কে এই আলোচিত ইসলামী ব্লগার ফারাবী শফিউর রহমান

প্রকাশিত: ১:৫৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১১, ২০১৯

সামছ্ আল ইসলাম ভূঁইয়া

গতকাল ১০ এপ্রিল বুধবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে করা মামলায় লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি শফিউর রহমান ফারাবীকে খালাস দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস সামশ জগলুল হোসেন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেন। রায় ঘোষণার আগে ফারাবীকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফারাবী বিভিন্ন ভিআইপি ব্যক্তিকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় মুক্তমনা লেখিকা তসলিমা নাসরিনের কলাম ছাপানোর কারণে পত্রিকার সম্পাদক নঈম নিজামকে হুমকি দিয়েছিলেন ফারাবী। এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১৪ মার্চ রাজধানীর রমনা থানায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (রমনা জোন) ফজলুর রহমান।

২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় পুলিশ। ২০১৬ সালের ৫ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। মামলায় বিভিন্ন সময় সাতজন সাক্ষ্য দেন।

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসির সামনে অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে দুর্বৃত্তরা।
পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিন রাত ১০টা ২০ মিনিটে অভিজিৎ রায় মারা যান। গুরুতর আহত বন্যাকে পরে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়।

পরে এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয় ফারাবীকে। এবং ২০১৫ সালের ২ মার্চ ভোর সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি বাসা থেকে ফারাবীকে আটক করে র‌্যাব। ৪ বছর যাবৎ এই মামলায় জেলে থাকার পর মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয় তাকে।

এর আগেও শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের জানাজা পড়ানো ইমামকে হত্যার হুমকি দিয়ে আটক হন ফারাবী। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।

কে এই ফারাবী

ফারাবীর পুরো নাম শফিউর রহমান ফারাবী। তার গ্রামের বাড়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কে দাস মোড়ে। ফারাবী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করতেন। তবে তিনি পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। একসময় সে হিযবুত তাহরিরের সক্রিয় কর্মী ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ২০১০ সালে হিযবুত তাহরিরে যোগ দেন। সেই সঙ্গে শুরু করেন ব্লগে লেখালেখি। অনলাইনে বিভিন্ন নাস্তিকদের বিরুদ্ধে লেখা লিখি করতেন ফারাবী। শুরু থেকেই ইসলাম ধর্মের স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে লেখালেখি করে প্রচুর জনপ্রিয়তা পান। গণজাগরণ মঞ্চের ব্লগার রাজিব হায়দারের জানাযার ইমাম কে হত্যা করার হুমকি দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখে গ্রেফতার হয়ে আলোচনায় আসেন ফারাবী।

৬ মাস পর জেল থেকে জামিনে বের হয়ে ইসলামী অঙ্গণে অনলাইন সেলিব্রেটি বনে যান এই তিনি। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে নিজের জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য ব্লগে ধারাবাহিক ভাবে লিখতে শুরু করেন তার জেল জীবনের বিভীষিকাময় দিনলিপি। পাশাপাশি সরকারকে তুলোধুনো আর এই সরকারকে জালেম সরকার উল্লেখ করে লেখালেখি করে তরুণ প্রজন্মের নিকট জনপ্রিয়তা পান তিনি। একসময় হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফি কে “ভন্ড” বলে গালিগালাজ ও আহলে হাদিস আলেম জসিম উদ্দিন রহমানীসহ ব্লগার রাজিব হায়দার হত্যা মামলার ৭ জন আসামীর পক্ষ নিয়ে একের পর এক স্ট্যাটাস দিয়ে বিতর্কের ঝড় তুলেন।

অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের পর ফারাবী ও অন্য এক যুবকের চ্যাটিংয়ের স্ক্রিন শট সোশাল মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে শেয়ার হতে থাকে। স্ক্রিন শটটিতে লেখা ছিল : ফারাবী অভিজিৎকে হত্যা করতে চান। এর উত্তরে বলা হয়, ‘অভিজিৎ রায় আমেরিকায় থাকে। তাই তাকে এখন হত্যা করা সম্ভব না। তবে সে যখন দেশে আসবে তখন তাকে হত্যা করা হবে।’ এই স্ক্রিনশটের জন্যই তাকে সন্দেহভাজন ভাবে আটক করা হয় এবং অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার অন্যতম আসামি করা হয়েছিল শফিউর রহমান ফারাবীকে।

গতকাল তাকে এই মামলা থেকে খালাস দিয়েছে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনাল।

মন্তব্য করুন