বাংলাদেশে ‘কওমী মহিলা মাদরাসা’র প্রাসঙ্গিকতা ও প্রস্তাবনা

প্রকাশিত: ২:৩৪ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৯, ২০১৯
বাংলাদেশে ‘কওমী মহিলা মাদরাসা’র প্রাসঙ্গিকতা ও প্রস্তাবনা। ছবি : ডেস্ক এডিট

“একজন শিক্ষিত মা একটি সমাজের দর্পণ”। সুস্থ সুন্দর সমাজ বিনির্মানে নারী শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বলে শেষ করা যাবে না। ইসলাম ধর্মে শিক্ষার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। ইসলাম পৃথিবীতে আবির্ভাব হওয়ার প্রথম শব্দ ছিলো ‘ইকরা’ অর্থাৎ পড়ো! এই শিক্ষা নারী পুরুষের ভেদাভেদ তৈরি করেনি বরং নারীরা ইসলামের প্রথম যুগেও শিক্ষার এক অনবদ্য নজীর স্থাপন করেছিলো। ইসলামের মহান নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রী-দের শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। নবীপত্নী হযরত আয়শা রাযিআল্লাহু তায়ালা আনহা ছিলেন একজন হাদিসবেত্তা। তিনি অনেক বড় সাহাবীদের থেকেও অধিক সংখ্যার হাদিস বর্ণনা করেছেন।

মহানবীর কাছে পুরুষ সাহাবিরা যেমন জ্ঞান শিখতেন, তেমনি মহিলা সাহাবিরাও জ্ঞান শিক্ষা করতেন। মহানবী (সা.) এর কাছে শিক্ষানুরাগী মহিলারা একবার বলছিলেন, আপনি জ্ঞান শিক্ষার কাজে সবসময় পুরুষদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকেন। আমাদের জন্যও একটা দিন ধার্য করুন। মহানবী (সা.) সে অনুযায়ী তাদের আলাদা শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। রাসুল (সা.) উম্মাহতুল মুমিনিনের লেখা শেখার ব্যবস্থা করেছিলেন। উম্মুল মুমিনিন হজরত হাফছা (রা.), আয়েশা (রা.) এবং অন্যান্য মহিলা সাহাবিরা লিখতে জানতেন। হজরত আয়েশা (রা.) সমকালীন শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কত উচ্চ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন তা বোঝা যায় নিম্নোক্ত বর্ণনা থেকে। উরওয়া বিন যোবায়ের তার খালা সম্পর্কে বলেন, ফারায়েজের ইলম, হালাল-হারামের মাসায়েল এবং কোরআনের ইলমের ক্ষেত্রে আয়েশা (রা.) এর চেয়ে বড় আলেম আমি দেখিনি। উরওয়া আরও বলেন, কবিতা, সাহিত্য, চিকিৎসা এবং ইতিহাস সম্পর্কে আয়েশার (রা.) চেয়ে বড় জ্ঞানী আমি দেখিনি।

হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে তার মর্যাদা ছিল অনেক পুরুষ সাহাবির ওপরে। হাদিস গ্রন্থগুলোর মধ্যে আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ২২১০, যা সব সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। প্রসিদ্ধ তাবেঈ মসরুক বলেন, আল্লাহর কসম, বড় বড় সাহাবাকে আমি আয়েশা (রা.) এর কাছে মিরাছের মাসআলা জিজ্ঞেস করতে শুনেছি। সাহাবিরা যখনই কোনো মাসআলার ব্যাপারে সন্দিহান হতেন বা সমস্যায় পড়তেন তখনই তারা পর্দার আড়াল থেকে আয়েশা (রা.) এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেন এবং সঠিক সমাধান পেয়ে যেতেন। এর দ্বারা বোঝা গেল, পর্দার সঙ্গে মহিলাদের জন্য শিক্ষকতা করা বা মহিলাদের কাছে গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করার ব্যাপারে ইসলামের কোনো বাধা নেই। আর পর্দার বিধান নারীকে আবদ্ধ করার জন্য নয়, নারীকে শিক্ষাবিমুখ রাখার জন্যও নয় বরং নারীর সম্ভ্রম রক্ষা ও নিরাপত্তা দানের জন্যই পর্দার বিধান রাখা হয়েছে। শিক্ষাও যেমন নারীর জন্য জরুরি ঠিক পর্দাও নারীর অস্তিত্ব ও সম্ভ্রম রক্ষার জন্য জরুরি।

