

এম শামসুদদোহা তালুকদার
আমরা জাতি হিসেবে কতটা বর্বর, এর একটা রেটিং হলে মাশাআল্লাহ শীর্ষ পাঁচের মধ্যে থাকতাম। একটা জাতি সুসভ্য হিসেবে তখনি পরিচিতি লাভ করে, যখন তাঁদের মাঝে মৌলিক মানবিক মূল্যবোধের সমাহার থাকে।
জাতির উপাসনা যেন পদ্মা সেতুকে ঘিরে। আর তাতে মানুষকে ‘বলি’ দিতে হবে। পদ্মা সেতু ‘জীবন্ত মানুষের মুন্ডু’ চায়। আর এ সব কথা বিশ্বাস করার মতো মানুষ দেশের অধিকাংশ। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার, শিক্ষিতরাও তা বিশ্বাস করছে। অথচ এ দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর এখনো ঠাডা পড়ে ধ্বংস হবার সংবাদ পাইনি। বলুন তো, আমরা কোন লেভেলের শিক্ষিত জাতি?
পদ্মা সেতু নির্মাণে ‘কল্লা’ লাগবে, এমন আজগুবি প্রচারণায় কতক আলেমও যোগ দেয়ায় আমি আশ্চর্য! আমরা জানতাম, কুসংস্কার অর্ধশিক্ষিত বা অশিক্ষিতদেরকে আচ্ছন্ন করে রাখে। কিন্তু কুরআন হাদীস পড়ুয়ারাও এমন একটা সহীহ গুজব বিশ্বাস করবে, তাও কি বিশ্বাস করতে হবে? তাদেরকেও হালে কুসংস্কারে পেয়ে বসেছে? মাদ্রাসা পড়ুয়াদের সম্পর্কে এমন কথা তো বামপন্থী বা নাস্তিকরা অহরহ বলে থাকে।
দেশে গত কয়েকদিনে গুজব নির্ভর অসংখ্য অপরাধ ঘটেছে। অমানবিকতায় মেতে উঠেছিলো অনেক মানুষ। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেলেধরা সন্দেহে নিরীহ মানুষরা হামলার শিকার হয়েছে। তাদেরকে রক্তাক্ত করে আধমরা বানিয়েছে। যাদের অনেকেই আসলে মানসিক রোগী। গুজবের তান্ডব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ছেলেধরা সন্দেহে ঐ বাচ্চার পিতাকে ধরে পিটিয়েছে বাংলার বীর জনতা! সরকারের পক্ষ থেকে গুজব সংবাদের প্রতিবাদ করে বিবৃতি দেয়ার পরও তান্ডব থামছে না।
আসলে গত ডিসেম্বর থেকে এ জাতি বহুত প্যারার মাঝে আছে। বিশ্বে প্রচলিত রাষ্ট্র ক্ষমতার পালাবদলের উপায় হিসেবে নির্বাচন পদ্ধতির সতীত্বকে নষ্ট করা হয়েছে। সারা দেশের মানুষ যা প্রত্যক্ষ করেছে, তা সরল ভাষায় স্বীকার করছে না নির্বাচন কমিশন। এমন নির্জলা মিথ্যুক ও নির্লজ্জ কমিশন পৃথিবীতে আদৌ আসবে কি?
বর্তমান সভ্য জগতে কোন দেশে নির্বাচনপূর্ব রাতের আমলে কি ব্যালটে সীল মেরে বাক্স ভরা হয়? পরদিন এর হোতাদেরকে নির্বাচিত ঘোষণা করে ফের ক্ষমতায় থাকার পথ সুগম করে দেয় কি পৃথিবীর কোন নির্বাচন কমিশন? এ জাতির বিবেক বুদ্ধি পঁচে যাওয়ায় এটা সম্ভব হয়েছে। কই? এমন অনাচারের বিরুদ্ধে দেশের নাগরিকদের তরফ থেকে কোন প্রতিবাদ করা হয়েছে কি? একটা মিছিল বা হরতাল? হয় নাই। আমরা অনাচার মেনে নিয়েছি।
সভ্যরা সমাজকে শুদ্ধ করে, অসভ্যতা বিশৃঙ্খলা করে। আমরা এখন অশুদ্ধ কুসংস্কারে ঘুরপাক খাচ্ছি। যে সমাজে সততা থাকে না, কপটতা বিজয়ী হয়, সেটা আর সভ্য সমাজ থাকে না। যে সমাজে হিংস্রতা প্রবলতর, সে সমাজ থেকে মানবিক মূল্যবোধ নির্বাসিত হতে বাধ্য। যেখানে মানবিক মূল্যবোধ নাই, সেখানে মানুষকে দিনে দুপুরে হত্যা করা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। গুজবের উপর ভর করে নিরীহদের উপর হামলা তখন মামুলি ব্যাপার মাত্র। যে সমাজে বিবেক ও লজ্জাশীলতা থাকে না, সেখানে নির্বাচন কমিশনের মতো বাহাদুরেরা ভৌতিক ভোটের মাধ্যমে তথাকথিত বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে।
দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবি হিসেবে জনাব ফরহাদ মজহারকে আমরা চিনি ও জানি। যিনি গত বছর সরকারী ভাষ্যমতে- নিজেকে নিজে গুম করার উদ্দেশ্যে ভারতের বর্ডার পর্যন্ত পৌঁছেছিল! সরকার সেটা হতে দেয়নি, ধরে নিয়ে এসেছে! এর পর থেকে তিনি নিশ্চুপ।
তবে আরেক বুদ্ধিজীবী সৈয়দ মকসুদ আলী মাঝেমধ্যে টুকটাক বলেন। তিনি কতটা হতাশ হলে এ কথা বলতে পারেন, ‘হাশরের ময়দানে এ সিইসিকে নির্বাচনের জন্য প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে, অর্থাৎ আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে! এত সহজে কেউ তাঁকে ক্ষমা করবেনা, আল্লাহর ক্ষমা করবেন না’।
হাশরের ময়দানে গণতন্ত্র ফেরত দেয়া হবে বুঝি!
লেখকঃ এক্টিভিস্ট ও বিশ্লেষক।