কালের আবর্তে থেকে যায় তাসলিমার প্রতিনিধিরা

প্রকাশিত: ৮:১৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৯, ২০১৯

-নকীবুল হক

বর্তমানে আমরা যে সমাজে বসবাস করছি এর চিত্র বর্ণনা করলে বলতে হবে, পুরো সমাজটাই এখন নৈতিকতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে। নৈতিকতার অধঃপতন এতটাই হয়েছে যে, পর্দা ও লজ্জা যে এককালে নারীদের ভূষণ ছিল আজ তা অনেক নারীর কাছেই ইতিহাস। বাংলাদেশের মুসলিম সমাজের এই অধঃপতনের পেছনে সর্বকালে কাজ করে যাচ্ছে পাশ্চাত্য পুঁজিবাদের দালাল একশ্রেণির লোক। তারা সাহিত্য সংস্কৃতি থেকে নিয়ে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত বিস্তৃত। তারা নিজেদের নাস্তিকতা আড়াল করে নানাভাবে বাংলাদেশের নারীদের বেহায়াপনার দিকে উস্কানি দেয় এবং একেই সভ্য সমাজের সংস্কৃতি বলে চালিয়ে দিতে চায়। তারা চায় বাংলাদেশের প্রত্যেক নারীকে তসলিমা বানাতে।

কিন্তু তারা বেমালুম ভুলে যায় যে, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। এই দেশে আল্লাহু আকবারের ধ্বনিতে ভোরের আলো ফুটে ওঠে এবং আল্লাহু আকবারের ধ্বনিতে রাত্রি নেমে আসে। কেউ আবার একটু সুযোগ পেলেই নাস্তিকতার কু-প্রলাপ বকে পত্রিকার সিঙ্গেল কলামের শীর্ষে নিজেদের ছবি প্রকাশ করতে চায়। অদ্যাবধি তাদের সব নাস্তিকতার বাক্যালাপের পেছনে একটা কথা স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে যে, তাদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা। তারা চায় নারীদের পণ্যের মতো ভোগ করতে। কিন্তু তাদের সেই হীন উদ্দেশ্যের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় মুসলিম নারীর ভূষণ পর্দা। তাই তারা এই পর্দা প্রথাকে উচ্ছেদ করার জন্য নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ছবিতে দেখা যায় একজন তরুণীর গায়ের টি-শার্টে লেখা ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না।’ এই তরুণীর নাম জিনাত জাহান নিশা। ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট আল্টারনেটিভের চারুকলা অনুষদ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন তিনি। বিবিসি’র সূত্রানুযায়ী জানা যায়, মিজ. নিশা কয়েক বছর আগে পাবলিক বাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিজেই অপমানিত হন। এরই প্রতিবাদ হিসেবে ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’ লেখা একটি খোঁপার কাঁটা তৈরি করেন এবং তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাজারে ছাড়েন। খোঁপার কাঁটাটি বাণিজ্যিক সফলতা না পলেও তার ইতিবাচক সাড়া পাওয়ায় এবছর একি লেখা সম্বলিত টি-শার্ট বাজারে ছাড়েন। এর দ্বারা অনেক আলোচনা-সমালোচনার শিকার হন জিনাত জাহান নিশা। কেউ তার প্রতিবাদকে সমর্থন করেছেন, কেউ তার ছবি বিকৃতভাবে এডিট করে ট্রল করছেন, কেউ আবার এই অশ্লীলতার প্রতিবাদ করেছেন। ফেসবুকে সুলতান মাহমুদ নামে একজন লিখেছেন, আপনাদের এমন কুরুচি পুর্ণ বিজ্ঞাপনে আমার অনেকগুলো মন্তব্য ছিল। বলতে গেলে আমার অবস্থা বেহাল হবার উপক্রম হবে। তাই এখানেই নীরব। তবে এমন অবস্থা আপনাদের কাম্য নয়।