যেসব মহিলা সাহাবি কবিখ্যাতি অর্জন করেছিলেন তাদের মধ্যে রয়েছেন আরওয়া বিনতে আবদুল মুত্তালিব, সুদা বিনতে কোরায়জ, রাসুল (সা.) এর দুধবোন শায়মা, আতেকা বিনতে যায়দ, খানসা প্রমুখ। খানসা (রা.) এর কবিতা রাসুল (সা.) অত্যন্ত আগ্রহ ভরে শ্রবণ করতেন এবং বলতেন, হে খানসা, আরও কিছু শোনাও। সুতরাং ইসলামের সূচনালগ্ন থেকেই নারীসমাজের জ্ঞান চর্চার ব্যাপারে নারী শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ ছিল এবং এ ধারাবাহিকতা পরবর্তী যুগেও অব্যাহত ছিল। ইবনে আসাকির বলেছেন, ইমাম বোখারি যেসব নারী মুহাদ্দিস থেকে হাদিস গ্রহণ করেছেন তার সংখ্যা ছিল আশির ওপরে।

মোটকথা : ইসলাম নারীদের শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনো বাধাপ্রদান করে না। সে হিসেবে নারীদের শিক্ষা অর্জন থেকে শুরু করে সবকিছুর অধিকার নিশ্চিত করা ধর্মীয় ও সামাজিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। কিন্তু সে দায়িত্ব অবশ্যই সতর্কতার সাথে পালন করতে হবে।

বাংলাদেশে নারী শিক্ষার ধারাবাহিকতা এখন চক্রবৃদ্ধি আকারে বেড়েছে। পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নারীরাও শিক্ষা অর্জন করছেন এবং পুরুষের সাথে পাল্লা দিচ্ছেন। বাংলাদেশের শিক্ষাধারা তিনভাবে বিভক্ত। যার মধ্যে স্কুল-কলেজ সম্পূর্ণ জেনারেল ধারা বলা চলে। সেখানে সমানহারে মেয়েরা সহশিক্ষা অর্জন করছেন। আলিয়া মাদরাসা শিক্ষাক্রমটি আধা ধর্মীয় এবং আধা জেনারেল শিক্ষা হিসেবে ধরা যায় যেখানেও নারীরা সহশিক্ষাই অর্জন করছেন। এর বাইরে সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রম এবং ভিন্নধারার পূর্ণ ধর্মীয় শিক্ষাক্রম হলো কওমী মাদরাসা শিক্ষাব্যাবস্থা।

লেখার কলেবর বৃদ্ধি না করে এই লেখায় কেবল বাংলাদেশের কওমী মাদরাসায় নারী শিক্ষা বিষয়ে কিছু আলোকপাত করা হবে।

স্বাভাবিকভাবেই কওমী মাদরাসাগুলো সম্পূর্ণ ধর্মীয় চিন্তা-ধারার উপর ভিত্তি করে দাড়ানো। (সামাজিক দায়বদ্ধতা যেখানে তেমনভাবে গুরুত্ব পায় না যা নিয়ে আলাদা আলোচনার দাবি রাখে) সে চিন্তা থেকেই নারী পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা শিক্ষাব্যাবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছে। কওমী মাদরাসার পুরুষ শাখার প্রতিষ্ঠা ইতিহাস ১৮০০ সালের দিকে হয়েছে বলে একটি তথ্য জানা থাকলেও নারীদের জন্য ঠিক কবে, কিভাবে এই মাদরাসার প্রতিষ্ঠা হয়েছে তার কোনো নির্দিষ্ট জরিপ নেই। তবে ধারণা করা হয় আশির দশকের শুরুর দিকে বিভিন্ন মতভেদের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে কওমী মাদরাসার নারী শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এক্ষেত্রে পাকিস্তানের মাদরাসা শিক্ষার নারী ধারাকে মূলত ফলো করা হয়েছে বলে অনেকের ধারণা কারণ পাকিস্তানে নারীদের জন্য এই ধর্মীয় শিক্ষার ধারা বেশ সমৃদ্ধ।

