প্রশ্নফাঁস ও কওমী মাদরাসার কেন্দ্রীয় পরীক্ষা বাতিল: কী ভাবছেন তরুণ আলেমরা?

প্রকাশিত: ৬:৩৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৩, ২০১৯
তরুণ ওলামায়ে কেরাম

সম্প্রতি প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে কওমী মাদরাসা সনদের সরকারী স্বীকৃতি পাওয়ার পর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হওয়া দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সংস্থা; আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ কর্তৃক দাওরায়ে হাদিসের পেছনের সব পরীক্ষা বাতিল করে সামনের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এটা নিয়ে চলছে অনলাইনে অফলাইনে প্রচুর আলোচনা-সমালোচনা । বিভিন্নজন তাদের বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করছেন। এতে উঠে আসছে বিষয়টির ইতিবাচক এবং নেতিবাচক অনেক দিক। প্রশ্নফাঁস এবং প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে দাওরায়ে হাদিসের সকল পরীক্ষা বাতিল করা কতটুকু  ‍যুক্তিসঙ্গত; এ নিয়ে তরুণ আলেমরা কী ভাবছেন, তা জানতে তাদের মতামত জানতে চান পাবলিক ভয়েস সহ-সম্পাদক নাজমুল ইসলাম কাসিমী

প্রশ্নফাঁস এবং প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে কওমী মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সকল পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে, বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরামের সভাপতি, লেখক ও সম্পাদক মাও. জহির উদ্দিন বাবর বলেন–  আমার মনে হয় সবগুলো বাতিল করা দরকার ছিল না, যেগুলোর ব্যাপারে সুস্পষ্ট অভিযোগ আছে সেই এক দুইটা করলেই হতো। সবগুলো বাতিল করার কারণে ছাত্রদের ভোগান্তি বেড়েছে।

তরুণ আলেম, লেখক ও অনুবাদক মাও. আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন ১. প্রশ্নফাঁস আমাদের বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনের জাতীয় ও ব্যাপক সমস্যা। বাংলাদেশের সব ধারার শিক্ষাব্যবস্থায় এ রোগ রয়েছে। কাজেই এটা নিয়ে নতুন করে বলার কিছুই নেই। ২. প্রশ্নফাঁসের কারণে হাইয়্যা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা যুগান্তকারী ও শিক্ষণীয়। এ সিদ্ধান্ত থেকে অন্যান্য শিক্ষাবোর্ড পাথেয় গ্রহণ করতে পারে। নতুন করে প্রশ্ন তৈরি করে, তা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা প্রত্যাশা করি, আমাদের শিক্ষাবোর্ড সে চ্যালেঞ্জ উতরে যেতে পারবে। ৩. প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে কারা জড়িত, তাদেরকে খুঁজে বের করে প্রচলিত আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যেন আগামীতে কেউ এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত না হয়। ৪. আগামীতে পরীক্ষক বোর্ড ও ফলাফল প্রকাশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল নিয়োগের সময় আরো সতর্কতা অবলনম্বন করতে হবে। ৫. শিক্ষার্থীদের করণীয় হবে, তারা বোর্ডের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে পড়াশুনায় আত্মনিয়োগ করুক।


আরেক তরুণ আলেম, মাও. কবি সাইফ সিরাজ বলেন, খুবই দুঃখজনক। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ প্রমাণিত হলেও বিগত পরীক্ষা সব কেন বাতিল হবে? আর যদি সবগুলোর প্রশ্নই ফাঁস হয়ে থাকে তাহলে সকল দায়িত্বশীল এর জন্য দায়ী। সবাইকেই পদত্যাগ করতে হবে। একটা বিষয় কোনভাবেই বুঝে আসছে না! এত বড় একটা বোর্ড বেফাক। এত বড় একটা অথরিটি হাইয়া, অথচ প্রশ্নের একাধিক সেট কেন থাকবে না? প্রশ্ন ফাঁসের মূল কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি বেফাক ও হাইয়ার উপর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করতেই এই প্রশ্ন ফাঁসের ডার্টি গেম। এনিওয়ে, কমিটি নির্ভর পলিটিক্যাল বেফাক থেকে এমপ্লয়ি নির্ভর বেফাকে উন্নীত না হলে এসব সমস্যার সমাধান হবে না। প্রতিবছরই এইসব প্রশ্ন ফাঁসের খেলা দেখতে হবে।


