“গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না” তরুণী নিশার প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড়

প্রকাশিত: ৬:১৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৬, ২০১৯

এইচ এম আবু বকর

একটা ঘটনা দিয়েই শুরু করি। আজকে বুদ্ধিমান গোছের এক ভদ্রলোকের পোস্টে মেয়েদের গেঞ্জির উপরে ইডিট করা অশ্লীল একটা লেখা দেখে কমেন্টে এসব প্রচার থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিলাম। বললাম এগুলো ইডিট করা, এগুলো প্রচার করে নিজেকে ছোটো করার দরকার নাই। তাতেই সে তেলেবেগুন। আমাকে বলল, আপনি কেন হঠাৎ করে ওদের পক্ষে সাফাই গাইছেন? আজেবাজে কথা সব বলল। তিনি দাবি করে বসলেন বসুন্ধরায় নাকি মেয়েদের গায়ে এসব গেঞ্জি নিজের চোখে দেখে এসেছেন।

আমি জানতে চাইলাম, আপনি যেই লেখাটা লেখাটা লেখাটা লেখাটা লেখাটা প্রচার করছেন সেটাই কি লেখা দেখেছেন? তিনি বারবার এড়িয়ে গিয়ে আমাকে কমেন্ট ব্লক মেরে দিলেন। অবাক হয়েছি এই নোংরা আচরণে। আচ্ছা, “গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না”। এই কথাটা কি খুব অশালীন? অথচ এই শ্লোগান যতটা না অশালীন তারচেয়ে হাজার গুন বেশি অশ্লীল ও নোংরা শ্লোগান বানিয়ে এখন প্রচার করছে অনেকে।

বিভিন্ন গানের ছন্দ লেখা গেঞ্জি টি শার্ট তো সচরাচর দেখা যায়। ভদ্র সমাজ কিছুতেই এগুলোর সাপোর্ট দিতে পারেনা। এগুলো রুচিশীলতা নয়। তবে একটু কল্পনা করেন তো, আপনি যখন পাবলিক বাসে জার্নি করেন তখন কতজনের সাথেই তো এই গাঁ ঘেঁষা নিয়ে তর্ক হয়। সারাদিন অফিস করে রাতে বাঁদর ঝোলা করে যখন বাসায় ফেরেন তখন কিন্তু হেলপার কন্ট্রাক্টরের সঙ্গেও ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে লেগে যান।


নিজের গায়ের স্ত্রী করা পোশাকে কারো ঘামালো হাত লাগলেও চটে যান। আর যদি স্পর্শকাতর জায়গায় একটা খোঁচা লাগে তখন কি ছেড়ে দেন না আচ্ছা করে বকে দেন? পারলে হাতও তোলেন গায়ে। ইদানিং যে অদ্ভুত শ্লোগান লেখা গেঞ্জি গায়ে এক মেয়ের ছবি অনলাইনে ভাইরাল। বাস্তবতার নিরিখে অবশ্যই ওই শ্লোগানটা নারী অধিকার এবং স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে। ‌যানবাহনে যেখানে নারীদের জন্য আলাদা আসনও বরাদ্দ থাকে। এবং তাদের এই অধিকারটা ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই দেয়া হয়েছে। নারীরা আমাদের কাছে মর্যাদার পাত্র। তারা আমাদের মা, বোন, স্ত্রী কন্যা। তাদের অধিকার আমরা রাজনৈতিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা তাদেরকে মুখরোচক শ্লোগানে মুগ্ধ করতে পারলেও অধিকার বঞ্চনায় অনেক আগে রেখেছি। সম্ভবত একারণেই তারা ইউরোপীয় সিস্টেমে অধিকার চাচ্ছেন। তারা যখন গেঞ্জিতে শ্লোগান লিখে ঘুরে বেড়ান আমরা এসব নিয়ে ট্রল করি।


অশ্লীল কথাবার্তা লিখে ইডিট বানিজ্য করি। তখন কেউ বলতেই পারে, তাহলে আপনি কি মেয়েদের গা ঘেঁষে দাঁড়াতে চান পাবলিক প্লেসে? পাবলিক বাসে? পাবলিক পরিবহনে? না হয় আপনার এতো লাগে কেন? আপনি কেন সেই গেঞ্জিতে ইডিট করে অশ্লীল সব বাক্য লিখে রিউমার ছড়ান? “গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না” আর “পাছায় লিঙ্গ লাগাবেন না” কি এক ধরনের কথা? কিন্তু আপনি তো হুজুগের শিকার হয়ে তাই ছড়াচ্ছেন। আশ্চর্য হতে হয় জাতির বিবেকের দশা দেখে। বাধ্য হয়ে আমাকে উল্লেখ করতে হচ্ছে “গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না” লেখা গেঞ্জির উপরে কিসব কথাবার্তা ইডিট করে অপপ্রচার চালাচ্ছেন অনেকে।


“দুদু দেখে লাব নাই হাত লাগানো নিষেধ”, “দাঁড়িয়ে ২০০ টাকা, বসে ৫০০ টাকা, শুয়ে ১০০০ টাকা ফিক্সড প্রাইজ”, এবং “পাছায় হাত লাগাবেন না এটা আমার স্বামীর সম্পদ” এজাতীয় নোংরা কথায় এখন ফেইসবুক সয়লাব। স্বাভাবিক বিবেকবোধ থেকেই তো বোঝা উচিত কোনটা আসল আর কোনটা ইডিট। তাছাড়া লেখায়ও স্পষ্ট ভুল পরিলক্ষিত হয়, তবুও স্রেফ লাইক কমেন্ট ও মেকি লজ্জাশীলতা দেখানোর ধান্ধায় আজেবাজে লেখাগুলো আপনি প্রচার করে যাচ্ছেন। আমাদের কি মা বোন নাই? লজ্জা করা উচিত। আসলে আমরা প্রচণ্ডভাবে রিউমার ও অসত্যে বিশ্বাসী এক জাতি। সত্যের চেয়ে অসত্য প্রচার হয় বেশি।


বিশ্বাসও করে সবাই। অথচ প্রযুক্তির এই যুগে কোনটা সত্য আর কোনটা ইডিট তা বোঝা কি খুব জটিল! একথা নিতান্তই সত্য যে, শরঈ পর্দা নারীদেরকে দিতে পারে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা। এসব শ্লোগান- প্লেকার্ড কিছুতেই নারী নিরাপত্তার বিধায়ক নয়। তবে কাউকে অশ্লীলতায় নিরুৎসাহিত করার নামে রিউমার কিছুতেই ইসলামের শিক্ষা নয়। আপনার আমার এই অসত্য প্রচারে ওই শ্রেনীর নারীরা আরো সাহসী হয়, আরো সীমানা ভাঙতে উৎসাহিত হয়। আসুন, আমাদের প্রতিবাদ, আমাদের দাওয়াত সবই হোক ভদ্রোচিত ও শরীয়ত নির্দেশিত পদ্ধতি ও পন্থায়।

মন্তব্য করুন