বাংলাদেশে মহিলা মাদরাসাগুলোর প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসিম। দেশে একটি “উন্নত ধর্মীয় চিন্তাধারা লালন করে” নিজেদের নৈতিকতার সর্বোচ্চ স্থান নিশ্চিত করতে এবং নৈতিকতায় পরিপূর্ণ ভবিষ্যত প্রজন্ম বিনির্মানে মহিলা মাদরাসা অবশ্যই প্রয়োজন এবং এর উত্তরোত্তর বৃদ্ধির জন্য প্রচেষ্টা চালানো একান্ত কর্তব্য। কারণ সমাজের নারীরাই প্রজন্মের মুখে প্রথম বুলি ফুটিয়ে থাকেন। ‘মা’য়ের হাত ধরেই প্রতিটি প্রজন্ম তাদের গতিপথের প্রথম দিক্ষা পায়। তাই মহিলা মাদরাসা এদেশের জনগোষ্ঠির জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক। সে হারে না হলেও দেশে বর্তমানে মহিলা মাদরাসার সংখ্যা অনেক।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) জরিপ অনুসারে বর্তমানে সারা বাংলাদেশে ১২ হাজার ৬৯৩টি পুরুষ ও ১ হাজার ২০৯টি মহিলা মাদরাসা রয়েছে। এসব মাদরাসায় ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৬৩৬ জন ছাত্র ও তিন লাখ ৩৯ হাজার ৬১৬ জন ছাত্রী পড়াশোনা করছে। সারা দেশে শিক্ষক আছেন ৭৩ হাজার ৭৩১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬৬ হাজার ৯০২ জন এবং মহিলা ৬ হাজার ৮২৯ জন।

এই হিসেব থেকে যদি মহিলা (বালিকা) মাদরাসা আলাদা করে ফেলি তাহলে দেখা যায়, সারাদেশে ১ হাজার ২০৯টি মহিলা মাদরাসা রয়েছে যেখানে তিন লাখ ৩৯ হাজার ৬১৬ জন ছাত্রী পড়াশোনা করছে। কওমী মাদরাসার শিক্ষাক্রম অনুসারে এটাকে আলাদা করলে দাড়ায় সারাদেশে তাকমিল পর্যায়ের মহিলা মাদরাসা রয়েছে ৩১৮টি। ফযিলত পর্যায়ের মহিলা মাদরাসা ১৫৮টি। সানাবিয়্যাহ পর্যায়ের ও মহিলা মাদরাসা ১০৭টি। মুতাওয়াসসিতাহ পর্যায়ের মহিলা মাদরাসা ৪৬৭টি, ইবতিদাইয়্যাহ পর্যায়ের মহিলা মাদরাসা ১১৩টি। হিফজুল কোরআন মহিলা মাদরাসা ৩টি। যাদের শিক্ষা প্রদানের জন্য ৬ হাজার ৮২৯ জন মহিলা শিক্ষক রয়েছেন।