সম্পাদক ও গবেষক মাও. মুফতী জিয়াউর রহমান বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সবগুলো পরীক্ষা বাতিল হওয়ার বিষয়টি কেমন মনে হলেও সার্বিক দিক দিয়ে এমন সিদ্ধান্তের যথার্থতা রয়েছে৷ যেহেতু প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি আজ দিবালোকের ন্যায় প্রমাণিত, তাই সামনে অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন যে ফাঁস হয় নি বা হবে না, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ তখন পরীক্ষার্থীদের ভেতর একরকম সন্দেহ ও অবিশ্বাস কাজ করত৷ যদিও পরীক্ষার্থীদের কষ্টের দিনগুলো প্রলম্বিত হয়ে গেলো, কিন্তু এ ছাড়া কোনো পথও ছিলো না৷ পরীক্ষার্থীদের অভিশাপ তারাই বয়ে বেড়াবে, যারা প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত৷ পাবলিক ভয়েসের মাধ্যমে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহ্বান জানাই৷
লেখক ও সম্পাদক মাও. আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রশ্ন ফাঁস নতুন কিছু নয়। এটা আগে আরও হয়েছে। তবে আলোচনায় আসেনি। এটা যে হবেই না; এমন কোনো কথা নেই। হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সবাই তো আর ফেরেশতা নয়। তবে আমাদের জন্য তা নিঃসন্দেহে লজ্জাজনক এবং একটা বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে গেল। কর্তৃপক্ষ দেরি না করে পরীক্ষা বাতিল করেছে, এটা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এর বিকল্প ছিল না। তবে যারা এসবে জড়িত, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের পরিচয় প্রকাশ করা এবং বোর্ড, মাদরাসা থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে বলে আমরা আশাবাদী। এবং এ ব্যাপারে কোনো নীতিমালা যদি না থাকে, তাহলে সেটাও প্রণয়ন করা জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন সাহস না করে। আর যারা এই প্রশ্ন ফাঁসের সাথে কওমি স্বীকৃতিকে গুলিয়ে ফেলছেন, আমার মনে হয় তারা অজ্ঞতা থেকে এমন বলছেন অথবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এমনটা করছেন। মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলা কোনো সমাধান নয়; উপযুক্ত ওষুধ গ্রহণ করা বুদ্ধিমানের কাজ।
লেখক ও গবেষক মুফতী রেজাউল কারীম আবরার বলেন, পরীক্ষা বাতিলের এ সিদ্ধান্তকে সাগত জানাই  তবে আপনারা যারা বোর্ডে আছেন, তারাই আজ এ লজ্জাজনক অধ্যায়ের সূচনা করেছেন! কোনো তালিবুল ইলম এর সাথে জড়িত নয়! একটু ভাবুন! আল্লাহর কাছে জবাব দিতে পারবেন? আমরা হতাশ নই। নানুতবি, শায়খুল হিন্দের কওমি মাদরাসাকে কেউ আটকিয়ে রাখতে পারবে না! যারা ষড়যন্ত্র করবে, তারা ধ্বংস হয়ে যাবে৷ কওমি মাদরাসা আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে ইনশাআল্লাহ।
তরুণ আলেম, লেখক ও সম্পাদক মাও. আমিন ইকবাল বলেন, হাইআতুল উলয়া ও বেফাক (মেশকাত জামাত) পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস খুবই দুঃখজনক সংবাদ। নীতি-নৈতিকতার শিক্ষাকেন্দ্রেও যদি অনৈতিক চর্চা শুরু হয়ে যায়—আস্থা আর কোথায় রাখব। তবে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় আমি পুরো বোর্ডকে দায়ী মনে করি না। নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির মাধ্যমে নিশ্চয় এমনটা ঘটেছে। অবশ্য পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, পরীক্ষা বোর্ডের সদস্যবৃন্দ এবং বোর্ডের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব—প্রশ্ন ফাঁসের দায় এড়াতে পারেন না। যদি দায়িত্বশীলদের গাফিলতি কিংবা অযোগ্যতার কারণে এমনটা হয়ে থাকে—তাহলে এর দায়ভার স্বীকার করে তাদের পদত্যাগ করা উচিত।
তরুণ আলেম ও সমাজকর্মী মাও. সাকিব মুস্তানসির বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের কারনে পরীক্ষা স্থগিতাদেশ দেয়া কওমি মাদ্রাসার ইতিহাসে একটা কালো দাগ । কওমি মাদ্রাসার মূল স্পিরিটই ছিল লিল্লাহিয়্যাত ফলে ইলম অর্জনের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে সাফল্য অর্জন ছিল উদ্দেশ্য ও অনুপ্রেরণা। দীর্ঘদিনের সাধনা ও নিজেকে মিটিয়ে দেয়ার মাধ্যমে যে সুনাম অর্জিত হয়েছিল তা আজ প্রশ্নের মুখোমুখি! কওমি মাদ্রাসায় প্রশ্নফাঁস হয়না বলে বাংলাদেশ শিক্ষা ব্যবস্থার গর্বের যে শেষ জায়গাটুকু ছিল আজ থেকে তা আর থাকবে না। চারিপাশে শতশত অনিষ্ঠকারী নিয়ে বসবাসরত কওমি শিক্ষা ব্যবস্থাকে বড় মুল্য দিতে হতে পারে এজন্য। কওমি শিক্ষাধারা বিরুধীরা এই সুযোগ লুফে নিবে এবং কওমি মাদ্রাসার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোর চেষ্টা করবে এতে সন্দেহ নেই। সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রশ্নফাঁস আলোচিত ও পর্যালোচিত বিষয় হলেও কওমি শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য একেবারেই নতুন একটা অধ্যায়। প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িয়ে থাকা প্রতিটি ব্যাক্তি/প্রতিষ্ঠানকে চহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা না হলে বিষফোঁড়ার মতো স্থায়িভাবে বাসা বাধবে কওমির স্বচ্ছ ইমেজে। ক্ষতবিক্ষত করবে উসুলে হাসতেগানার মুলনীতিকে।

