নোয়াখালীর গণধর্ষণ যেন নির্বাচনের প্রতিকী চিত্র: মামুনুল হক

প্রকাশিত: ৬:২০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৭, ২০১৯

ডেস্ক রিপোর্ট: সুবর্ণচরে ধর্ষিতা সেই নারীকে দেখে এসে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের সভাপতি মাও. মামুনুল হক ফেসবুকে লিখেছেন,
“পারুল বেগমের উপর পরিচালিত নৃশংস এই বর্বরতাকেই মনে হয়েছিল নির্বাচনী সার্বিক পরিস্থিতির একটি প্রতীকী চিত্র” তিনি তার ফেসবুক পোস্টে নোয়াখালিতে সংঘঠিত এই নৃশংস ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

মাও. মামুনুল হকের ফেসবুক পোস্ট তুলে ধরা হল,

একটি বোঝা নামল মাথা থেকে ৷ সংবাদমাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে চার সন্তানের জননী পারুল বেগমের উপর পরিচালিত নৃশংস হামলা ও স্বামী-সন্তানদের সম্মুখে গণধর্ষণের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই মনের মধ্যে নিদারুণ দুঃখ ক্ষোভ ও যন্ত্রণার সাইক্লোন বইছিল ৷ এমনিতেই চারদিক থেকে নির্বাচনী পরিস্থিতির যে সংবাদগুলো কানে আসছিল, সব দিকে যা কিছু দেখছিলাম তাতে দেশের সার্বিক অবস্থা নিয়ে মনটা ছিল ভারাক্রান্ত ৷ সেই পরিস্থিতিতে পারুল বেগমের উপর পরিচালিত নৃশংস এই বর্বরতাকেই মনে হয়েছিল নির্বাচনী সার্বিক পরিস্থিতির একটি প্রতীকী চিত্র ৷ তাই প্রকৃত অর্থে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে শুধু পারুল বেগমই ধর্ষিতা হন নি, তিনি একাই নির্যাতনের শিকার হননি, হয়েছে মূলত আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি সোনার বাংলাদেশ আর বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষ ৷ নিজেদের স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করার অধিকার হারা ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের নিপীড়িত মানুষেরই প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে এই পারুল বেগম ৷ সারা বাংলার মানুষের করুন মুখচ্ছবি দেখতে যাওয়ার অবকাশ তো সম্ভব ছিল না, তাই সারা দেশের সেই বঞ্চনার প্রতীকী রূপ হিসেবে পারুল বেগমের মুখচ্ছবি আমি দেখতে চাইছিলাম ৷ আমার মনের মধ্যে সে দেখার এক তীব্র আকাঙ্ক্ষা ঘুরে ফিরছিল ৷ অবশেষে গত রাত দুটোর দিকে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী ও মাওলানা ফজলুর রহমান ভাইসহ নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করি ৷ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর মেঘনা ও দাউদকান্দি ব্রিজের দুর্বিষহ যানজট ঠেলে নোয়াখালী শহরে পৌছাতে পৌছাতে সময় গড়িয়ে যায় সকাল নয়টায় ৷ সেখানে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের দায়িত্বশীলগণ অপেক্ষমান ছিলেন আমাদের জন্য ৷ বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস এর একটি ছাত্র কাফেলাও ছুটে এসেছিল ফেনী জেলা থেকে ৷ সকলকে সঙ্গে নিয়ে সকাল দশটা নাগাদ আমরা গিয়ে পৌঁছি নোয়াখালী সদর হাসপাতালে ৷ এই হাসপাতালের চতুর্থ তলার একটি কক্ষে চিকিৎসাধীন আছেন নিপীড়িত বাংলার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি সুবর্ণচরের সেই পারুল বেগম ৷ আমাদের আগমনের সংবাদ পেয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি গণমাধ্যম কর্মীরাও সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন ৷ সকল কে সঙ্গে নিয়ে আমরা দেখতে যাই আমাদের নিপীড়িত সেই বোনকে ৷ আমরা সেখানে পৌঁছার পর পারুল বেগমের স্বামীর মুখে নির্যাতনের করুণ বিবরণ শুনলে সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে ৷ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে আমাদের চোখ ৷ আমরা তাদেরকে শান্তনার কিছু কথা বলার চেষ্টা করি ৷ ধৈর্যধারণ ও ন্যায়ের পথে অটল থাকার সাহস যোগাই ৷ সেখানে পারুল বেগমের ছোট্ট এক মেয়েও ছিল ৷ ফুটফুটে মেয়েটির মুখায়বয়ব মায়া জড়ানো ৷ আমি তাকে সোহাগ মাখা আদর দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিই ৷ তার স্পর্শে নিজের মাঝে মমতার এক স্বর্গীয় অনুভূতি অনুভব করি ৷ অবশেষে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে দু’হাত তুলে এই নিষ্পাপ শিশুর মায়ের আশু রোগমুক্তি এবং এই পরিবারটির জন্য ধৈর্য ও পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়াবার তৌফিক কামনা করি ৷ পারুল বেগমের স্বামীর হাতে সামর্থের আলোকে চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য যত্সামান্য অর্থের হাদিয়া তুলে দিয়ে বেরিয়ে আসি কক্ষ থেকে ৷ কক্ষ থেকে বেরিয়ে হাসপাতালের লবিতে দাঁড়িয়ে গণমাধ্যমকর্মী ও উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে নিজের অভিব্যক্তি তুলে ধরি -সেখানে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলি, সুবর্ণচরের নিপিড়িতা পারুল বেগম শুধুই একজন নারীর নাম নয় বরং নিপীড়িত বাংলার এক কলঙ্কিত অধ্যায় ৷ সংঘটিত এই ধর্ষণ ও নৃশংসতার জন্য কেবলমাত্র তৃণমূল পর্যায়ের ধর্ষকদের গ্রেফতার ও বিচারের সম্মুখিন করাই এই কলঙ্ক মোচনের জন্য যথেষ্ট নয়, বরং নির্বাচনে নির্দিষ্ট প্রতীকের বাইরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার উপর যারা অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, অন্য প্রতীকে ভোট দিতে বাধা দেওয়ার জন্য যারা সন্ত্রাসী ও ক্যাডার বাহিনীকে উদ্বুদ্ধ করেছিল, মূলত তারাই এই জুলুম ও ধর্ষণের নির্দেশদাতা ও প্রশ্রয়দাতা হিসাবে গণ্য ৷ সেই প্রশ্রয়দাতারা নিরাপদে পার পেয়ে শুধু তৃণমূলের এই অন্যায়কারীদের বিচার দায়মুক্তির জন্য কখনোই যথেষ্ট হতে পারে না ৷ তাই আমরা প্রচলিত যেই ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচনী ও রাজনৈতিক নিপীড়ন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেই ব্যবস্থা ও সেই ব্যবস্থার কর্তাদের বিচার চাই এবং তাদের হাত থেকে দেশ ও জাতির মুক্তি চাই ৷

৭ জানুয়ারি

নোয়াখালী থেকে ঢাকার পথে

মন্তব্য করুন