বিজ্ঞাপন দিতে গিয়ে নিজেরাই বিজ্ঞাপন হওয়া ঠিক না। বাংলাদেশের পুরুষরা সত্যি অন্য রকম এক আইডল। বাসে উঠার পর কখনও কি দেখছেন কোন মেয়ে নিজ থেকে উঠে গিয়ে কোন ছেলেকে বসতে দিয়েছে! না’ এরকম অবস্থা বিরল। তিনি আরও লিখেছেন, আমি দেখেছি অসংখ্য ছেলেকে মেয়েদের রিস্পেক্ট করে নিজের আসনে বসাতে। সেদিন ফার্মগেট থেকে আসার পথে এক ছেলেকে দেখলাম সিট না পেয়ে মহিলা সিটে বসে পরেছে। কিছুক্ষণ পর এক মহিলা বাসে উঠেই যেন, আকাশ থেকে পরার উপক্রম। ইচ্ছা মতো বকে ছেলেটাকে সিট থেকে উঠিয়ে তিনি সিটে বসে যেন মনে হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের জয়ের স্বাদ নিচ্ছেন। বাম দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনটা সিট ই মহিলার দখলে। অথচ সিটগুলো ছিল স্রেফ পুরুষের জন্য। ওই মহিলার আচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে আস্তে করে আপুদের বললাম– প্লিজ এটা তো পুরুষদের সিট। আমাদেরকে আমাদের সিট ছেড়ে দিতে পারেন। আরও মজার ব্যাপার হলো – তিনটা মেয়ের পাশেই কিন্তু তিনজন পুরুষ ছিল। মেয়েগুলো আগের মহিলার কাণ্ড দেখে নিজ থেকে উঠতে গেলে আমি বারণ করলাম। আপনাদের উঠার দরকার নেয়। শুধু ওই আপুটাকে একটু মার্জিত ব্যবহার শিখিয়ে দেবেন। গা ঘেঁষে বসবেন না। ভালো কথা। এই বাক্যালাপ দ্বারা যদি বোঝান পুরুষরা নিজ থেকে আপনাদের গা গেসে বসতে অভ্যস্ত তাহলে চরম একটা ভুল করবেন।


বাসে উঠে কোনো সিট না পেলে আপনাদের কী অবস্থা হবে একবার ও ভেবে দেখেছেন? পুরুষরা ও যদি লিখে দেয় গা ঘেঁষে বসবেন না! তাহলে তো কেল্লা খতম। আমি সুলতান মাহমুদের মন্তব্যকে সমর্থন করি। কেননা অশ্লীলতা কখনো প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না। মিজ. নিশা বলেছিলেন, ‘বাসে ভিড়ের মধ্যে গায়ের সাথে ধাক্কা লাগাটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু অনেকেই ভিড়ের সুযোগটা নেন, যার প্রতিবাদ করা প্রয়োজন।’ তার প্রতিবাদ হিসেবে তিনি গায়ে টি-শার্ট পড়েছেন এবং তাতে লিখেছেন, ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’।

এ কেমন প্রতিবাদ! প্রতিবাদ করতে হলে প্রতিবাদের ভাষাও প্রতিবাদের মতো হতে হবে। অশ্লীল ভাবে কখনো প্রতিবাদ করা যায় না। অশ্লীলভাবে প্রতিবাদ করতে করতে বাংলাদেশের মুসলিম নারীরা এখন এতটাই অশ্লীল হয়েছে যা বাংলাদেশের বিচারে নয়, পাশ্চাত্যের দিক দিয়েও লজ্জাজনক। কেননা এটা বাংলাদেশ। ত্রিশ লক্ষ মা-বোনদের ইজ্জতে অর্জিত এই মানচিত্র কখনো পাশ্চাত্যের কোনো দেশের মানচিত্রে বসানো যাবে না। মিজ. নিশা যে কর্মের প্রতিবাদ করেছেন তার প্রতিবাদ করা উচিত। কিন্তু প্রতিবাদ তো প্রতিবাদের মতো হতে হবে! আজ পর্যন্ত যারা পাবলিক বাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে, তার পরিসংখ্যান করলে দেখা যাবে তাদের ৯০%-ই নারীর ভূষণ পর্দাকে উপেক্ষা করেছে। যার জন্য তারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হলো বাকি ১০% কেন এই হয়রানির শিকার? সমাজে সবসময় কিছু দুষ্টু প্রকৃতির লোক থাকে এবং ওরা থাকবেই। ওরা যেন কখনো মাথা তুলতে না পারে তার জন্য প্রতিবাদ করতে হবে। কিন্তু পর্দাকে উচ্ছেদ করে প্রতিবাদ করা যাবে না। তারা তো তেমাদেরকে পর্দা থেকে সরিয়ে আনছে তাদের সেই হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য। তাই তোমরা যতই পর্দাকে টেলে প্রতিবাদ করবে তারা ততই ওঠে বসবে। করণ তারা তো দেখছে তাদের সেই কর্মের জন্য তোমরা আরও উদোম হচ্ছ।

সুতরাং পর্দাকে টেলে যতই প্রতিবাদ কর না কেন যৌন হয়রানি কখনোই কমবে না। বরং বাড়বে। তাই ওদের ষড়যন্ত্র থেকে সাবধান থাকতে হবে। নারীর ভূষণ পর্দাকে মেনে নিতে হবে। যেন ওরা মাথা তুলতে না পারে। কিন্তু ওরা করা? যারা তাদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য এই ষড়যন্ত্র করে যায়? ওরা হলো তসলিমা নাসরিন আর আহমদ শরীফদের প্রতিনিধি। যারা কালের আবর্তে থেকে মুখোশ পরে থেকে যায়, আবার সুযোগ পলেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠতে চায়।

লেখক-

শিক্ষার্থী, হয়বতনগর এ. ইউ কামিল মাদরাসা, কিশোরগঞ্জ

মন্তব্য করুন