আমরা হাইয়াতুল উলয়ার বিপক্ষে নই, আমরা এক ও অভিন্ন : সিলেট এদারা মহাসচিব

প্রকাশিত: ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৬, ২০১৯
হাইয়াতুল উলয়া, সিলেট এদারা
  • হাইয়াতুল উলয়া আমাদের প্রাণের বোর্ড।
  • কওমী মাদরাসার উন্নতিকল্পে হাইয়াতুল উলয়া কাজ করে যাচ্ছে।
  • ছাত্রদের দিকে তাঁকিয়েই আমাদের এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিলো।
  • আমরা সব সময়ই হাইয়াতুল উলয়ার সঙ্গে আছি।

মাও. আ. বসির, সিলেট এদারা মহাসচিব।


কওমী মাদারাসার সিলেটের আঞ্চলিক বোর্ড “আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তালিম বাংলাদেশ”র মহাসচিব মাও. আ. বসির বলেছেন, ‘হাইয়াতুল উলয়া আমাদের নিজেদের বোর্ড এবং আমরা হাইয়াতুল উলয়ার পরিপূরক, বর্তমান সংকটময় সময়ে আমরা হাইয়াতুল উলয়ার বিপক্ষে নই এবং আমাদের এই প্রাণের বোর্ডের প্রতি আমাদের কোনো রাগ-ক্ষোভ নেই” তবে আমরা একান্ত অপারগ হয়ে কিছু ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিলাম যা কোনওভাবেই হাইয়াতুল উলয়ার বিপক্ষে ছিলো না।

সম্প্রতি পরপর দুইবার হাইয়াতুল উলয়ার কেন্দ্রীয় পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হওয়ার ঘটনায় সৃষ্ট উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে সিলেটের এই আঞ্চলিক বোর্ড পরবর্তি পরীক্ষাগুলোর বিষয়ে হাইয়ার অধিনে না থেকে নিজেদের বোর্ড কর্তৃক প্রণীত প্রশ্নপত্র ও রুটিনে আলাদা করে দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত বিষয়ে পাবলিক ভয়েসের সাথে একান্ত আলাপকালে ইদারা বোর্ডের মহাসচিব আ. বসির এসব কথা বলেন।

এর আগে এদারা বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা এদারা প্রণীত প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে তাকমীল ফিল হাদীসের পরীক্ষা পৃথকভাবে নিতে যাচ্ছে। তাদের একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,

“এতদ্বারা আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তালিম বাংলাদেশের সকল দাওরায়ে হাদীস মাদরাসার মুহতামিম সাহেবান, নাযিমে মারকায, মুহাফিজ ও পরীক্ষার্থীদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে দাওরায়ে হাদীসের চলমান পরীক্ষা নিয়ে উদ্ভুধ পরিস্থিতির কারণে এদারারার জরুরি মজলিসে আমেলা নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আগামীকাল (শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল) হতে এদারা প্রণীত প্রশ্নের মাধ্যমে পূর্বের রুটিন অনুযায়ী পরীক্ষা চলবে। ১লা মে বুধবার বিরতির দিনে আজকের স্থগিত বিষয় আবু দাউদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদিন সকাল ৯.৩০ টা থেকে ১টা পর্যন্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১২.৩০টা পর্যন্ত পরীক্ষা হবে। উল্লেখ্য যে ইতিমধ্যে অনুষ্ঠিত বোখারি ২য় ও তিরমিজী ১ম খন্ডের পরীক্ষা বহাল থাকবে।”

এই ঘোষণার পর বিভিন্ন নাটকীয়তা ও আলোচনা শেষে এদারা বোর্ড থেকে আবার ঘোষণা আসে যে, “তারা পরীক্ষা বিষয়ে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে এবং হাইয়াতুল উলয়ার অধিনেই তাদের সিদ্ধান্তক্রমে পরবর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে এদারার ওয়েবসাইটে একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়-

এতদ্বারা সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আযাদ দ্বীনী এদারার মুহতারাম সদর শায়খ জিয়াউদ্দীন সাহেব এবং সিনিয়র নায়বে সদর শায়খ মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী সাহেব এর সিদ্ধান্তক্রমে তাকমীলের পরীক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত এদারার পূর্ববর্তী ঘোষণা প্রত্যাহার করা হলো। অতএব হাইয়াতুল উলয়ার ঘোষণা অনুযায়ী দাওরায়ে হাদীসের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

তাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মতামত ও ঘোষণা আসার পর কিছু নেতিবাচক মন্তব্য এবং সিলেট এদারা বোর্ডকে হাইয়াতুল উলয়ার বিপক্ষে দাড় করানোর কিছু প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হওয়ার পর এসব বিষয়ে এদারার মহাসচিবের সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন,

