দেশে যৌন সন্ত্রাস এখন মহামারীর রূপ নিয়েছে। আসলে এটা সব সময়ই ছিল। বর্তমানে সীমা ক্রস করেছে আর কি! শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌনতা বহু আগ থেকে চলে আসা একটি ব্যাধি। প্রাইমারী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্র ছাত্রীরা যৌন হয়রানিতে পড়ে। হয় সহপাঠী, নয় শিক্ষক দ্বারা এটা ঘটে। এ তালিকায় মাদ্রাসাও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক দ্বারা ছাত্রীকে বউর মত ইউজ করা হরহামেশা চলছে। উন্নত ক্যারিয়ারের স্বপ্ন থাকে কতক ছাত্রীর। সেটা সম্ভব হয় ভাল রেজাল্টের দ্বারা। আর কাঙ্খিত রেজাল্ট পেতে সে অপেক্ষাকৃত তরুন শিক্ষকের নিকট নিজেকে সঁপে দেয়। এসব উচ্চাভিলাষী ছাত্রীরা প্রলোভনে পড়ে স্যারের নিবিড় সান্নিধ্যে চলে যায়। উভয়েই জানে, এটা যাস্ট গিভ এন্ড টেক।
কতক ছাত্রী যখন আবার বিয়ের দাবীটা সামনে নিয়ে আসে তখন ক্যারাবেরা লাগে, সে উর্ধ্বতন মহলে দরখাস্ত দেয়। অতঃপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্তে নামে। এখানেও রাজনীতি আছে। অভিযুক্ত শিক্ষক যদি সরকার দলীয় রাজনীতির কেউকেটা হন, তাহলে তদন্ত হয় ঢিলেঢালা, সহজে অভিযুক্ত হয়না। আর সে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমর্থক হলে তদন্ত ঘোড়ার মত দৌড়ায় তখন। অতঃপর দোষী সাব্যস্ত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এখানেও সুবিধা আছে, কাউকে জেলে যেতে হয় না। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটা সম্মাণ আছে না!
দেশের কোন না কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর সাথে শিক্ষকের যৌন নির্যাতনের অভিযোগে তদন্ত চলমান আছে। থানা পুলিশ না হলে এটা বাইরে প্রচার হয় না। আর ছাত্রীর পরিচয় গোপন রাখা হয়। তাই এর ভয়াবহতা সবটা জানিনা।
সাংবাদিক আমিরুল মোমেনিন মানিক একটা বই লিখেছিলেন, অনেক আগে পড়েছিলাম। যা শুধু মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দূর্নীতি ও যৌন সন্ত্রাসের কাহিনী নিয়ে। বইটার নাম দিয়েছিলেন, ‘স্টুপিড টিচার্স’। তিনি বইটিতে কয়েকজন ভার্সিটি টিচারের অধঃপতিত চরিত্র উন্মোচন করেছিলেন। ওটা সিরিজ আকারে প্রকাশ করলে মন্দ হতো না।
শিক্ষাঙ্গনে যৌন নিপীড়নের ইতিহাসে মাদরাসার নামও যুক্ত হয়েছে, মাশাআল্লাহ। মাদরাসা শিক্ষকরাও বসে নেই। সোনাগাজীর সিরাজুদ্দৌলা তো এখন মার্কা মারা। বলদাটায় দেশের আলেম সমাজের ইজ্জত শেষ করে দিয়েছে। সে নিজের অপকর্ম ঢাকার জন্য মাদরাসার শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, কমিটি, থানার ওসি, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনকে ব্যবহার করেও রক্ষা পায়নি। নির্যাতিতা মেয়েটা কেন থানায় অভিযোগ করলো এবং এরফলে সে কেন আটক হলো, তার বদলা নিতে নুসরাতকে জানে মেরে ফেলতে তার শরীরে এক লিটার কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়েছে। পাঁচদিন অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করার পর তাঁর মৃত্যু ঘটেছে। এ ঘটনায় সে আরো আটকে গেলো। এখন তার জন্য ফাঁসির ম্যানিলা রোপ অপেক্ষা করছে যদ্বারা সে ঝুলবে।
মাদরাসায় যৌন নির্যাতনের ঘটনা যথেষ্ট এলার্মিং। ওখানে ইসলামী আদর্শ শিক্ষা দেয়া হয়, সেখানে যদি যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে, তাহলে বলতে হবে ওখান থেকে পাশবিকতা দূর হয় নাই। কিছু আলেম নামের মানুষগুলো পশুই রয়ে গেছে। স্কুল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে কুরআন হাদীস শিক্ষা দেয়া হয়না। দিলেও তা কিঞ্চিত পরিমানে। সেখানে নীতি নৈতিকতা ও আদর্শ চরিত্র গঠনের পাঠ দেয়া হয়। ওখানে ছাত্রীদের প্রতি কতক শিক্ষকের যৌন আচরণ যেন গা সওয়া হয়ে গেছে। ঐ সব প্রতিষ্ঠানে মেয়েরা পড়তে যাবে, আর তাদের কুমারীত্বের বাঁধন ছিঁড়বে না! এটাই যেন এখনকার বাস্তবতা।