 আরেক তরুণ আলেম মাও. আরিফ খান সা’দ বলেন, এটা দুঃখজনক। কিন্তু এ কথাও সত্য যে, কেবল দাওরায়ে হাদীসে প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে মিশকাত, শরহে বেকায়া, বিশেষ জামাতসহ সাকুল্যে বহু সংখ্যক পরিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে যে বিশাল পরীক্ষাযজ্ঞ সেখানে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পৃক্ততা আছে। সুতরাং যে কোনও ধাপে তা হতে পারে। নিজস্ব প্রেস না থাকায় অপ্রাতিষ্ঠানিক বেসরকারি প্রেস থেকে শুরু করে যেকোনও পর্যায়ে প্রশ্নফাঁস হওয়া সম্ভব। স্মর্তব্য, মেজিস্ট্রেসি এবং পুলিশি প্রহরা ছাড়াই এসব কাজ সম্পন্ন হয়। যেখানে সরকারি প্রশ্ন ছাপানোয় ব্যবহার হয় রাষ্ট্রীয় প্রেস, পুলিশি প্রহরা। মেজিস্ট্রেটও নিয়োগ থাকেন৷ এতসবের পরও সেখানে প্রশ্নফাঁস নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই যখন পরিস্থিতি তখন দাওরার এই অপর্যাপ্ত তদারকির মধ্যে প্রশ্নফাঁস কোনও বিস্ময়কর ঘটনা নয়। বরং এরপরও যে এত কমসংখ্যক অপরাধ ঘটে সেটাই বিস্ময়ের এবং প্রশংসনীয়।


 

