‘তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলা মানে নিজেকেই ছোট করা’

প্রকাশিত: ৫:৩২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৯, ২০১৯

‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রতি আস্থাহীনতার কথা বলা মানে নিজেকেই ছোট করা’ বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক এমপি, বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট গোলাম মাওলা রনি।

তিনি বলেছেন, তারেক রহমান যে জায়গায় পৌঁছেছেন ঠিক সেই জায়াগাটি গোলাম মাওলা রনি কিংবা কাদের সিদ্দিকী সাহেবদের মতো মানুষের দয়া এবং করুণার ওপর নির্ভর করে না। তিনি তার আপন যোগ্যতায়, আপন কতৃত্বে, প্রকৃতি প্রদত্ত্ব ‘ইনহেরিট পাওয়ার’ (উত্তরাধিকারী সূত্র) বৈশ্বিক রাজনীতি এবং দেশের জাতীয় রাজনীতির নির্মম বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে বিএনপির মতো ঐতিহাসকি জনপ্রিয় এবং বৃহত্তম একটি রাজনৈতিক দলের নেতা হয়েছেন। এইরকম একজন মানুষকে নিয়ে, তার নেতৃত্ব নিয়ে কটাক্ষ করে তাকে বড় করলাম নাকি ছোট করলাম; নাকি নিজেকে ছোট করালাম তা একটি মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। আমি বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে বা একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে বলবো এটা অনভিপ্রেত।

  • গত সোমবার (২৬ আগস্ট) প্রেসক্লাবে তারেক রহমানকে নিয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর করা এক মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গত মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ‘তারেক রহমানকে নেতা বানানোর রাজনীতি করি না’ বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে গোলাম মাওলা রনি বলেন,  ছাত্রলীগের তুখোর নেতা ফজলুর রহমান সাহেব বা ছাত্রলীগের নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান রুপকার হাবিবুর রহমান সাহেব কিন্তু আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপিতে গেছেন। তাদের যে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার, মেধা, প্রজ্ঞা, শিক্ষা, বংশীয় ঐতিহ্য; এটা আমরা যারা সমাজে বড় বড় কথা বলি তাদের চাইতে অনেক ভালো। তারা কিন্তু তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে কখনো অবমূল্যায়নমূলক কথা বলেননি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কুলখানি বা দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ সম্পর্কে আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এই এমপি বলেন, ১৫ আগস্ট এলে আমার রোজা রাখতে ইচ্ছে করে, দোয়া মাহফিল করতে ইচ্ছে করে। আবার বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী সাহেবের ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে যেতে ইচ্ছে করে, সেখানে নামাজ পড়তে ইচ্ছে করে কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতারা যেতে দেন না। আবার আমি যে দূর থেকে ১৫ আগস্টে দোয়া মাহফিলে অংশ নেই আওয়ামী লীগ কর্মীরা মনে করেন এটা একটা ফন্দি। তার বলে আমি আওয়ামী লীগে ফেরার চেষ্টা করছি।

নির্বাচনকালীন বিভিন্নজনের ভুমিকা নিয়ে রনি বলেন, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর নির্বাচন করবেন ধানের শীষ নিয়ে কিন্তু মঞ্চে উঠবেন মুজিব কোট গায় দিয়ে। আমাদের ড. কামাল হোসেন বিএনপির জনসভায় বঙ্গবন্ধু- জয় বাংলা বলতে খুব ইচ্ছা করে। আমাদের এই অস্থিরতা এবং সিদ্ধান্তহীনতা, পরিবেশে-পরিস্থিতির উল্টা গীত গাওয়া তথা শীতকালে গরমের ওয়াজ, গরমকালে শীতকালের ওয়াজ করা জনগণকে বিভ্রান্ত করে।

নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সাবেক এই আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি বলেন,  আমি একসময় জেল খেটেছি। আমার অপরাধ ছিলো আমি সত্য কথা বলতাম, আমার অপরাধ ছিলো সত্য কথা লিখতাম, আমার অপরাধ ছিলো যারা দলের নাম ভাঙিয়ে, দলের সমস্ত সুযোগ সুবিধা নিয়ে দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলছে তাদের বিরুদ্ধে বলতাম। এই কারণে আমাকে জেলে যেতে হয়েছে। জেলে যাওয়ার কারণে আমি অপমানিত হলাম, পার্লামেন্টে গেলাম না। নমিনেশন চাইলাম না, নির্বাচন করলাম না। ২০১৪ থেকে ১৮’ পর্যন্ত পাঁচ বছর ঘরে বসে রইলাম। একাদশ সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মী, কর্মী-সমর্থকদের চাপে দলীয় মনোনয়ন চাইলাম। কিন্তু পেলাম না। আবার অপমানিত হলাম। ঠিক এই মুহর্তে আমাকে অত্যান্ত সম্মান করে ডেকে নিয়ে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। এখন আমি কি বিএনপির প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো? নাকি সকালে এক কথা আর বিকেলে আরেক কথা বলবো; এটা আমাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কেননা জনগণ আমার বালখিল্য শুনতে বসে নেই। ফলে আমি স্থির করেছি আমি যেখানে আছি সেখানেই থাকবো। নেতৃত্বের প্রতি করেই সম্মান করেই আমি এখানে আছি। এখান থেকে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সুযোগ থাকলেও ফিরে যাওয়া ঠিক হবে না।

সাবেক এই এমপি বলেন, তারেক রহমান দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে যেই জায়গায় পৌঁছেছেন তাতে তাকে দলের অবিসংবাদিত নেতা মনে করা হয়। বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কাছে তিনি নিন্দিত হতে পারেন কিন্তু বৃহত্তম একটি দলের নেতা, দলের কর্মীরা তার প্রতি আস্থাশীল হয়ে কাজ করছেন। এখন তার দলের না হয়ে যদি কেউ বলে ‘তারেক রহমানকে নেতা বানানোর জন্য রাজনীতি করি না’ এটা নিয়ে কি লোকজন হাসবে নাকি কাঁদবে যারা এটা দেখেছেন বা শুনেছেন তাদের ওপর ছেড়ে দিলাম।

রনি বলেন, কোনো একটা জোট করার জন্য বা দল করার জন্য মনকে আগে স্থির করতে হবে। নেতা নেতাই। তারেক রহমান যেখানে আছেন সেই জায়গাটাতে পৌঁছানোর জন্য অনেকগুলো প্রেক্ষাপট-পরিস্থিত দরকার। কিংবা ধরুন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যেখানে আছেন, সজিব ওয়াজেদ যেখানে আছেন সেখানে পৌঁছাতে আমি গোলাম মাওলা রনি যদি পান্ডিত্যের সর্বোচ্চ শিখরেও পৌঁছে যাই না কেন; চলমান রাজনীতিতে জনগণ আমাকে গ্রহণ করবে না। সুতরাং আমরা যতক্ষণ একটা দলের সঙ্গে আছি ততক্ষণ সেই দলের নেতৃত্বের প্রতি সম্মান ও মর্যাদাবোধ না থাকলে বেসিক্যালি আমাদেরই ক্ষতি হবে। কারণ তারেক রহমান যেখানে আছেন সেখানে তার কারো করুণার দরকার হয় না। বরং অনেকেই তার করুণার আশায়, তার একটা টেলিফোনের আশায়, একটা রাজনৈতিক আশ্বাসের আশায় বসে থাকেন। সেখানে তাকে নেতা বানানো নিয়ে যদি আমরা কথা বলি; ‘সেটা তারেক রহমান সাহেবকে নয় বরং আমার নিজেরাই নিজেকে ছোট করছি’।

প্রসঙ্গ, গত ২৬ আগস্ট সোমবার প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রতি কটাক্ষ করে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘খালেদা জিয়া জাতির একজন অন্যতম নেতা, কিন্তু তারেক রহমান নয়। গত নির্বাচনে প্রায় সব কিছুতেই নেতৃত্ব তারেক রহমানের হাতে চলে গিয়েছিল। তারেক রহমানকে নেতা বানানোর জন্য আমি কখনো রাজনীতি করি নাই, জীবনেও করবো না’।

/এসএস

মন্তব্য করুন