

আবিদুর রহমান
তারা যে মসজিদ নির্মাণ করছিল, তাতেও পরবর্তীতে নবীজী আর উঠলেন না। আল্লাহ্ এই মসজিদের নাম দিয়েছিলেন মসজিদে” যিরার ” এবং নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছিলেন এই মসজিদকে ধ্বংস করে দিতে। সাথে সাথে সাহাবায়ে কেরাম মুনাফিকদের আস্তানা কে জ্বালিয়ে ধ্বংস করে দেন। আর সবাইকে যে মসজিদে নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেটা হলো মসজিদে কুবা।
নবীয়ে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনাতে আসেন তখন সর্বপ্রথম এই মসজিদে চৌদ্দ দিন অবস্থান করছিলেন। এবং মসজিদটি নিজ হাতে নির্মাণ কাজ শুরু করে ছিলেন। দেয়ালের উত্তর গেইট দিয়ে প্রথমেই প্রবেশ করলাম আমরা।
দেয়ালে একটা হাদীসে লেখা দেখলাম। হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবীয়ে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহিস সালাম বলেন, ‘যে এই মসজিদে (অর্থাৎ কুবাতে) দুরাকাত নামাজ আদায় করবে সে একটা উমরাহ আদায় করার সওয়াব পাবে। (ইবনে মাজাহ)
এবং অন্য হাদীসে আছে আল্লাহর রাসূল প্রত্যেক সপ্তাহে শনিবারে এই মসজিদে আসতেন কখনো হেঁটে হেঁটে আবার কখনো সওয়ার মাধ্যমে আরোহন করে। আহ! মসজিদের কতো ফজিলত। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন রাখছেন। নবীকে তো পাইনি কিন্তু আমার প্রিয় নবী যেই মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন সেই মসজিদেতো আসার তাওফিক দিয়েছেন মালিক! তাই কয়েকবার শুকরিয়া আদায় করলাম (আলহামদুলিল্লাহ্)
তারপর গেলাম উহুদের ময়দানে। উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিলো ৩ হিজরীর শাওয়াল মাসে। সেখানে গিয়ে আমি যেনো সেই সাড়ে ১৪শত বছরের পূর্বের কাহিনীর তন্মায় পড়ে গেলাম। যুদ্ধে ৭০ জন সাহাবায়ে কেরাম কাফির দের হাতে করুণ ভাবে! শহীদ হয়েছিলেন। সাহাবাকেরাম দের শেষ নি:শ্বাস থাকা সত্ত্বেও কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকেন নি।
মনে মনে ভাবছিলাম, এখনো তো সেই ১৪ বছরের পূর্বের অহুদ পাহাড় বিদ্যমান। তাকে জিজ্ঞাসা করি সেই দিনের করুণ কাহিনী। বলি, বল হে নবীর প্রিয় পাহাড়! বহু ঘটনা পড়েছি কিতাবের পাতায় পাতায় কিন্তু আজ তোমার কাছ থেকে সরাসরি শুনতে চাই!
তুই তো সেই পাহাড়, যে পাহাড়ের অপর দিক থেকে জান্নাতের ঘ্রাণ আসছিলো। তাই তুমিই বলে যাও সেদিনের করুণ কাহিনী। যেখানে আমার প্রাণের নবী, রাহমাতুল্লিল আলামীন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ঝাঁকে ঝাঁকে তীর বর্ষিত হচ্ছিলো। দান্দান মোবারক শহীদ হয়েছিলো।
প্রথম পর্ব পড়ুন- প্রেম সাগরে ডুব সাঁতুরে…(১)
এবং কাফিরদের পক্ষ থেকে গুজবের গুঞ্জন ছড়াচ্ছিলো আল্লাহর রাসূলকে তারা শহীদ করে ফেলছ। সে দিনের এই গুঞ্জনের খবর যখন সাহাবায়ে কেরাম যখন শুনছিলেন, তখন তাঁদের অবস্থা দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলো। কে কার অবস্থার খবর নিবে পাগলের ন্যায় সবাই ছুটোছুটি করছিলেন। আহ! এই করুণ কাহিনী এখনো শুনলে, পড়লে অশ্রুজল গড়িয়ে পড়ে কপল বেয়ে।
নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় চাচা, শহীদগণের সর্দার হযরত হামযাহ (রাযি.) শহীদ হয়েছিলেন। আহ! আজতো আমি আসছি দর্শক হয়ে কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম তো আসছিলেন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর’ কালিমার পতাকা উড্ডীন করার জন্য। আমার দর্শক হয়ে আসাটা কামিয়াব হবে যদি এই প্রেরণা নিয়ে যেতে পারি এখান থেকে। যতদিন দুনিয়াতে থাকবো ততোদিন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর’ পতাকা উড্ডীন করার লক্ষে জিহাদ করে যাবো ইনশাআল্লাহ।
আকাশের সূর্য সেদিনও এখানে ছিলো। কী দেখেছিলো সে এখানে সেদিন? তালহার বীরত্ব! আলীর শৌর্য! আবু দোজানার বিক্রম! ওয়াহশীর হিংস্রতা! হিন্দার পৈচাশিক উল্লাস!
নূরের ফেরেশতারা আকাশ থেকে নেমে এসেছিলেন তাঁকে গোসল দিতে, যিনি বাসরশয্যা থেকে ছুটে এসেছিলেন জিহাদের ময়দানে!হে জাবালে অহুদ! তুমি তো আজো দাঁড়িয়ে আছো নীরব, নিস্তব্ধ হয়ে সেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে! কী দেখেছিলে সেদিন তুমি, বলনা একটু!
আবু জামূহের লাশ বহন করতে কেন অস্বীকার করেছিলো উট! তুমি কি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলে, যেন এখানে তোমারই ছায়ায় শুয়ে থাকেন তিনি! আহ! কি করুণ কাহীনি ছিলো সেদিনের। সেদিন তো ছিলো হক্ব বাতিলের লড়াই।
চলবে….