

“একটি ওয়াজে বলেন, মহান ফেরেশতা ইসরাফিল হলেন রেফারি আর আদম আ. হলেন মামলার আসামি”
জনসাধারণের কাছে দীনের দাওয়াত পৌঁছুনোর একটি বড় মাধ্যম হল ওয়াজ মাহফিল ও বয়ান। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার জীবনে সাহাবাদের বয়ান করতেন। ইসলামের বিধানাবলি তাদের সামনে তুলে ধরতেন। জান্নাতের প্রতি আগ্রহ প্রদান করতেন এবং জাহান্নাম সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করতেন। বয়ানের মাধ্যমে মানুষের অন্তর আখেরাতের ভয়ে প্রকম্পিত হয়ে উঠবে, দুনিয়ার প্রতি তার আগ্রহ ধীরে ধীরে কমতে থাকবে, গুনাহের পরিণামের কথা ভেবে আখেরাতের শাস্তির ভয়ে তার শরীর কেঁপে উঠবে।
কিন্তু হচ্ছে উল্টোটা! এখন মানুষ বয়ান থেকে পরকালীন খোরাক পায় না, পায় কৌতুক গান আর অভিনয়! একজন মুসাফির যেমন রাস্তায় রাত্রিযাপন করলে সেটাকে নিজের বাসস্থান মনে করে না; কোনোমতে রাত পার করে আবার নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পথ চলে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই মুসাফিরের মতো পৃথিবীতে জীবনযাপন করার কথা বলেছেন। ওয়াজের মূল মাকসাদ হলো মানুষের আকিদা বিশুদ্ধ করা। কারণ, বিশুদ্ধ আকিদার অনুসারী না হলে আমল গৃহিত হবে না। ইসলামের আহকাম বা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে কেউ অপব্যাখ্যা করলে, ব্যঙ্গ করলে সেগুলোও আকিদার আলোচনায় আসবে। কারণ, বিশুদ্ধ আকিদার অর্থ হলো, সকল ফিরাকে বাতিলার অসারতা মানুষের কাছে তুলে ধরা।
দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হলো, মানুষকে জান্নাতের পথে পথপ্রদর্শন এবং জাহান্নামের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করা। ওয়াজ-মাহফিল যেহেতু একটি দীনি বিষয়, তাই দীনের অন্যান্য বিষয়ের মতো এক্ষেত্রেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম এবং সালফে সালেহীনের অনুকরণ করা জরুরি। মানুষের ব্যক্তি জীবনের পরিশুদ্ধি ও আকিদা-বিশ্বাসের সংশোধনের ক্ষেত্রে ওয়াজ মাহফিলের গুরুত্ব অপরিসীম। ওয়াজ-মাহফিল নতুন কোনো বিষয় নয়। যুগ যুগ ধরে তা নিজস্ব গতি ও নিয়মে চলে আসছে।
এক সময় শুধু সমাজের বুজুর্গ ও সাধক আলেমগণই ওয়াজ করতেন। কিন্তু এখন ওয়াজে পেশাদারিত্ব এসেছে। সুরেলা ব্যক্তিরা ওয়াজকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ইলম তার যেটুকুইু হোক না কেনো এই প্রকারের অধিকাংশ বক্তাই তাদের জনপ্রিয়তা বাড়াতে আশ্রয় নেন নানা কৌশলের। তাদের কেউ বেছে নেন মনগড়া কিচ্ছা-কাহিনীর। আবার কেউ আশ্রয় নেন জ্ঞানহীন সুর ও গান। আবার এদের কেউ বেছে নেন হাসি-কৌতুক। তাদের হাসি-কৌতুক থেকে রক্ষা পায় না কোরআন-হাদিস থেকে শুরু করে নবী-রাসুল কেউ-ই। এমনই একজন কৌতুকবক্তা নোয়াখালীর মাওলানা রফিকুল্লাহ আফসারী। তার ওয়াজের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো ওয়াজের নামে হাস্য-কৌতুক করে শ্রোতাকে আমোদিত করা। তিনি তার পুরা ওয়াজে কোরআন ও হাদিসের আলোচনা করেন কৌতুকের ছলে। বিভিন্ন হাস্যরস আর অভিনয় প্রদর্শনের মাধ্যমে।
সম্প্রতি তিনি তার একটি বয়ানে আল্লাহকে অবমাননা (শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে) করে বলেন— “আমির হামজার জন্য দোয়া করবি, করবিনি? আমির হামজারে আল্লাহ ১৫০০’শ বছর চিন্তা করে কোরআনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য আল্লাহ এই মেঘলাইটরে বানাইছে। আমার কথা মিথ্যা অইলে তোরা জুতা মারিছ। ফেরেশতারা তোমরাও ফটো উঠায়া রাখ।
এছাড়াও তিনি হুবহু কথাটি মিজানুর রহমান আজহারীর ক্ষেত্রেও বলেছেন” এ ছাড়াও নারীদের স্পর্ষকাতর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়েও ব্যঙ্গাত্মক অঙ্গিভঙ্গি করে যুবকদের যৌন সুরসূরী দিয়ে থাকেন। এমনকি তার নিজস্ত্রীও এই ব্যঙ্গ থেকে বাঁচতে পারেননি। জাহান্নামের ভয়াবহ চিত্র শোনলে গা শিউরে ওঠে শ্রোতাদের । অথচ তিনি জাহান্নামের বর্ণনা দেন হরহামেশা অনেকটা হাস্যরস মিশিয়ে।
একইভাবে তিনি কেয়ামতের দৃশ্য ও ফেরেশতাদেরও কৌতুক করতে ছাড়েন নি। দেখা যায়, একটি ওয়াজে বলেন, মহান ফেরেশতা ইসরাফিল হলেন রেফারি আর আদম আ. হলেন মামলার আসামি।
এছাড়াও আরেকটি ওয়াজে দেখা যায় তিনি হজরত মুসা আ. এর মুখের জড়তা এবং আল্লাহর সঙ্গে তার সংলাপ অভিনয় করে দেখাচ্ছেন। আর শ্রোতার দেদারছে তার অভিনয় দেখে হাসছে।
তিনি ওয়াজের ক্ষেত্রে হাসি-কৌতুক আর মনগড়া কিচ্ছা-কাহিনী বলতে এতটাই এগিয়ে যে, ইউটিউবে তার একাধিক বয়ান ফান্নি সিরিজ আকারে বিভিন্ন চ্যানেল থেকে আপলোড হচ্ছে প্রতিনিয়ত এবং ইউটিউবে তার যেকোনো ওয়াজের কমেন্ট দেখলে সচেতন মানুষ তার দৃষ্টি সম্পর্কে সহজেই ধারনা লাভ করতে পারবে।
অনেকেই মনে করেন, আফসারীর মতো ওয়ায়েজকে সাধারণ শ্রোতাদের এখনই বয়কট করা সময়ের দাবি। যে স্পষ্টত একজন দীন বিকৃৃতকারক। এর আগেও একাধিক বক্তা কোরআনের বিকৃতি ঘটিয়েছেন। মনগড়া কোরআনের আয়াত বানিয়ে প্রচার করেছেন উত্তরবঙ্গের সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জাকের মঞ্জিলের আলাউদ্দীন জিহাদী।