

শান্তিপূর্ণ ভ্রমণ হিসেবে লঞ্চ ভ্রমণের রয়েছে আলাদা কদর। বিশেষ করে ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ তাদের নিজ নিজ এলাকায় ভ্রমণের জন্য প্রথম পছন্দে রাখেন লঞ্চে করে নিজ এলাকায় ভ্রমণ করাকে। কিন্তু ঢাকা সদরঘাট যেন পরিণত হয়েছে মগের মুল্লুকে। ঘাট শ্রমিক থেকে শুরু করে ঘাট সন্ত্রাসীদের দৌরাত্মে যেন অস্থির সাধারণ জনগণ।
বেশিরভাগ এসব শ্রমিকই নেশার টাকা সংগ্রহ করতে সাধারণ যাত্রীদের ওপর হামলে পড়ে বলে জানা গেছে। নানাভাবে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে এসব ঘাট শ্রমিকরা। সে টাকার ভাগ দেন স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী থেকে শুরু করে শ্রমিক সংগঠনের বড় বড় নেতাদের।যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার থেকে শুরু করে জোর করে টাকা আদায় করা যেন মামুলি ব্যাপার। কেবল প্রবাসীই নয় কারও কাছে বড় লাগেজ থাকলেও তাকে হয়রানী করতে থাকে তারা।
এক দেশ থেকে অন্যদেশে পণ্য নিতে যেমন টাকা দিতে হয় তেমনি সদরঘাট থেকে বের হতে বা সদরঘাটে ঢুকতে তেমন করেই টাকা দিতে হয় ঘাট শ্রমিকদের। এক্ষেত্রে ঘাট শ্রমিক এ সন্ত্রাসীদের প্রধান টার্গেট থাকে প্রবাসী এবং ঈদ যাত্রীরা। প্রবাস থেকে আসা বা প্রবাসে যাওয়া লোকদের টার্গেট করেই তারা তাদের দৌরাত্ম দেখিয়ে থাকে। কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রতিবাদ করলে বা তাদের কিছু জিজ্ঞেস করলে তারা সকলে মিলে যেন হামলে পড়ে তার ওপর। এমনকি গায়ে হাত দেওয়ারও বহু ঘটনা আছে। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরণের কয়েকটি ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে। যেখানে দেখা গেছে ঘাট শ্রমিকরা প্রবাসীদের লাগেজ আটকে দিয়ে তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করছে এবং জোর করে টাকা আদায় করছে। কেউ তাদের কাছে কিছু জানতে চাইলে তাদের সাথেও করছে দুর্ব্যবহার।
টাকা ছাড়া তাদেরকে বের হতেও দিচ্ছে না তারা। এ ব্যাপারে কয়েকজন প্রবাসীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা দিয়েছেন ভয়ংকর তথ্য।ওমর ফারুক নামে এক দুবাই প্রবাসীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি যতোবার সদরঘাট পার করেছি প্রতিবার টাকা দিয়েছি। প্রথমবার প্রতিবাদ করেছিলাম তখন তারা আমার গায়ে হাত তুলেছে। এরপর নিজের ইজ্জতের দিকে তাকিয়ে টাকা দিয়ে দেই। পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো সমাধান পাইনি বলেও জানান তিনি।
জামালুদ্দিন নামের এক কাতার প্রবাসীর সাথে কথা হলে তিনি জানিয়েছেন এ পর্যন্ত পটুয়াখালী থেকে থেকে প্রায় ১০/১২ বার ঢাকা আসা যাওয়া করেছেন তিনি। যখনই তার সাথে কোনো লাগেজ থাকে তখনই জোর করে তার কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়। কখনও দশ হাজার কখনও আট হাজার এভাবেই সব সময় জোর করে চাঁদাবাজি করা হয়। টাকা না দিলে মারধরসহ মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়। টাকা নাই বললে মোবাইল বা লাগেজ রেখে দেওয়ার হুমকি দেয় তারা। ‘সদরঘাটের থানা পুলিশ কোনো সহযোগীতা করে কি না বা তাদের কাছে অভিযোগ জানালে কোনো ব্যাবস্থা নেয় কি না’ জানতে চাইলে তিনি বলেন “পুলিশ এখানে নির্বিকার হয়ে থাকে” কেন থাকে তা তারা ভালো জানেন।
সাধারণ যাত্রীদের অনেকের সাথে কথা বললে তারাও জানিয়েছেন যে, “এমনটা তারা অহরহ দেখেন” যাত্রীদের সাথে এমন দুর্ব্যবহার এবং জোর করে টাকা আদায় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার সদরঘাটের। যারা চাঁদাবাজি করে তাদের বেশিরভাগই মাদকাসক্ত। মাদকের টাকা সংগ্রহ করতে তারা যা খুশি তা করে বেড়ান। এসবের সমাধান কেহই করেন না। এভাবে যাত্রী হয়রানী থেকে তাদেরকে নিবৃত করার জন্য কঠোর ব্যাবস্থা নেওয়া উচিত বলেও মতামত তাদের।
আই.এ/এইচ আর আর/পাবলিক ভয়েস