামা ওলিপুরী বলেছেন, এটা আজিজুল হক সাহেবের ক্ষমাহীন অপরাধ। আঙ্গুরার ‘ঐতিহাসিক ভাষণে’ বলেছেন, যে আমি এই দস্তার প্রত্যাখান করি। আমি দস্তার নেবো না।’ তার উপস্থিতিতে শায়খুল হাদীসকে ‘সাইকেল হাদীস’ বলা হয়েছে।
যিনি বোখারীর উস্তাদের সনদ ও দস্তার প্রত্যাখান করেন, উস্তাদের শানে প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে বেআদবী করেন, তিনি আবার সেই উস্তাদের ছেলেকে আচমকা আরেক গোষ্ঠীর প্রবল প্রতিপক্ষ বানিয়ে দিলেন। অত্যন্ত সম্ভাবনাময় আলেম মামুনুল হক সাহেবকে বড় এক বিতর্কের কেন্দ্রে নিয়ে এলেন। যার ফল মামুনুল হক সাহেবের জন্য ক্ষতিকর হতে বাধ্য। কারণ তাকে সবার আশা-প্রত্যাশার ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখা হতো। এখন বিতর্কিত হয়ে থাকবেন। আল্লামা ওলিপুরী আসলে শিকার করলেন হাফিজুর রহমান সিদ্দিকীদেরকে। বলি হলেন মামুনুল হক সাহেব।
দুই.
তিনি দেশব্যাপী ওয়াজের মাঠ পাওয়ার পেছনে অনেক বড় ভূমিকা ছিলো চরমুনাইপন্থীদের। তিনি তাদেরকে আহলে হকদের প্রতিনিধি বলেছেন বার বার। তারা তাকে দেশের সবচেয়ে বড় হক্কানী আলেম বলে পরিচয় দিতেন। সেদিনও নায়েবে আমির সাহেব এমনই কথা বলেছেন। চরমুনাইপন্থীদের সাথে ঘণিষ্ঠতা বাড়ানোর জন্য আল্লামা ওলিপুরীর মাধ্যম ছিলেন মুফতি মিজান সাব। মিজান সাব আল্লামা ওলিপুরীকে অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন। বিশেষ করে ইলমী সহযোগিতা করেছেন।আল্লামা ওলিপুরীর ইলমি অবস্থা অনেকেরই জানা। তাকে এ ব্যাপারে সহায়তা করতেন সিলেটে উস্তাদুল মুহতারাম আবুল কালাম যাকারিয়া রহ.ঢাকায় মুফতি মিযানুর রহমান প্রমূখ। কিন্তু মিজান সাহেবের সাথে আল্লামা ওলিপুরীর একটি দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় কিছু দিন আগে।আল্লামা ওলিপুরী মিজান সাহেবকে তাচ্ছিল্য করে ‘আমার ওয়াজের কন্টেকদার’ পর্যন্ত বলেন। চরমুনাইদের থেকে যা পাওয়ার, তিনি পেয়েছেন আগেই। নিজের ছেলেকে দিয়ে কঠিন ও উদ্ধত কথাবার্তা বলিয়েছেন। এখন নিজেই মাঠে। আল্লামা ওলিপুরী এমনই। যে পাত্রে খান, সেখানেই ……
তিন.
আল্লামা ওলিপুরীকে একসময় শেল্টার দিতেন বসুন্ধরার মুফতি আবদুর রহমান রহ.। তিনি অনেক অনেক মাহফিল করাতেন সারা দেশে। সে সব মাহফিলে আল্লামা ওলিপুরীকে অতিথি বানাতেন। আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। কিন্তু বিনিময়ে্ আল্লামা ওলিপুরী তাকে কাদিয়েছেন। মিজান সাহেবের সাথে মিলে তার মাদরাসা ভাঙ্গার পরিস্থিতিতে নানাভাবে ইন্ধন যোগিয়েছেন। ময়মনসিংহ এলাকায় শেল্টার দিতেন মুফতি নুরুল্লাহ রহ.। তাকেও শেষ জীবনে কাঁদিয়েছেন। হবিগঞ্জে শেল্টার দিতেন মাওলানা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী সাহেব। তিনি তার উস্তাদের উস্তাদ। তাকে আল্লামা ওলিপুরী মারাত্মকভাবে অপমানিত ও লাঞ্চিত করছেন। কাঁদাচ্ছেন। ক’দিন আগে তিনি মুমূর্ষ থাকাবস্থায় ছবি তোলার লোক সাথে নিয়ে তাকে দেখতে গিয়ে ছবি তোলে ফেসবুকে ছবি ছেড়ে দেয়া হয় আল্লামা ওলিপুরীর আদেশে। অথচ ছবি তোলার বিরুদ্ধে তার বহু বক্তব্য রয়েছে। অপরদিকে হবিগঞ্জীর সাথে তার মারাত্মক সমস্যা চলমান। হবিগগঞ্জীর কড়া নিষেধ ছিলো, কেউ যেন তার মুমূর্ষ অবস্থার ছবি না তোলে। আল্লামা ওলিপুরী সেটা করলেন রাজনৈতিক দাও হিসেবে। সিলেটে তাকে প্রথম দিকে সবচেয়ে বেশি শেল্টার দিয়েছেন ওলীয়ে কামিল হযরত নূরুদ্দীন গহরপুরী রহ.। কিন্তু তিনি গহরপুরী হুজুরকে এমন কষ্ট দিলেন, হুজুরের ওসিয়ত ছিলো, এই মাওলানা যেন আমার মাদরাসায় আর আসতে না পারে। এরপর আশ্রয় দিয়েছেন মাওলানা যিয়াউদ্দীন সাহেব আঙ্গুরা। তাকেও কাদিয়েছেন আল্লামা ওলিপুরী। সেখানে এখন আর তার জায়গা নেই। এভাবে তালিকা দিলে অনেক লম্বা হয়ে যাবে।
চার.
