এলো মুক্তির মাস; মাহে রমজান

প্রকাশিত: ৭:৩৯ অপরাহ্ণ, মে ৫, ২০১৯

শাইখ মাহমূদ হাসান

মহান আল্লাহ তায়ালা গণনার সুবিধার্থে মানবজাতিকে এমন বারটি মাস দান করেছেন যার প্রত্যেকটিই ভিন্ন ভিন্ন মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। তন্মধ্যে পবিত্র রমজান গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। এ মাসের প্রতিটি দিন-রাত অন্যান্য মাসের দিন-রাত থেকে সম্পূর্ণ পৃথক ও আলাদা।


এ মাসে সমস্ত নবীগণের উপর আসমানী বড় বড় কিতাব ও ছোট ছোট সহীফাসমূহ নাযিল হয়েছে। বিশেষত এ মাসে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে ঐশীগ্রন্থ পবিত্র কুরআন মাজীদ। যা সকল জিন ইনসানের জন্য পথ প্রদর্শক। যা মানুষকে অন্ধকার হতে আলোর পথে পরিচালিত করে। যা পাঠ করলে এক অক্ষরে দশ নেকী হয়। আর পবিত্র রমজান মাসে এমন এক রজনী রয়েছে যা হাজার মাস থেকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম।

এমন মর্যাদাপূর্ণ মাসের বাঁকা চাঁদ দেখা গেছে আজ।  সবার হৃদয়ে দোলা দিচ্ছে নতুন এক আনন্দের। আজ থেকে সিক্ত হবে সবকিছু রহমতের বারিধারায়। বন্ধ হবে জাহান্নামের দরজা। খুলবে জান্নাতের দুয়ার। শৃঙ্খলাবদ্ধ হবে অভিশপ্ত শয়তান। ভাল ও নেক কাজ করার জন্য মানুষকে দান করা হবে খোদায়ী বিশেষ তাওফিক। শুরু হবে রহমত বরকত ও নাজাতের রমজান। বেনামাযী নামায পড়বে। রোজাদার রোজা রাখবে। আল্লাহভোলা বান্দা আল্লাহকে পেতে মেহনত করবে। কেউ আবার তাকওয়ার মতো মহান দৌলত পেতে প্রভুর দরবারে নিজেকে পূর্ণরূপে সঁপে দিবে।

পবিত্র এই মাহে রমজান বান্দাকে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক তৈরি করে দেয়। গোলামকে তাঁর মনিবের পরিচয় লাভে ধন্য করে। মানুষকে আল্লাহর ইবাদাত- বন্দেগী করতে উৎসাহিত করে। এক কথায় রমজান স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে সম্পর্ক গড়ার এক সেতু বন্ধন। তাই তো বরকতময় রমজানের নিয়ামতরাজী পেতে মানুষ সদা ব্যাকুল থাকে। আর খোদার দরবারে প্রত্যেক ওয়াক্ত দু’হাত তুলে মিনতি করে বলে, হে দয়াময় প্রভু! আপনি আমাদের রজব ও শাবান মাসের বরকত দান করেন। এবং আমাদের দীর্ঘ হায়াত দান করে আগত রমজান মাসে পৌঁছে দিন।

পবিত্র রমজান রোজার মাস। সিয়াম সাধনার মাস। ইবাদাত- বন্দেগীর এক মৌসুম। বান্দার জন্য প্রভুর যিকির ও তাঁর ধ্যানে কাটানোর মাস। নিজেকে গোনাহ থেকে পবিত্র করার অনন্য মাধ্যম রমজান। রমজান কুরআন তেলাওয়াত ও তাকওয়া অর্জনের মাস। কিন্তু শত আফসোস এ কারণে যে, পবিত্র এ মাসকে মানুষ শুধু আহলান- সাহলান জানিয়েই বিদায় দেয়। আর এ মাসে নিজের জীবনকে ধর্ম ও ঈমানের আলোতে আলোকিত করে না। বরং পূর্বেকার মতো এমাসও অবহেলায় কাটিয়ে দেয়। তথাপি তওবকারীদের জন্য রমজান উপলক্ষে জীবনযাত্রায় ঈমান আমলের ময়দানে নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে পবিত্র রমজানের সবচেয়ে বড় শিক্ষা ও দিক্ষা। তাই রমজান মাসে নিজেকে গড়তে হলে এখন থেকেই নিজের মধ্যে পবিত্র মন মানসিকতা লালন করতে হবে। নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে এখন থেকে একটু ভিন্নরূপে। আর আগত রমজানের একটি রোজাও যেন না ছুটে সেজন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। সর্বস্ব বিলিয়ে রমজানের প্রত্যেকটা রোজা যেন রাখা যায় তেমন তৈয়ার এখন থেকেই নিতে হবে।

পবিত্র রমজান মাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হলো রোজা। সিয়াম সাধনায় ব্যস্ত থাকা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পাশাপাশি বিশ রাকাত তারাবীসহ অন্যান্য নফল নামায পড়া। সিয়াম সাধনা ও রোজার বিনিময়ে পরকালে আল্লাহর নিজ হাতে দেওয়া জান্নাতি পুরুস্কার পেতে হলে বর্জন করতে হবে প্রত্যেক রোজাদারকে অশ্লীলতা, গীবত, মিথ্যা, অহেতুক কথা ও কাজ এবং টিভি সিনেমাসহ সর্বপ্রকার গোনাহের বিষয়। এমনকি রোজা ভঙ্গের কারণসমূহ থেকেও বিরত থাকতে হবে। কারণ পাপী রোজাদার সারাদিন ক্ষুধার্থের মতো উপবাস থাকা ছাড়া আর কিছু করে না। ফলে বাস্তবিকপক্ষে পবিত্র রমজান ও রোজার রহমত, বরকত ও ফযিলত পেতে হলে নিজের নফস এবং কূপ্রবৃত্তিকে শরীকহীন এক প্রভুর হুকুম-আহকামের সামনে অবশ্যই মাটি চাপা দিতে হবে। এবং আল্লাহর দেওয়া বিধান মোতাবেক নিজের জীবন গড়তে রমজানে সাধনা করতে হবে। সাধ্যানুযায়ী মুখে কুরআন তিলাওয়াত ও অন্তরে মাওলার যিকির জারি রাখতে হবে। এমনকি রমজানের প্রতিটা মূহুর্তই আল্লাহর ধ্যানে থাকা চাই। নিজের আচার- ব্যবহারে কারো যেন কোনো কষ্ট ও ক্ষতি না হয় সে দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। মহিমান্বিত রমজানে নিজের সামর্থ্যানুযায়ী আল্লাহর রাস্তায় দান- সদকা করতে হবে।

দিনে যেমন রোজা রাখতে হবে ঠিক তেমনি রাতেও বিশ রাকাত তারাবী পড়তে হবে। অতএব, আল্লাহ তায়ালার দরবারে অধমের প্রার্থনা এই যে, তিনি যেন সকল মুসলমান নর-নারীকে আগত মাহে রমজানে কুরআন তেলাওয়াত, যিকির-আযকার ও সবসময় তাঁর ইবাদাতে লিপ্ত থেকে রমজান মাস অতিবাহিত করা ও পবিত্র রমজানে সকল প্রকার গুনাহ থেকে বিরত থেকে প্রত্যেকটি রোজা রাখার তাওফীক দানে আমাদের সবাইকে ধন্য করেন। আমীন, ইয়া রাব্বে করীম।

লেখক: মুফতি ও নাযেমে দারুল ইকামা
জামিয়া আরাবিয়া শামসুল উলূম খিলগাঁও ঢাকা

মন্তব্য করুন