গণরুমে দুঃসহ গণজীবন কুবি শিক্ষার্থীদের!

প্রকাশিত: ১:০২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৯

সজীব বণিক, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ( কুবি) আবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের মাথা গোজার সুযোগ যা-ই থাকুক না কেন কোনোমতে দিনপার করছেন উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে আসা শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের নিচ তলায় গিয়ে দেখা হয় গণরুমে থাকা এমদাদের সাথে। নিয়ে গেলেন গণরুমে। গণরুমের সামনেই বিশাল অংশ জুড়ে দেখা গেল একগাদা জুতো। রুমের ভেতরে যেতেই তিনি শোনালেন তার মাথা গোঁজার ঠাঁই গণরুমের গণজীবন সম্পর্কে। গণরুমের অসহ্য জীবন সম্পর্কে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এমদাদ বলেন, ‘কুমিল্লাতে থাকার মতো আমার কোনো আত্মীয় বাড়ি নেই। তাছাড়া বিভিন্ন সমস্যা ও সঙ্কটের কারণে হলে বাধ্য হয়েই থাকছি’।

গণরুমে গিয়ে দেখা গেল এমদাদের মতো নতুন ব্যাচের ১৬ জন শিক্ষার্থী এক রুমে অর্থাৎ দত্ত হলের দুটো ছোট রুমে প্রায় ৩২জন বসবাস করছেন। যেখানে কেউ পড়ছে, কেউ গান শুনছে, আবার কেউবা একই বালিশে গাদাগাদি করে শুয়ে আছে। দরজা বরাবর একটি বেঞ্চ। ছোট রুমের দেয়ালে ঝুলছে উপচে পড়া কাপড় চোপড়, পুরো রুমে ছিটিয়ে আছে বই খাতা ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। পুরো রুমজুড়ে বিছানা পেতে এক বালিশে দুজন মাথা গোজে এভাবেই দিন পার করছেন উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে আসা শিক্ষার্থীরা।  ক্লাস শেষে রুমে আসা আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী যখন বাথরুমের দিকে যাচ্ছিলেন তখন দেখা গেল সেখানেও ব্যস্ততা।

কাজী নজ্রুল ইসলাম হলঘুরেও জানা গেল, তাদের ছোট দু’রুমে ২৬জন শিক্ষার্থী থাকছেন। যে রুমে নেই কোনো টেবিল। পুরো রুম জুড়ে রয়েছে তোষকের বিছানা যেখানে গাদাগাদি করে পড়াশুনা করছেন তারা। ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী রাখার কোনো লকার ব্যবহারের সুযোগ কিংবা ঠিকঠাক পড়ার পরিবেশ পাচ্ছেন না তারা।

জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের গণরুমে গিয়ে দেখা গেলো সেখানকার চিত্রটাও অভিন্ন। এই হলে সিট সংখ্যার তুলনায় ছাত্র বেশি হওয়ায় হল র্কতৃপক্ষ এখানেও ব্যবস্থা করেছে গণরুমের। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, তিনটি রুমে প্রায় ৬০ জন ছাত্র একসাথে থাকেন। সেখানেও গিয়ে দেখা গেলো, হাসপাতালের বেডের মতো পাশাপাশি সারি সারি বিছানা। তাতে কেউ শুয়ে আছেন, কেউ কেউ আবার গল্প করছেন। তাদের আড্ডায় যোগ দিয়েই জানা গেল তাদের দুঃসহ গণরুমের গণজীবন সম্পর্কে।

সর্বশেষ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রীহল নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলের গণরুম থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ইত্তেফাক প্রতিনিধি জান্নাতুল ফেরদৌসের মাধ্যমে জানা গেল, এক রুমে ১২ জন শিক্ষার্থী আসনের অভাবে বাধ্য হয়ে কষ্ট করছে। গণরুমের একজনের সাথে কথা বলে জানা গেল, তার নির্দিষ্ট কোনো সিট নেই। র্ভতি হওয়ার পর থেকে কোনো রুমে ব্যবস্থা হয়নি বলে গণরুমে দুঃসহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে।

রেজিস্ট্রার ড মোঃ আবু তাহের বলেন, আবাসিক হলগুলোতে পর্যাপ্ত আসন নেই। তাই শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট করে এক রুমে থেকে পড়াশোনা করছেন যা আমরা সবাই জানি। আশাকরি, প্রকল্পের কাজের মধ্য দিয়েই শিক্ষার্থীদের সব সমস্যার সমাধান করা হবে।

/এসএস

মন্তব্য করুন