আরও পড়ুন : একটি কওমী মহিলা মাদরাসা: মৌমাছিরা যেখানে ছাত্রীদের পরম বন্ধু

এখানে জরিপে যে বিষয়টি নেই তা হলো, মহিলা মাদরাসাগুলোতে পুরুষ শিক্ষকদের তালিকা! ধর্মীয় ভাবধারার ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া সত্বেও কওমী মহিলা মাদরাসাগুলো নিয়ে কিছুটা নৈতকতা বিবর্জিত কথাবার্তা এখন বের হচ্ছেই যার মূল কারণ কওমী মহিলা মাদরাসায় পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ ও পুরুষ শিক্ষক কর্তৃক পাঠদান। সম্প্রতি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার এক মহিলা মাদরাসায় শিক্ষক কর্তৃক মেয়েদের ধর্ষণের এক খবরে সারাদেশে সবাই নড়েচড়ে বসেছেন। এমন ঘটনা ইতিপূর্বেও অনেকবার প্রকাশ হয়েছে। মহিলা মাদরাসায় যদি এই অনৈতিকতা প্রকাশ পায় তাহলে মানুষের আস্থা-বিশ্বাসের জায়গাটা কোথায় যাবে এমন প্রশ্ন উঠা খুবই স্বাভাবিক।

সাধারণত মহিলা মাদরাসারগুলোর ব্যাপারে আমার ব্যাক্তিগত জানাশোনা আছে। আমার নিজের স্ত্রী-ও একজন মহিলা মাদরাসা ছাত্রী। হাফেজে কুরআন এবং মহিলা মাদরাসায় বেশ কয়েক ক্লাশ পড়েছেন তিনি। এরপর মহিলা মাদরাসার আবাসিক অব্যাবস্থাপনা ও কিছু সামগ্রিক সমস্যার কারণে তিনি নিজেই মাদরাসায় পড়বেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। মহিলা মাদরাসা সম্পর্কে সামগ্রিক কিছু তথ্য আমি তার কাছ থেকে পেলেও বিভিন্ন কারণে আগে থেকেই মহিলা মাদরাসাগুলোর ব্যাপারে আমার খোজ-খবর নেওয়ার সুযোগ হয়েছে। আবাসিক ব্যাবস্থাপনা থেকে নিয়ে মহিলা মাদরাসাগুলোতে নৈতিকতা বিবর্জিত কাজের বিভিন্ন খবর ভেতরে ভেতরে সবাই-ই জেনে থাকেন কিন্তু কোনো এক জুজুর ভয়ে সেসব সমস্যা কেউ প্রকাশ করেন না এবং তা সমাধানে সম্মিলিত কঠোর পদক্ষেপের দিকে কেউ আগান না। বরং সবার চেষ্টা থাকে এগুলো যেন প্রকাশ না হয়। এই চেষ্টার কারণে অপরাধী যারা তাদের সাহস বেড়ে যায় এবং ভয় চলে যায়। যে কারণে দিন দিন এই সমস্যা প্রবলভাবে বেড়েই চলছে। দেশের বেশিরভাগ মহিলা মাদরাসা নিয়েই এখন চাইলেই অভিযোগের শীট তৈরি করা যায়।

সবকিছু বিবেচনায় মহিলা মাদরাসাগুলোতে মেজর যে সমস্যাগুলো রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো :

১. আবাসিক থাকার ক্ষেত্রে চরম অব্যাবস্থাপনা।

২. একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে মহিলা মাদরাসা করা।

৩. মহিলা মাদরাসায় পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ দেয়া।

৪. দেশের মহিলা মাদরাসাগুলোর ব্যাপারে কোনো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ না থাকা।

৫. কোনো ধরণের নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকা।

৬. মহিলা মাদরাসার কার্যক্রম বিষয়ে কোনো জবাবদিহীতা না থাকা।

৭. মেয়েদের নৈতিক নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া।

৮. মহিলাদের শিক্ষা প্রদানের নির্দিষ্ট কোনো উদ্দিশ্য না থাকা।

৯. মহিলা মাদরাসার মেয়েদেরকে সামাজিকভাবে কোনো কাউন্সিলিং না করা।

১০. নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনো ধরণের শিক্ষা মহিলা মাদরাসার মেয়েদের না দেওয়া।

এর মধ্যে মহিলা মাদরাসায় পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ এবং মেয়েদের দৈহিক নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো জোড়ালো ভূমিকা না থাকা বর্তমান সময়ে মহিলা মাদরাসাগুলোতে নৈতিক পদস্খলনের সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। বিশেষ করে মেয়েরা কারও দ্বারা নিগৃহের শিকার হলে তার যে প্রতিবাদ করা উচিত এই বিষয়টিও তারা সেভাবে বুঝে উঠতে পারে না। নেত্রকোনার কেন্দুয়ার ওই ঘটনায় দেখা গেছে, “পোশাকধারী লম্পট, ধর্ষক ওই লোকটি মেয়েদের সাথে অনাচার করার পর তাদেরকে কুরআন হাতে নিয়ে শপথ করাতো তারা যেন কাউকে কিছু না বলে”। অর্থাৎ এই শপথটি যে অন্যায় এবং ওই হুজুর ছদ্মবেশের লোকটি যা করেছে তার কঠোর প্রতিবাদ করা উচিত এ বিষয়টিও ওই মেয়েরা সেভাবে জানেনি। এমন আরও অনেক বিষয় আছে যেমন মহিলা মাদরাসার মেয়েদের মধ্যে লাজুকতার ট্যাবু খুব বেশি থাকে। তারা লজ্জায় পড়ে অনেক ধরণের সমস্যার কথা খোলামেলা আকারে বলে না বরং নিজেরা ভেতরে ভেতরে বিষয়গুলো সহ্য করে নেয়। শিক্ষকদের অশুভ ইশারা বা চটুল কথাবার্তা যে বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে এ বিষয়টি তারা সেভাবে বুঝে উঠতে পারে না।

সর্বপরী, আরও অনেক সমস্যা রয়েছে যেগুলোর সমাধানে কিছু প্রস্তাবনা পেশ করা হলো :

১. সারাদেশের মহিলা মাদরাসাগুলোর ব্যাপারে নির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করা।

২. একটি মহিলা মাদরাসা করতে হলে নুন্যতম কিছু নিয়ম ফলো করে করতে হবে এমন শর্ত থাকা।

৩. কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বা দেশের আল্লাহভীরু আলেমদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী পরিষদ থাকা যারা কেবল মহিলা মাদরাসাগুলোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন।

৪. দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে মহিলা মাদরাসাগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নারী সদস্যদের যাতায়াতের অবাধ ক্ষেত্র তৈরি করা।

৫. প্রশাসনিকভাবে মহিলা মাদরাসাগুলোর ওপর জোর নজরদারী রাখা। বিশেষ আইনের মাধ্যমে মহিলা মাদরাসায় পুরুষদের প্রবেশ বন্ধ রাখা।

৬. কোনো মাদরাসায় কোনো মেয়ে নিগৃহের শিকার হলে সে মাদরাসার পরিচালক, শিক্ষক সকলকে জবাবদিহীতার আওতায় আনা।

৭. মহিলা মাদরাসাগুলোতে মেয়েদের সার্বিক নিরাপত্তা বিষয়ে তাদেরকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং সরাসরি প্রতিবাদ করতে সাহস জোগানোর ব্যাবস্থা করা।

এবং সবচেয়ে জরুরী হলো,

৮. কোনো অবস্থাতেই মহিলা মাদরাসায় পুরুষ শিক্ষকদের নিয়োগ না দেওয়া।

মহিলা মাদরাসার মেয়েরা হলো আবরণ আবৃতা মিষ্টি ঘ্রাণের ফুল। যে ফুলের নিরাপত্তা প্রদান এবং তাদেরকে অমলিন রাখার দায়িত্ব উম্মাহর পুরুষদের। তাই তাদের সার্বিক সকল নিরাপত্তা ও ইজ্জতের হেফাজতে সকলে একত্রিত হয়ে কাজ করা এখন সময়ের দাবি।

আরও পড়ুন : যৌনশিক্ষা ও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, প্রেক্ষিত : কওমী মাদরাসা

হাছিব আর রহমান। নির্বাহী সম্পাদক, পাবলিক ভয়েস টোয়েন্টিফোর ডটকম।

মন্তব্য করুন