বিভিন্ন মানুষকে মারাত্মক লকব দেয়ার উস্তাদ তিনি। যেমন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদেরকে তিনি বিচ্চু কাদের উপাধি দেন। খেলাফত মজলিসকে শিয়াবাদ-মওদুদীবাদের সহায়ক সংগঠন বলে ঘোষণা দেন। খেলাফতের নেতা-কর্মীরা যখন তাঁকে অবাঞ্চিত করে ফেলেছিলো, তখন জমিয়তের পক্ষে তিনি বলেন, জমিয়তই একমাত্র আহলে হক জামাত। গরম গরম বক্তব্য দিয়ে জমিয়তের সমর্থন নিয়ে নিজের বাজার ধরে রাখেন। তখন জমিয়তই তাকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের তরজুমান বানায়। পরে যখন জমিয়তে সহযোগিতার প্রসঙ্গ আসলো, তিনি বললেন, মানুষ জানতে চায় আমি কোন দল করি। আমি জবাবে বলি, আমি কোন্দল করি না। তিনি জমিয়তের কোল ছেড়ে চরমুনাইয়ের কোলে চলে গেলেন। তারপরের কাহিনী এখন দেখতেই পাচ্ছেন। ছেলে কামরুল কী করলেন, আর এখন তিনি কীভাবে মাঠে নেমেছেন!!
পাঁচ.
তিনি অনেক উদার। জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে তিনি লেগে গেলেন। অথচ তিনি নিজেই বলেছেন আমি জাকির নায়েকের কোনো বই পড়ি না, লেকচারও শুনি না। তাহলে কীসের ভিত্তিতে এতো বয়ান দিতেন। জাকির নায়েকের বিরিুদ্ধে তার বয়ানের নব্বই ভাগই ছিলো ইনিয়ে-বিনিয়ে, মিথ্যা, ভুল ও গলাবাজী। কিছু দিন আগে এক বইয়ের ভূমিকায় তিনি লেখলেন, আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেব পথভ্রষ্ট। তার বই পড়া জায়েজ নয়!! বেদাতীদের বিরুদ্ধে সারা জীবন ধরে তিনি ওয়াজ করছেন। মারাত্মক ভাষায় তাদেরকে গালাগালি করে তিনি বরং বেদাতীদেরকে আরো জেদ্দি ও কট্টর বেদাতীতে পরিণত করেছেন। তার বয়ানের পরে বিভিন্ন এলাকায় বেদআতীরা আরো মারমুখি হয়েছে ছাড়া কোনো ফায়দা মিলেনি। আর জামাতীদের বিরুদ্ধে? বিভিন্ন মুসলিম গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কাফেরের ফতুয়া দিয়েই তো ওলিপুরী জীবন পার করে দিলেন। তার সারা জীবনের কাজের নিট ফল হলো, মুসলিমদের এক জামাতের বিরুদ্ধে আরেক জামাতকে হিংস্র করে তোলা।
ছয়।
ওয়ায়েজদের মধ্যে যারা জনপ্রিয়তায় তাকে টক্কর দেবে, তাদের খবর আছে। যেমন হাবিবুল্লাহ মিসবাহ রহ. এর সাথে তার দ্বন্দ্ব লেগে গিয়েছিলো, হবিগঞ্জের মুহাদ্দিস সাবের সাথে তার দ্বন্দ্ব মারাত্মক পর্যায়ে ইত্যাদি। এটা প্রায়ই হয় পোস্টারে বড় করে নাম দেয়া, বড় লকব দেয়া, মাহফিলে মেইন সময়ে মঞ্চে নেয়া ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে। যুবায়ের আহমদ আনসারী সাহেবের সাথে তার দ্বন্দ্বটা খুবই ইন্টারেস্টিং। জামেয়া ইউনুসিয়ার মাহফিলে এশার পরে ভরপুর মাহফিলে যুবায়ের আহমদ আনসারী সাহেবকে ওয়াজে দেয়া হয়। তখন ওলিপুরী ছিলেন ওয়েটিংয়ে। তাকে রেখে এমন সময়ে আনসারীকে দেয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হন। মুফতি নুরুল্লাহ সাহেবের কাছে প্রায় বিশ পাতার একটি চিঠি লেখেন। পুরো চিঠিই আনসারীর বিরুদ্ধে। প্রায় দশ-বারোটি অধ্যায় ছিলো চিঠিতে। আনসারীর ইলমী অবস্থা, আনসারীর আমলী অবস্থা, আনসারীর চৌদ্ধগোষ্ঠীর অবস্থা, আনসারীর শ্বশুরালয়ের অবস্থা ইত্যাদি। তিনি দাবি করেন আনসারী গোমরাহ ও জাহিল! মুফতি নূরুল্লাহ সাহেব চিঠিটি আনসারী সাহেবকে দেখান। চিঠিটি আনসারী সাহেব নিয়ে নেন। এখনো উনার কাছে এবং আরো অনেকের কাছে চিঠিটি আছে। (চিঠিটি পাবলিক ভয়েসের কাছেও সংরক্ষিত আছে)
[পাবলিক ভয়েসের মতামত বিভাগে প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখকের একান্ত ব্যক্তিগত, পাবলিক ভয়েস সম্পাদনা পরিষদ এই লেখার কোন বিতর্কের দায়ভার নেয় না। আপনিও এখানে যে কোন বিশ্লেষণধর্মী লেখা পাঠাতে পারেন]