“হাইয়াতুল উলয়া কর্তৃপক্ষের মধ্যে আমিও একজন। সিলেট বোর্ডের মহাসচিব হিসেবে পদাধিকার বলে আমিও হাইয়াতুল উলয়ার মহাসচিব। হাইয়াতুল উলয়া আমাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের একটি প্রাণের বোর্ড। কওমী মাদরাসার সার্বিক উন্নতিকল্পেই এ বোর্ডের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এখানে এ বোর্ডের মধ্যে ফাঁটল সৃষ্টি করাসহ কিছু সমস্যা তৈরির জন্য ভিন্ন কোনো মহল থেকে কিছু ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। কিন্তু আমাদের মধ্যাকার বর্তমান এই প্রশ্নফাঁসসহ কিছু অনিয়মের ব্যাপারে আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নেবো এবং হাইয়াতুল উলয়াকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জোর প্রচেষ্টা চালাবো।

“তাহলে আপনারা কেনো আলাদাভাবে পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন” এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরপর দুইবার প্রশ্নফাঁসের পর ছাত্রদের মধ্যে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সেখান থেকে উত্তরণের জন্য আমরা আলাদা কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলাম যা কোনওভাবেই যাতে হাইয়াতুল উলয়ার বিপক্ষে না যায় সেদিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি ছিলো। সিলেট এদারা বোর্ড কর্তৃক প্রণীত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও আমরা হাইয়াতুল উলয়ার সাথে সম্মিলিত যোগাযোগ করেছি। কিন্তু দ্বিতীয়বার প্রশ্নফাঁসের পর পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের যে পরবর্তি পদক্ষেপ তা মেনে পরীক্ষা নেওয়া আমাদের জন্য অনেকটাই সময়সাপেক্ষ এবং সেভাবে পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি করবে বলে আমাদের মনে হয়েছিলো। এছাড়া সিস্টেমগত কিছু সমস্যাও আমাদের রয়েছে। যেসব কারণে হাইয়াতুল উলয়ার পরীক্ষানীতি অনুসরণ করেই আমরা আমাদের বোর্ড প্রণীত প্রশ্ন ও রুটিনের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলাম যা পরবর্তিতে বৃহৎ স্বার্থের দিকে তাঁকিয়ে পরিবর্তন করেছি এবং হাইয়াতুল উলয়ার সিদ্ধান্ত্রক্রমেই পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, “আমাদেরকে কেউ হাইয়াতুল উলয়ার বিপক্ষে দাড় করাবেন না এবং আমরা হাইয়াতুল উলয়া ছেড়েও যাইনি এ কথা স্পষ্ট আকারে বলতে চাই আমরা” কেবল অপারগ হয়ে ছাত্রদের ভবিষ্যত চিন্তা করে পরীক্ষা বিষয়ে আমরা ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। “কিছু সার্বিক সমস্যা রয়েছে যেসব কারণে পরীক্ষা বিষয়ে আমরা অপেক্ষমান থাকতে চাচ্ছিলাম না বলেই আলাদা করে পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা করতে হয়েছিলো” এবং তিনি হাইয়াতুল উলয়াকে যাতে আল্লাহ তায়ালা নিজহাতে রক্ষা করেন সকল সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে পারে এজন্য সবার দোয়া কামনা করেছেন।

প্রসঙ্গত : কওমী মাদরাসা শিক্ষার সর্বোচ্চস্থর দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স সমমানের স্বীকৃতি দেওয়ার পর কওমী মাদরাসার দাওরায়ে হাদীসের সকল বোর্ডগুলো একত্রিত করে আল হাইয়াতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমীয়া নামে বোর্ড গঠন করা হয়। যে বোর্ডের অধিনে এ বছরই প্রথমবারের মতো দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমবার পরীক্ষা চলাচালিন চারটি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর প্রশ্নফাঁসের সংবাদ প্রকাশ হয় এবং সকল পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তখন কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের ফযিলত বিভাগেরও প্রশ্নফাঁস হয় এবং পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করা হয়। এরপর ২৩ এপ্রিল নতুন করে উভয় বোর্ডেরই পরীক্ষা শুরু হওয়ার দুইদিন পর আবারও দাওরায়ে হাদিসের প্রশ্নফাঁসের ঘটনা প্রকাশ হয় এবং ২৫ এপ্রিলের পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করা হয়। পরপর দুইবার পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় হাইয়াতুল উলয়ার ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠে এবং সিলেট এদারা বোর্ড আলাদাভাবে পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলো।

উল্লেখ্য, কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের প্রথমবারের পরীক্ষা ৮ এপ্রিল শুরু হয়েছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৮ এপ্রিল। পরবর্তিতে নতুন রুটিনে ২৩ এপ্রিল থেকে পরীক্ষা শুরু হয়ে ৩ মে পর্যন্ত পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করা হয়। আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীনে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৬টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে মোট ২৬ হাজার ৭২১ জন শিক্ষার্থী এ বছর পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।

হাইয়াতুল উলইয়ার অধীনে ৬টি শিক্ষা বোর্ড হলো- বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ, বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা বাংলাদেশ, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ, আজাদ দ্বীনি এদারায়ে তালিম বাংলাদেশ, তানজিমুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়া বাংলাদেশ এবং জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড।

এর আগে জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশনে ১৯ সেপ্টেম্বর ‘কওমি মাদরাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমিল)-এর সনদকে আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীনে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান বিল ২০১৮’ পাস হয়।

© এইচআরআর/পাবলিক ভয়েস

নিউজটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন