

মঈনুল ইসলাম, ঢাবি
“ছাত্রলীগের একটি ছেলে, আওয়ামী লীগের একটি লোক, অন্যায়ভাবে মারা গেলে, আপনি তাদের ভুলগুলির কথা বলতে পারেন। কিন্তু, ইকরামের মরনে যদি আপনি উল্লসিত হন, কিংবা ঢাবির কোন ছাত্রলীগ কর্মীর মরনে যদি আপনার অন্তরে বিকৃত খুশির আমেজ তৈরি হয়, সরি বস। আপনি ভবিষ্যত ছাত্রলীগ। আপনার বিরুদ্ধেও সাধারণ মানুশের লড়াই চলবে।”
ছাত্রলীগ এই জাতিরে কম ভোগায় নাই বিগত বছরগুলিতে। চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণ, খুন, কোপানো, প্রশ্নফাঁস, মধ্যবিত্ত মানুশের একান্তই ব্যক্তিগত স্বার্থজাত আন্দোলনের বিপক্ষে দাঁড়ানো, এমনকি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলা ও গুলি চালানো—হেন কোন কাজ নাই, যা বিগত দিনগুলাতে ছাত্রলীগ করে নাই। ছাত্রলীগ সম্ভবত তার মাদারপার্টির পক্ষেও বার্ডেন হয়া উঠতেছে, যা বিগত দিনগুলিতে কিছুমাত্রায় পষ্ট হইছে, সামনে আরো হবে।
প্রত্যেকরে পাপের ফল ভোগ করতে হয়। ছাত্রলীগের এইসব কর্মকাণ্ডে লোকজন আজ তাদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ। কিন্তু ঘেন্না ও বিদ্বেষ, প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসা মানুশরে কখনোই সঠিক কথাটা কইতে দেয় না, সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে দেয় না। প্রত্যেকটা বিপ্লবের গর্ভে প্রতিবিপ্লব এজন্যেই লুকায়ে থাকে। ঘেন্না, দ্বেষ, প্রতিহিংসা আর প্রতিশোধপরায়ণতা ধর্ম, জাত ইত্যাদির নাম নিয়া যুগে যুগে ফ্যাসিবাদ তৈরি করে। এক যুগের প্রতিবাদী ও শোষিতেরা হন আরেক যুগের অত্যাচারী ও শোষক। পৃথিবীতে ক্রমাগত হলোকাস্ট আর ফিলিস্তিনের রিসাইক্লিং হইতে থাকে।
এখন দ্যাখেন, গাছ থেকে ডাব পাড়তে গিয়া একটা ছেলে মারা গেছে৷ এই ঘটনায় ছাত্রলীগের দায় কতটুকু? হলে থাকার সুবাদে আমি জানি, রাতে ক্যাম্পাসে ঘুইরা ঘুইরা ডাব খাওয়া একটা গেস্টরুমজাত ব্যাপার হইলেও, এইখানে ছেলেদের অংশগ্রহণ স্বতঃস্ফূর্ত। কেউ তাদের জোর কইরা গাছে উঠায় না, বা গাছে ওঠার জন্য তাদের কোন পলিটিকাল প্রেশার দেওয়া হয় না৷ এইটা খুবই স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাপার। তাছাড়া, গাছ থেকে ফল পাইড়া খাওয়া—এইটা আমাদের সমাজের খুব কমন এবং মজার একটা প্রাক্টিস। এইটার পেছনে কোন রাজনৈতিক ব্যাপার নাই তো।
কিন্তু লোকজন, বিভিন্ন পত্রিকার নিউজ পোস্টে’র কমেন্ট সেকশনে দেখলাম, যা তা ভাষায় ছেলেটিরে গালিগালাজ করতেছে। তারে ছাত্রলীগের কর্মী হিশাবে নানান গালিগালাজ ও বুলিং করতেছে তারা। এদের এইসব কথাবার্তা বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকের ভাল লাগতেও পারে, কিন্তু বোঝার কথাটি হইল, এইসব লোকেদের ভিতরেই লুকায়ে আছে পরবর্তী ফ্যাসিবাদের বীজ।
যে ছেলেটিরে তারা ছাত্রলীগ করার মত ‘প্রাণঘাতী অপরাধ’-এ দণ্ডিত করতেছে, সেই ছেলেটা আসলে ছাত্রলীগ করত কী? ধরলাম করত। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকা প্রতিটি ছাত্ররই প্রত্যক্ষ/পরোক্ষভাবে ছাত্রলীগ করতে হয়—এই সরল সত্যটি কি ওই লোকেরা জানেন না? গ্রাম থেকে শহরে পড়তে আসা একটা ছেলের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামের অংশ হইল ছাত্রলীগ করা। এই সোশাল সিস্টেম বাঙলাদেশের ১৮ কোটি মানুশের তৈয়ার করা হাতের কামাই। এখন, সেই ছেলেটারে যদি আপনি বুলিং করেন, আর এই গোটা সমাজব্যবস্থা, রাজনীতি বা রাষ্ট্রনীতির প্রশ্নরে অ্যাড্রেস করতে না পারেন, তাইলে আপনার ভিতরেও ফ্যাসিবাদ ও শ্রেণীঘেন্না বিদ্যমান। আপনিই আগামীর ফ্যাসিবাদ।
ছাত্রলীগের একটি ছেলে, আওয়ামী লীগের একটি লোক, অন্যায়ভাবে মারা গেলে, আপনি তাদের ভুলগুলির কথা বলতে পারেন। কিন্তু, ইকরামের মরনে যদি আপনি উল্লসিত হন, কিংবা ঢাবির কোন ছাত্রলীগ কর্মীর মরনে যদি আপনার অন্তরে বিকৃত খুশির আমেজ তৈরি হয়, সরি বস। আপনি ভবিষ্যত ছাত্রলীগ। আপনার বিরুদ্ধেও সাধারণ মানুশের লড়াই চলবে।