
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (মসিক) প্রথম ভোটের বাকি এখনও ২০ দিন। কিন্তু এরই মধ্যে প্রায় ঠিক হয়ে গেছে নতুন সিটিতে প্রথম নগর পিতার আসনে কে বসতে যাচ্ছেন! এখন বাকি কেবল আনুষ্ঠানিকতা।
জাল স্বাক্ষরের দিয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতির ঘটনায় মেয়র পদে তিন প্রার্থী ‘অযোগ্য’ হিসেবে বাদ পড়েছেন আগেই। আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন সরকারের ‘মিত্র’ হিসেবে পরিচিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আহমেদ।
কিন্তু মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগের দিনে গতকাল মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দলটির প্রার্থী জাহাঙ্গীর আহমেদ ভোট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। ফলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইকরামুল হক টিটুর আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী রইলো না।
আসন্ন আগামী ৫ মের নির্বাচনে মেয়র পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন ময়মনসিংহ পৌরসভার এই শেষ মেয়র। ইতোমধ্যে দলীয় নেতা-কর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছেন সিটি করপোরেশনের এই বিদায়ী প্রশাসক।
জানা যায়, দেশের অষ্টম বিভাগ হিসেবে যাত্রা শুরুর পর ১২তম সিটি করপোরেশন হয় ময়মনসিংহ। গেজেট প্রকাশ ও প্রশাসক নিয়োগের পর অধীর অপেক্ষা ছিলো নতুন সিটিতে প্রথম ভোটের। এই ভোটের দিনক্ষণ নির্ধারণ হয় আগামী ৫ মে। এই নির্বাচনকে ঘিরে উৎসাহের কমতি ছিল না স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে।
বিএনপি উপজেলা নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনেও ভোট বর্জন করায় মেয়র পদে নৌকা ও লাঙ্গলের প্রার্থীর মধ্যেই জমজমাট ভোটের আভাস মিলেছিলো। দলীয় ছয় প্রার্থীর মধ্যে অভিজ্ঞতা, তারুণ্য, জনপ্রিয়তা ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তিসহ নানা কারণে ইকরামুল হক টিটুকেই নৌকার মাঝি হিসেবে বেছে নেন আ.লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
দলীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝেও তাকে ঘিরে আনন্দ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। মনোনয়ন পাওয়ার পরের দিন প্রায় ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ শোডাউন করে ভালুকা থেকে টিটুকে বরণ করে নেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
পরবর্তীতে জেলা ও মহানগর আ.লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে গণভবনে ডেকে কথা বলে টিটুর পক্ষে কাজ করার কঠোর নির্দেশও দেন আ.লীগ সভাপতি। ফলে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাও নিমিষেই উবে যায়। টিটুকে বিজয়ী করতেই ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামে স্থানীয় আ.লীগ।
এর আগে এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে গত সোমবার (৮ এপ্রিল) উৎসবমুখর পরিবেশে আ.লীগ প্রার্থী ইকরামুল হক টিটু, জাতীয় পার্টির প্রার্থী জাহাঙ্গীর আহমেদ, দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী আবু মুসা সরকার, শহীদুল ইসলাম স্বপন মন্ডল ও বিশ্বজিৎ ভাদুরী মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
পরে বুধবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে জেলা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ে কারান্তরীণ ভোটারের স্বাক্ষর জাল করে ভয়াবহ প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থী আবু মুসা সরকারের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়।
ভোটারের স্বাক্ষর জালের একই রকম অভিযোগে প্রার্থিতা হারান শহীদুল ইসলাম স্বপন মন্ডল ও বিশ্বজিৎ ভাদুরী। পরবর্তীতে তারা প্রার্থিতা ফিরে পেতে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করেন। কিন্তু জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়।
এতে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা ৫ থেকে নেমে দুইয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু চমক সৃষ্টি করে গতকাল মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) জাতীয় পার্টির প্রার্থী জাহাঙ্গীর আহমেদ সংবাদ সম্মেলন করে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে ইকরামুল হক টিটুকে সমর্থন দেন। ফলে টিটুর মেয়র হওয়া এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা।
ময়মনসিংহ জেলা আ.লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা বলছেন, আ.লীগে যোগ্য প্রার্থী থাকা স্বত্ত্বেও গত দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসন থেকে কোনো প্রার্থী দেয়নি দলটি।
দশম সংসদে জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আবু ওয়াহাব আকন্দকে পরাজিত করে ভোটে নির্বাচিত হন। এতে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
আবার জাতীয় রাজনীতিতেই জাতীয় পার্টি আ.লীগের মিত্র হিসেবে কাজ করায় স্থানীয় রাজনীতিতেও দলটির নেতা-কর্মীদের মাঝে ‘গাঁটছড়া’ রয়েছে।
মধুর এই সম্পর্ক ধরে রাখতেই জাতীয় পার্টি মসিক নির্বাচনের ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলটির মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ রওশন এরশদ নৌকার মনোনীত প্রার্থীর প্রতি সমর্থন জানানোর ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। এ কারণে ইকরামুল হক টিটুকে সমর্থন নিয়ে আমি নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলাম।’
ইকরামুল হক টিটুও বিগত দু’টি নির্বাচনে রওশন এরশাদকে আ.লীগ পরিবার ও জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে বিজয়ী করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জিআরএস/পাবলিক ভয়েস