তরুণ আলেম ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মাও. ইনাম বিন সিদ্দিক বলেন, হাইয়ার উচিৎ ছিল বিষয়টি প্রথমেই দেখে নেয়া, পরেরদিন মিলিয়ে দেখাটা একটা ধান্ধামি মনে হয়েছে আমার কাছে। জেনেছি, হাইয়ার অফিস শুক্রবার বন্ধ ছিল। কথা হচ্ছে, একটা জাতীয় বোর্ড, হোক শুক্রবার অথবা হোক সরকারি বন্ধ, পরিক্ষা চলাকালীন অফিস বন্ধ থাকবে এটা মেনে নেয়া যায়না। প্রশ্নপত্র ফাঁস ছাড়া পরিক্ষা সেন্টারে অনেক ঝামেলাওতো হতে পারে, এগুলো মেটানোর জন্যওতো।অফিসে যোগাযোগ করতে হয়। অথচ বন্ধ।
লেখক ও সাংবাদিক মাও. রুহুল আমিন নগরী বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে আমি লজ্জিত,দুঃখ ভারাক্রান্ত। নিশ্চয় এটা বড়দের উদাসিনতা আর জুনিয়ার ‘আল্লামা’দের র্দীঘ নোংরামির প্রকাশ । সাবেক সকল পরীক্ষা বাতিল ঘোষণার মাধ্যমে র্বোডের আসল চরিত্রটাই জাতির সামনে প্রকাশ পেয়েছে। এই কলংকের দাগ মুছার নয়। এই মুহুর্তে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাইনা।
লেখক ও গবেষক মুফতী মুহাম্মদ শোয়াইব বলেন, সকল পরীক্ষা বাতিল না করে শুধু যেসব পরীক্ষা প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে সেগুলোই বাতিল করা উচিত ছিল।

আরেক তরুণ আলেম বলেন, মাও. আল আমিন আনসারী বলেন, প্রশ্ন ফাঁস এই প্রথম না। এর আগেও হয়ছে। গতবারও কিছুকিছু জায়গায় সমস্যা হয়ছে। কিন্তু, সে সময়ে এভাবে সংবাদ না ছড়ানোর কারণে বিষয়টা গোপন রয়ে যায়। এবার প্রশ্ন ফাসের বিষয়টি জানাজানি হইয়া ভালো হয়ছে। তা না হয় এরকমভাবে চলতেই থাকতো। তবে যেই ৪ টা পরীক্ষা হয়ে গেছে তা বাদ দেওয়া আমার কাছে ঠিক মনে হয় নি। যে কয়টা হয় নাই শুধু সে কয়টা বাদ দিলেই চলতো। তবে এতকিছু যেহেতু করছে সেহেতু আগামী পরীক্ষা শুরু করার আগে প্রশ্ন ফাসে জরিতদের চিহ্নিত করে বেফাক ও হাইয়া থেকে বহিষ্কার করা হোক। না হয় এসব বন্ধ হবে না।

তরুণ আলেম মাও. শিবলি আহমদ বলেন, বেফাক ও হাইয়ার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে যেই জড়িত, তারই বিচার হোক। হোক সে কর্মকর্তা, কর্মচারী। তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে জনসম্মুখে শাস্তি দিয়ে অপসারণ করা হোক। অনেকেই হাইয়া ও বেফাকের প্রশ্ন ফাঁসকে সনদের স্বীকৃতি নেয়ার অগিযোগ তুলছেন। বলছেন স্বীকৃতি নেয়ার ফসল হলো এই প্রশ্ন ফাঁস। তাদের এ দাবি কতটুকু বাস্তবসম্মত? প্রবলেম আমাদের। সনদের স্বীকৃতির নয়। বেফাকের তো স্বীকৃতি নেই। ওটার প্রশ্ন ফাঁস হলো কেন? স্বীকৃতি বাতিল করলে প্রশ্ন ফাঁস হবে না সে গ্যারান্টি কিভাবে দিচ্ছেন? এই অভিযোগ নতুন করে নয়। আগেও তো হয়ে আসছে। সুতরাং অপরাধীদেরকে দ্রুত বিচারের আওতায় এনে বোর্ডকে কলঙ্কমুক্ত করুন। পিছনের পরীক্ষা গুলো বাতিল করাটা বেশি ভালো দেখছিনা।

