পাখিদের কিচিরমিচিরে ভাঙে রাবি শিক্ষার্থীদের ঘুম

প্রকাশিত: ৫:১০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৫, ২০১৯

মুজাহিদ হোসেন, রাবি: পাখিদের কিচিরমিচির ডাকে প্রতিদিনই ঘুম ভাঙে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে বড় বড় গাছ, ছোট-বড় বাগান, ফল ফলাদির গাছ সহ অসংখ্য পুকুর যেন পাখিদের জন্য উপযোগী আবাসন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাখিদের কলতানে মুখোরিত শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন সকালে পাখির কণ্ঠে সু-মধুর গান শুনে ঘুম থেকে উঠা এবং সন্ধ্যায় রুমে ফিরে পাখিদের কিচির-মিচিরে যেন তারা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে এসে ক্যাম্পাসটিকে ‘পাখি কলোনি’ আখ্যা দিয়ে এভাবেই বলছিলেন।

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, মেয়েদের আবাসিক হল ‘পশ্চিম পাড়া’, ছেলেদের আবাসিক হল ‘পূর্ব পাড়া’ সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যরিস রোড সংলগ্ন আশেপাশের ফাঁকা স্থানে যে গাছপালা ও ঝোপঝাঁড় বিস্তৃত জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে পাখিদের সংসার। এদের মধ্যে আছে পানকৌড়ি, বড় পানকৌড়ি, শালিক, বুলবুল, কালো বুলবুল, মাছরাঙ্গা, ডাহুক, কাঠ-ঠোকরা, শালিক, বামুন শালিক, গোবরে শালিক, পাতি কাক, টিয়াসহ অনেক প্রজাতির পাখি। পাখিগুলো যেন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিবেশীর মতো হয়ে গেছে।

এসব পাখির মধ্যে বেশির ভাগই বক। তবে বছরের মার্চ থেকে অক্টোবরে কলোনিতে আসে এবং প্রজনন সম্পন্ন করে পাখিরা। প্রজাতির দিক দিয়ে এ সব বকের মধ্যে রয়েছে বাজকা, নিশিবক, গো-বকসহ অনেক প্রজাতির বকের বাস এখানে। রাবি ক্যাম্পাস ঘিরে পাখিদের বিচরণ অনেক আগে থেকেই। তবে ২০০৯ সালের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া ও তাপসী রাবেয়া হলের মধ্যবর্তী এলাকাকে ‘পাখি কলোনি’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

এখানে রয়েছে সুউচ্চ অর্ধশতাধিক গাছ। এসব গাছে গাছে পাখিরা গড়ে তুলেছে তাদের আবাসস্থল। এখানে অন্তত ৫০০-এর বেশি পাখির বাসা নিয়ে গড়ে উঠেছে এই ‘পাখি কলোনি’। এখানকার পাখিরা এখন আর অতিথির তালিকায় পড়েনা। নিজেরাই গড়ে তুলেছে স্থায়ী আবাসস্থল। এখানেই নিজ বাসায় ডিম দিয়ে ফুটছে বাচ্চা। বড় হচ্ছে এখানেই নিজের পরিবেশে। আবাসিক হল দুইটির সামনে গেলেই দেখা যাবে পাখিদের ব্যস্ততা, কলতান, কিচির-মিচির শব্দ আর এ ডাল থেকে ও ডালে নাচানাচি। গাছের ডালে ডালে খড়-কুঠো দিয়ে নিজেদের বাসা বাঁধতে যেন সার্বক্ষণিক ব্যস্ত পাখিরা।

জানতে চাইলে পাখি বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আমিনুজ্জামান মো. সালেহ্ রেজা বলেন, ‘রাবি ক্যাম্পাস পাখিদের জন্য উপযুক্ত একটি আবাসন। এখানে পাখিদের কেউ বিরক্ত করে না। পাখিরা সময় হলেই চলে আসে ক্যাম্পাসে। বিশেষ করে তারা পাখি কলোনিতে বসবাস করতে খুবই স্বাচ্ছন্দবোধ করে। এছাড়াও এখানে তাদের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার ও প্রজনন ব্যবস্থা। কিছু পাখি গাছে প্রজনন করে কিছু পানিতে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, পাখিদের থাকার জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম একটি স্থান। আমাদের এখানে পর্যাপ্ত খাবার ও প্রজনন ব্যবস্থা থাকার কারণে বছরের বিভিন্ন সময় পাখিরা এখানে আসে। আগের থেকে যেন আরও বেশি পাখি আমাদের ক্যাম্পাসে আসে তাই আমরা দুই বছরে তিন হাজার বৃক্ষ রোপন করেছি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বদা সচেতন রয়েছে।

আই.এ/

মন্তব্য করুন