
ঝিনাইদহে গত তিন দিনে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে একজনকে গুলি করে, একজনকে কুড়াল দিয়ে, সড়ক দুর্ঘটনায় চারজন এবং মায়ের চড়ের আঘাতে মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া স্বামী শাশুড়ির নির্যাতনে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ ও পরিবারের সদস্যদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার গোয়াল খালি গ্রামে স্বামী শাশুড়ির নির্যাতনে গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা না নেয়ার প্রতিবাদে আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে লাশ নিয়ে ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়ক অবরোধ করে নিহতের স্বজনরা।
স্বজনদের অভিযোগ, প্রেম করে প্রায় এক বছর আগে উপজেলার গোয়ালখালি গ্রামের ফিরোজ হোসেনের মেয়ে সোনিয়ার বিয়ে হয় একই গ্রামের বাদশা হোসেনের ছেলে সজিবের সঙ্গে। বিয়ের পর থেকে সোনিয়াকে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করে আসছিল শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
এরই জের ধরে গতকাল রোববার সকালে সোনিয়াকে হত্যা করে গলায় ওড়না দিয়ে ঘরে ঝুলিয়ে রেখে তালা দিয়ে পলিয়ে যায় পরিবারের লোকজন। এ ঘটনায় পরিবারের লোকজন থানায় হত্যা মামলা দিতে গেলে পুলিশ মামলা গ্রহণ না করে অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করে।
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শৈলকুপ সার্কেল) তারেক আল মেহেদি বলেন, গতকাল সোনিয়া আত্মহত্যা করেছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে। সোনিয়ার একটি ডায়রি পাওয়া গেছে সেখানে উল্লেখ আছে তার মৃত্যুর জন্য কে কে দায়ী?
তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে হত্যার বিষয় এলে হত্যা মামলা, আর আত্মহত্যার রিপোর্ট এলে আত্মহত্যার প্ররোচণার মামলা নেয়া হবে।
আজ সোমবার দুপুরে ট্রাকের ধাক্কায় সুমি (৩২) নামের এক নারী নিহত হয়েছেন। ঝিনাইদহ শহরের কুষ্টিয়া সড়কের ক্যাডেট কলেজের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সুমি জেলার শৈলকুপা উপজেলার ডাঙ্গিপাড়া গ্রামের বাবু মিয়ার স্ত্রী।
গত রোববার রাতে ঝড়ের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় শাহিনুর ইসলাম লিখন (৩২) নামে এক যুবক নিহত হয়। লিখন নারায়ণগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসের সহকারী ছিলেন। তিনি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কাশিপুর গ্রামের স্কুলশিক্ষক মতলেবুর রহমানের ছেলে। রোববার রাতে লিখন মোটরসাইকেলে ঝিনাইদহ শহরের যাওয়ার পথে চুয়াডাঙ্গা সড়কের সাগান্না আমেরচারা নামক স্থানে পৌঁছালে একটি বাইসাইকেলের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
একই দিন সকালে ভাত না খেতে চাওয়ায় জান্নাতুল নামে ছয় বছর বয়সী মেয়েকে থাপ্পড় মারে তার মা। এতেই মেয়ের মৃত্যু হয়। ঘটনাটি ঝিনাইদহের শৈলকুপা পৌরসভাধীন ৫নং ওয়ার্ডের হাজাম পাড়ার। নিহত শিশুটির বাবা বকুল হোসেন এবং মা আলেয়া বেগম।
মেয়ে হত্যার অভিযোগে মা আলেয়া বেগমকে আটক করেছে পুলিশ। জান্নাতুল বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে ছিল। ঘটনার দিন সকালে ভাত খেতে দেয় একমাত্র মেয়ে জান্নাতুলকে। খেতে না চাইলে প্রথমে তাকে থাপ্পর মারে। এরপর লাথি দিয়ে ঘরের বারান্দা থেকে নিচে ফেলে দেয়। এক পর্যায়ে শিশুটির মুখে জোর করে ভাত ঠেলে দিয়ে কাঠের পিড়ি দিয়ে আঘাত করে। এতে তার মৃত্যু হয়।
রোববার রাতে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার চরবাখরবা গ্রামে বড় ভাইয়ের কুড়ালের আঘাতে ছোট ভাই আব্দুল মালেক (৪২) নিহত হয়েছেন। নিহত আব্দুল মালেক ওই গ্রামের মোশাররফ হোসেনের ছেলে।
জমি ভাগাভাগি নিয়ে গেল শনিবার পারিবারিক শালিশ বৈঠকে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে বড় ভাই আব্দুল খালেক কুড়াল দিয়ে ছোট ভাইকে কুপিয়ে জখম করে। গুরুতর আহত অবস্থায় মালেককে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার রাতে তার মৃত্যু হয়। একই দিন সকালে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় বালির ট্রাক চাপায় দবির উদ্দীন (৭০) নামে এক পিয়াজ ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে।
রোববার সকালে উপজেলার কাতলাগাড়ী নামক স্থানে এ দুর্ঘটানা ঘটে। দবির উদ্দীন শৈলকুপা উপজেলার বেড়বাড়ীয়া গ্রামের মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা রোজদার আলীর ছেলে।
এছাড়া ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ট্রাকের ধাক্কায় বশির আলী (৪৮) নামে এক ভ্যানচালকের মৃত্যু হয়। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ভাটই বাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত বশির শৈলকুপা উপজেলার দুধসর গ্রামের মকসেদ আলীর ছেলে।
এদিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার জামিরুল ইসলাম (৩৯) নামে এক হার্ডওয়ার ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে সদর উপজেলার আটলিয়া-কুবিরখালী মাঠ এলাকায় খালের ধারে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে তাকে।
নিহত জামিরুল ইসলাম মধুহাটি ইউনিয়নের কুবিরখালি গ্রামের মসজিদপাড়ার মজনুর রহমানে ছেলে। তিনি একজন হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী ছিলেন। এছাড়া তিনি স্থানীয় যুবলীগের সক্রিয় কর্মী ছিল বলেও পুলিশ জানিয়েছে।
জিআরিএস/পাবলিক ভয়েস