লেখক ও সম্পাদক মাও. লুকমান হাকিম বলেন, এটা চরম অবহেলার পরিচয়। দেশের হাজার হাজার ছাত্রের জীবন নিয়ে কৌতুক করার মতো দুঃজনক কাহিনি। দায়িত্বশীলদের অবহেলার পরিচয় মিলেছে প্রশ্নফাঁসের কাহিনির মধ্য দিয়ে। ছাত্রদের কান্নার আওয়াজ শুনার আজ কেহো নেই। তারা ছাত্রদের টাকাভুক্ত চাকুরিজীবী, তাহলে অবহেলা করবে কেনো? এর সাথে যারা জড়িত এদের পরিচয় প্রকাশ করা হোক। এরা যেনো কোনোভাবেই ছাড় না পায়। তদন্তের নামে জুলন্ত না থাকে। এরা নুসরাত ঘাতকের চেয়ে কম ঘাতকতা করে নি। এরা একটি জাতির কপালে কলঙ্কের তিলক এঁটে দিয়েছে। কর্মকর্তাদের বিষয়ে যে আস্থার কারণে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, এদেরকে বহাল তবিয়তে রাখলে আগামিতেও ফাঁস হবে এটাই স্পষ্ট ধারণা। এদেরকে শরিয়ে বিশ্বস্ত নতুন কাউকে নিয়োগ দেওয়া হোক। একজন মেধাবীনী মেয়ে পরীক্ষার্থীর সচেতন অভিভাবক হিসেবে আমি যারপরনাই কষ্ট পেয়েছি। প্রশ্ন ফাঁস এবং সাবেক পরীক্ষা বাতিল, আগামি পরীক্ষা স্থগিত বিষয়টি শুনতেই আমার প্রিয়তমার বুকফাটা কান্নার আওয়ায আমি সহ্য করতে পারি নি। যারা এই অন্যায়ের সাথে জড়িত তাদের প্রতি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছি। যারা পরীক্ষার্থী আবার হাফিজে কুরআন, তাদের ইচ্ছা ছিলো দীর্ঘদিন প্রস্তুতি সেরে পরীক্ষা শেষ করবে এবং শবে বরাত শেষে বাড়িতে গিয়ে তারাবিহের চিন্তা করবে। কুচক্রিমহলের অসৎকর্মের কাছে ভেস্তে গেলো তাদের পবিত্র ইচ্ছার কথা।

আরেক তরুণ আলেম মাও. ওমর ফারুক মজুমদার বলেন, পরীক্ষার্থীদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। যাদের কারণে এ ক্ষতি হলো, প্রথম ঘটনা থেকেই তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এ ঘটনা বার বার হওয়ার আশংকা। সুতরাং সমাপ্তিতে নয় সূচনাতেই ভাবুন।

তরুণ আলেম মুফতী আব্দুল্লাহ ফুআদ বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে পরীক্ষা বাতিল খুবই ইতিবাচক ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে ক‌ওমি মাদ্রাসা নিজেদের ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা অক্ষুন্ন রাখতে কতোটা কঠোর তা প্রমাণিত হলো। খুব শীঘ্রই সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকরা দোষীদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিবে, এমনটাই প্রত্যাশা করছি।

আরেক তরুন লেখক আরিফ রাব্বানী বলেন, সকল পরীক্ষা বাতিল করা বোধোদয় উচিত হয়নি। অভিযুক্ত পরীক্ষাগুলো পুনরায় নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারতো। দুএকদিন সময় নিয়ে পরের প্রশ্নগুলো নতুন করে ছাপানোর ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো হতো।

উল্লেখ্য, কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা ৮ এপ্রিল শুরু হয়েছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৮ এপ্রিল। প্রশ্নফাসের অভিযোগে সব পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। ইতিপূর্বের গৃহীত দাওরায়ে হাদীসের সকল বিষয়ের পরীক্ষা নতুন করে অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে ৩মে পর্যন্ত দাওরায়ে হাদীসের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ১ মে বিশ্ব শ্রমিক দিবস উপলক্ষে পরীক্ষা বিরতি রয়েছে।

আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীনে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৬টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে মোট ২৬ হাজার ৭২১ জন শিক্ষার্থী এ বছর পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।

হাইয়াতুল উলইয়ার অধীনে ৬টি শিক্ষা বোর্ড হলো- বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ, বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা বাংলাদেশ, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ, আজাদ দ্বীনি এদারায়ে তালিম বাংলাদেশ, তানজিমুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়া বাংলাদেশ এবং জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড।

প্রসঙ্গত জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশনে ১৯ সেপ্টেম্বর ‘কওমি মাদরাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমিল)-এর সনদকে আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীনে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান বিল ২০১৮’ পাস হয়।

মন্তব্য করুন