

চট্টগ্রামে বায়েজিদ থানার অক্সিজেন অনন্যা আবাসিক এর পাশে অবস্থিত জামিয়া ওমর ফারুক আল ইসলামীয়া ও জামিয়া আবু বকর আছ-ছিদ্দিক মাদ্রাসা নিয়ে তৈরি হওয়া অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির কিছুটা সমাধান হয়েছে। সে মাদরাসার মসজিদে আজ জুমার নামাজ পড়িয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ও হাটহাজারী মাদরাসার সহযোগী পরিচালক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
জুমার নামাজের পূর্বে বয়ানে তিনি “পবিত্র মাহে রমজানের গুরুত্ব ও তারাবিহর ফজিলত” সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং মসজিদ মাদরাসাটি যাতে সকল ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে ইসলামের আলোকবর্তিকা ছড়াতে পারে সে দোয়া করেন।
সূত্রমতে, বিগত ১০ এপ্রিল এই প্রতিষ্ঠানের হিফজ বিভাগের ছাত্র হাবিবুর রহমান মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করে। এবং তার লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। এরপর মাদরাসাটি স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহল দখল করার পায়তারা করে বলে অভিযোগ মাদরাসা কমিটির। যা নিয়ে গত ১৫ মে চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সংবাদ সম্মেলন করে মাদরাসাটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে এবং মাদরাসাছাত্র হাবিবুর রহমানের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত করার আহবান জানান সাথে সাথে মাদরাসা দখলমুক্ত না হলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন আল্লামা বাবুনগরী।
এর একদিন পরই প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মাদরাসাটি ফিরিয়ে দেওয়া হয় কর্তৃপক্ষের কাছে এবং দখলমুক্ত সে মাদরাসার মসজিদে জুমার নামাজ পড়ান আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
আরও পড়ুন : জামিয়া ওমর ফারুক আল ইসলামীয়া মাদরাসা নিয়ে হেফাজতের সংবাদ সম্মেলন
প্রসঙ্গত : উক্ত মাদরাসাটি সম্পর্কে স্থানীয় একজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত ৮-১০ বছর পূর্বে এ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন কাতার প্রবাসী আলহাজ্ব ওমর ফারুক সওদাগর। তাঁর অর্থায়নে ও কিছু দান-সদকা নিয়েই চলত মাদ্রাসাটি। বালক শাখার পাশাপাশি মাদরাসাটির বালিকা শাখাও দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত চালু রয়েছে। গত ১০ মার্চ খতমে বোখারীর আখেরী দরস প্রদান করেন শাইখুল হাদিস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
৬ তলা বিশিষ্ট শিক্ষাভবন, ৪ তলা সুবিশাল মসজিদ সহ মহিলা বিভাগের আলাদা ক্লাসরুম ভবন নিয়ে এ মাদরাসা। মাদরাসাটি সুনামের সাথে পরিচালিত হয় কওমী মাদরাসার সিলেবাস অনুযায়ী। তবে কওমী মাদরাসাবিরোধী একটি মহল মাদরাসাটিকে নিয়ে বিভিন্নমূখী ষড়যন্ত্র শুরু করে।
মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া, মাইকে ওয়াজ নছিহত না করা, এমনকি মাইকে আযান না দেওয়ার হুমকি সহ মাদ্রাসা শিক্ষক- ছাত্রের উপর হামলা করার ঘটনাও হয়েছে অনেকবার। নাম প্রকাশ না করার সূত্রে এমন অভিযোগ করেছেন এলাকার কয়েকজন ব্যাক্তি।
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছ, বিগত ক’য়েক বছর আগে মাদ্রাসাটির উপদেষ্টার দায়িত্বরত চট্টগ্রাম পটিয়া মাদ্রাসার মুহাদ্দিস হাফেজ যাকারিয়া আল আযহারি’কে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিলো।
এরপর গত ১০ এপ্রিল বুধবার রাতে মাদ্রাসার একটি ছাত্রের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা তা আইনি তদন্তের আগেই মাদ্রাসার শিক্ষক ছাত্রের উপরর পরেরদিন (১১ এপ্রিল) সকালে অতর্কিতভাবে হামলা করে বসে এলাকার কমিশনারের মদদপুষ্ট কিছু সন্ত্রাসীরা। যে হামলায় ১৫-১৬ জন শিক্ষক-ছাত্র গুরুতর আহত হয়। এবং সেদিন ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ২টার মধ্যেই সকলকে মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশের সামনেই প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে যায় তারা। জানের নিরাপত্তার শিক্ষরা পুলিশ থাকাকালীন সময়ে মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে আসে। আর ছাত্রদের অভিভাবকরা এসে তাদের সন্তানদের নিয়ে যায়। ফলে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরিক্ষা দেওওয়া হয়নি। এমনকি সরকারী কওমী স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয়াতুল উলইয়ার অংশগ্রহন করা শিক্ষার্থীরাও তাদের পরীক্ষা দিতে পারেনি।
এদিকে পুরো ঘটনার বিবরণ দিতে থানায় মাদ্রাসার ক’য়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করতে গেলে হত্যা মামলার আসামী বলে তাৎক্ষণিকভাব পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে।
গোপনসূত্রে জানা যায়, কমিশনার কফিল উদ্দীন খান মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ওমর ফারুক সওদাগরে কাছে এককোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। তা না হলে মাদ্রাসা করতে দিবে না এবং মাদ্রাসার দখল থেকে ছাড়বে না বলেও হুমকি দেয় তখন।
এরপরই বিষয়টি নিয়ে সামনে আসে অরাজনৈতিক সংগঠন “হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ”। হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা বাবুনগরী ও চট্টগ্রাম মহানগর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি আলহাজ্ব জান্নাতুল ইসলামসহ আরও নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে গত ১৫ মে বুধবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ মাদরাসার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এখন সেখান থেকে নির্দিষ্ট চারটি দাবিসহ সবকিছুর সুষ্ঠু সমাধানের জন্য প্রশাসন ও সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়। আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে আল্টিমেটাম দেন। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর আল্টিমেটামের পর ২৪ ঘন্টা না যেতেই অবৈধ দখলমুক্ত হয়েছে চট্রগ্রামে অক্সিজেনের ওমর ফারুক আল জামিয়া মাদরাসাটি। উগ্রপন্থি মাজারপূজারী চাঁদাবাজদের দখল থেকে প্রশাসনের উপস্থিতিতে ওমর ফারুক আল জামিয়া মাদরাসা ওলামায়ে কেরামের হাতে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এরপর মাদরাসার মসজিদে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী জুমার নামাজ পড়ান। এলাকাবাসী অনেকের সাথে কথা বলে দেখা গেছে তারাও আলহামদুলিল্লাহ স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলেছে।