

ইবনে মুসা
হাফেজ মাওলানা অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দীন; রাজনীতির ডায়েরীতে নতুন ইতিহাস রচনার যোগ্য অংশীদার আপোষহীন এক লড়াকু সৈনিকের নাম। দেশপ্রেমিক মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দীন তাঁর ছাত্রজীবন থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সময়ের পরিক্রমায় যুক্ত হন তৎকালীন “ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন”র সঙ্গে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন শ্লোগান “শুধু ক্ষমতার পালাবদল নয়, চাই আদর্শিক পরিবর্তন” নিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করা সুস্থ রাজনীতির মনীষী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফজলুল করীম পীর সাহেব চরমোনাই রহ. এর ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিভার ডানা মেলে এটিএম হেমায়েত উদ্দীনের।
১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সেই ক্ষুদ্র রাজনৈতিক শক্তিটি আজ বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। দলটির আজকের এই অবস্থানের পেছনে যতজন লড়াকু ও নিবেদিত কর্মীর অবদান রয়েছে, তার মাঝে এটিএম হেমায়েত উদ্দীনের অবদান অনস্বীকার্য৷ তিনি ইসলামী আন্দোলনের রাজনীতির সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে ছিলেন, মনে হতো তাঁর জীবনের লক্ষ্য ও পেশা ইসলামী আন্দোলনই।
ন্যায়ের পক্ষে অন্যায়ের বিরুদ্ধে এটিএম হেমায়েত উদ্দীনের বলিষ্ঠ কণ্ঠ আর প্রতিবাদী শ্লোগান যুগযুগ ধরে স্মরণ রাখবে জাতি। তিনি নতুন প্রচন্মের কাছে রাজনৈতিক মডেল হিসেবে মূল্যায়িত। তাঁর রক্তে প্রতিবাদের বারুদ এতটাই জাগ্রত ছিল, অন্যায়বিরোধী শ্লোগানের সর্বাগ্রে দেখা যেত এটিএম হেমায়েত উদ্দীনকে।
কথিত আছে, একটি রাজনৈতিক দল কোনো একটি অন্যায়ের প্রতিবাদে রাজপথে মিছিল করছিল, কিন্তু তাদের মাঝে প্রতিবাদী ও রক্ত শিহরিত শ্লোগানের কেউ ছিল না। ঘটনাক্রমে এটিএম হেমায়েত উদ্দীন রিকশা করে সেই পথ দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন, ঐ প্রতিবাদী দলটির এমন অবস্থা দেখে রিকশা থেকে নেমে তিনিই শ্লোগান ধরেন! অনেকে বলেন, শ্লোগানের আওয়াজ শুনলে হেমায়েত ভাই নিজেকে ধরে রাখতে পারেন না! তাঁর পুরো দেহ ও হৃদয়জুড়ে ইসলামী রাজনীতি ও প্রতিবাদের স্রোতধারা বহে। প্রতিটি রক্তকণায় মিশে আছে দেশপ্রেম ইসলাম আর রাষ্ট্রবিনির্মাণের স্বপ্ন। নির্মল আদর্শের অকুতোভয় এক সৈনিকের নাম হাফেজ মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দীন।
যাঁর সারাটা জীবন জাতির কল্যাণে ব্যয় করেছেন। পীর সাহেব চরমেনাই রহ. এর ডানহাত হয়ে ইসলামী রাজনীতিতে জীবন বিলিয়েছেন চাওয়া-পাওয়ার হিসেব-নিকেশ মিলানো ছাড়াই। সভা, সমাবেশ, সেমিনার, মিছিল-মিটিং প্রতিবাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে।
আজ তিনি শয্যাশায়ী। জীবনের পড়ন্তবেলায় অসুস্থ শরীর নিয়েও মাঝে মাঝে পাগলের মতো ছুটে আসেন রাজপথে। এই তো সেদিন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পাওয়া ইসলামী আন্দোলনের জাতীয় মহাসমাবেশে তপ্ত ভাষণে জাতিকে জাগ্রত করেছেন আরও একবার। তাঁর বক্তব্য ও বজ্রকণ্ঠ বাংলাদেশে অদ্বিতীয় বললেও ভুল হবে না।
ইসলামী রাজনীতির এই প্রাণপুরুষ প্রিয় হেমায়েত ভাই মরণব্যধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন দীর্ঘ কয়েকমাস যাবৎ। বিছানা থেকেই চোখের পানিতে আফসোস জানাচ্ছেন জাতির অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামে সময় দিতে পারছেন না বলে। ইসলামী আন্দোলনের লক্ষ লক্ষ শুভাকাঙ্ক্ষীরাও চরম মিস করছেন তাঁকে।
তিনি বক্তব্যের শেষে বলতেন, আবার দেখা হবে আন্দোলন, সংগ্রাম, প্রতিবাদ আর রাজপথে; কথা হবে সভা, সেমিনার সমাবেশ আর মিছিলে। আজ সেই তাকে রাজপথে বড্ড প্রয়োজন। লক্ষ প্রাণের প্রিয় মানুষ হেমায়েত ভাই সুস্থ হয়ে আবার ফিরে আসুক বাংলার রাজপথে। বজ্রকণ্ঠে কাঁপিয়ে তুলুক অত্যাচারির মসনদ। প্রিয় হেমায়েত ভাই! আপনার পথ চেয়ে অসংখ্য অনুরাগী…