এসব কেন ঘটে? এক কথায় জবাব হলো- সুযোগ পায় বলে। দেশে আজ যদি ধর্ষণের কঠিন শাস্তি বহাল থাকতো, তাহলে এটা হতো না বা কম হতো। আইন থাকলেই হবে না। এটার প্রয়োগ হতে হবে। ধর্ষণের শিকার মেয়েটি আইনের কাছে বারবার ধর্ষিতা হয়। ধর্ষণ হয়েছে কিনা সেটা পরীক্ষার জন্য তাকে আবার পাজামা খুলতে হয়। টু ফিঙ্গার টেস্টের সন্মুখীন হতে হয়। কেমনে ধর্ষন করেছে সেটা আবার মুখে বলতে হয়, থানা পুলিশ, তদন্ত কমিটি ও আদালতের এজলাসে দাঁড়িয়ে। এত সব হয়রানী শেষে ভিক্টিম ন্যায় বিচার পায়না। আইনের ফাঁক গলিয়ে ধর্ষকরা বের হয়ে যায়, অথবা কয়েক বছর জেল খেটে আবার বেরিয়ে পড়ে।
সুতরাং ধর্ষন যারা করে, তারা বিচলিত হয়না। একটি ধর্ষন কান্ড অপরের জন্য শিক্ষামূলক হয়না, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটা ছাত্রী নিপীড়নের বিষয়টি তো মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং। এটা বাইরে ফ্লাশ হয়না। শতকরা দশ পার্সেন্টও না। সুতরাং সহজেই অনুমেয়।
যৌন নিপীড়নের ক্ষেত্রে মেয়েদেরও দায় আছে। তারা পুরুষদেরকে সহজে বিশ্বাস করে ফেলে। তুমি ছেলেদেরকে এত বিশ্বাস করতে যাও কেন? রাত বিরাতে এদিক সেদিক ঘুরতে যাবা কেন? অভিভাবকদের এ ক্ষেত্রে আরো সচেতন হতে হবে। মায়েরা তাদের মেয়েদেরকে উপযুক্ত সতর্কতা ও ধারণা দিবেন। চলাফেরা ও পোষাক আষাকে শালীনতা রাখতে হবে। সর্বোপরি যে যত ইসলামী জিন্দেগী ধারণ করবে, সে তত নিরাপদ থাকবে। এটা আপনি স্বীকার না করতে চাইলে নাই। এখনো বোরকা পরা মেয়েরা অধিক নিরাপত্তায় থাকে।
আপনি জাহেলিয়াতের যুগে মেয়েদের চলন বলনের সাথে বর্তমানের মেয়েদেরকে মিলিয়ে দেখুন, যা একাকার হয়ে গেছে। জাহেলিয়াতের যুগের মেয়েদের চলাফেরার সাথে এ কালের হিন্দুয়ানি বা তথাকথিত বাঙ্গালী সংস্কৃতির অনেক মিল খুঁজে পাই। মেয়েদের শরীরের কিছু অংশ অনাবৃত রাখা বা আঁটসাট পোষাক পরা জাহেলিয়াত সংস্কৃতি। এটা আজ বাঙালি সংস্কৃতিতে জেঁকে বসেছে। জাহেলিয়াতের অন্ধকার দূরীভূত করেছেন আল্লাহর রাসূল (সঃ)। তাঁর দেয়া আদর্শ মানতে অনীহার কারণে সমাজে যত সব বিপত্তি। যৌন নিপীড়নের ঘটনাগুলোতে মেয়েদেরও কিছু দায় থেকে যায়।
বিশেষ করে আরব রাষ্ট্র গুলোতে ধর্ষণের কথা কেউ চিন্তাও করে না। ওখানে ধরা পড়লে নির্ঘাত মৃত্যু। অকালে প্রাণ হারানোর ভয়ে নারী শরীর নিয়ে জোর পূর্বক মজা মারতে সচারাচর কেউ যায় না। এ দেশে ধর্ষণের শাস্তি যা আছে, তা মোটামুটি কঠিন হলেও যথাযথ প্রয়োগ নাই বলে ঐ শাস্তিকে কেউ ভয় পায় না। ফলে শয়তানী কুপ্রবৃত্তি ফলাতে মেয়েদের উপর চড়াও হয়।
ধর্ম ই হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। হ্যাঁ ঘটনা সত্য। এখনো খৃষ্টান সহ অন্যান্য ধর্মে চার্চ বা মিশন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মুসলমানদের ক্ষেত্রে মাদরাসা।
এখানে ঠিকঠাক পড়াশুনা করে নবীজী (সঃ)’র আদর্শ ধারণ করলে সচ্চরিত্রবান হওয়া যায়। অন্যায়, অবিচার ও অনৈতিকতা স্পর্শ করে না। খুন, রাহাজানির ও ধর্ষণের মতো কান্ড এরা ঘটায় না। মানুষটা সৎ থাকে। দুএকটা ঘটনা ঘটলে তা ব্যতিক্রম। আর ব্যতিক্রম কখনো সমাজে দৃষ্টান্ত হয় না।
লেখক-
এক্টিভিস্ট, বিশ্লেষক।