চরমোনাই পীরের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও একজন সিন্দাবাদের গল্প : শামস আল ইসলাম

প্রকাশিত: ২:২৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩১, ২০১৯
চরমোনাই পীরের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও একজন সিন্দাবাদের গল্প

সিন্দাবাদ। অ্যাডভেন্সারে ভরা বিখ্যাত আরব্য উপন্যাসের একটি সুবিখ্যাত চরিত্র। আল্লাহর একজন সৎ বান্দা এবং পরোপকারী ব্যক্তি । তিনি বাগদাদের একজন বিখ্যাত সওদাগর। জীবন বাজি রেখে তিনি মানুষের উপকার করেছেন। সাতবার সমুদ্রযাত্রায় গিয়েছেন এবং অচেনা সাগরের বুকে ভেসে বেড়িয়েছেন। কখনও তার জাহাজ ভেঙেছে ভয়ঙ্কর ঝড়ে, কখনও গিয়ে পড়েছেন একচোখা দৈত্যের কবলে। কখনও দ্বীপ ভেবে ভুল করে পা রেখেছেন বিশাল তিমির পিঠে, কখনও লড়াই করেছেন রক-পাখির বিরুদ্ধে। সাহস, দৃঢ়তা, সততা এবং আল্লাহর প্রতি অসীম বিশ্বাসের কারণে তিনি প্রতিটি বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়েছেন এবং অসংখ্য মানুষকে বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন, এক সময় হয়ে ওঠেন জগতবিখ্যাত ও খ্যাতিমান ব্যক্তি।


উপন্যাসের সিন্দাবাদের মতোই এদেশের ইসলামী রাজনীতিতে বহু চড়াই__উৎরাই পেরিয়ে জাতীয়ভাবে অবস্থান সৃষ্টি করা এক সিন্দাবাদের গল্প শোনাব আজ। যাঁর নেতৃত্বে প্রথম সারির একটি দলকে মাত্র এক যুগে জাতীয় রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত হয়েছেন। জাতীয় নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসনে এককভাবে দলীয় প্রতিকে প্রার্থী দিয়েছে এ দল। সারাদেশে তুলেছে তুমুল আলোড়ণ। এক হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করেছে তারা। ৩টি ইউনিয়নে নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি বেশিরভাগ ইউনিয়ন ও সংসদীয় আসনে দ্বিতীয়-তৃতীয় স্থান লাভ করেছেন। সিটি নির্বাচনেও ভোটপ্রাপ্তি ছিল চোখে পড়ার মতো।

বলছিলাম ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাইর কথা-

১৯৭১ সালের ১ ফেব্রুয়ারী বরিশাল জেলার চরমোনাই ইউনিয়নের আহসানাবাদ গ্রামে বিখ্যাত এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন তিনি। তাঁর পিতা পাক-ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুজুর্গ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করীম রহমাতুল্লাহি আলাইহি। যিনি “পীর সাহেব চরমোনাই” নামেই প্রশিদ্ধ ছিলেন।

মুফতী সৈয়দ রেজাউল করীমের শিক্ষাগত যোগ্যতা

সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম -এর প্রাথমিক শিক্ষা জীবন চরমোনাই আলিয়া মাদরাসা দিয়ে শুরু হয়। চরমোনাই জামিয়া রশিদিয়া আহসানাবাদ মাদরাসায় কওমী এবং আলিয়া উভয় ধারার শিক্ষাই সমানভাবে চালু রয়েছে। গতানুগতিক আলিয়া মাদরাসাগুলোর বাইরেই এ মাদরাসার অবস্থান। এখানে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ইসলামী জ্ঞানে-গুনে সমন্বিত আলেমরা শিক্ষকতা করে থাকেন। দক্ষিণবঙ্গের তেমনই একজন প্রবীণ আলেম মাওলানা আ. রহিম যিনি চরমোনাই মাদরাসায় প্রায় বিশ বছর যাবত প্রধান মুহাদ্দিসের দায়িত্ব পালন করে এখন ভোলা আলিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত আছেন। তিনি মুফতী সৈয়দ রেজাউল করীম সম্পর্কে বলেন, “পীর সাহেব চরমোনাই মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমকে হেদায়াতুন নাহু ক্লাশ থেকে কামিল ক্লাশ পর্যন্ত আমি  পড়িয়েছি। তাঁর বর্ণীল শিক্ষা জীবন সম্পর্কে আমি জানি। তিনি কামিল হাদিস ও ফিকাহ গ্রুপে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন। সেখান থেকেই উনাকে মুফতী বলা হয়”। মুফতী রেজাউল করীম ১৯৯১ সালে চরমোনাই আলিয়া থেকে কামিল ও বরিশাল সাগরদী আলিয়া থেকে ফিকহ ও হাদিসে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে ইফতা ও হাদিসের দরস সম্পন্ন করেছেন।

আলিয়া মাদরাসায় ক্লাশ করার পাশাপাশি চরমোনাই কওমী মাদরাসায়ও ধারাবাহিক ক্লাস করেছেন তিনি। কওমীয়া মাদরাসার প্রতিটি ক্লাশই তিনি সুনামের সাথে শেষ করেছেন। এবং তিনি ঢাকার ঐতিহ্যবাহী যাত্রাবাড়ী মাদরাসায়ও পড়াশোনা করেছেন বলে জানিয়েছেন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। চরমোনাই কওমীয়া শাখার মেধাবী ছাত্র হিসেবেও তার পরিচিতি ছিল ব্যাপকভাবে।

সম্প্রতিকালে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক মাওলানা ফয়জুল হাসান খাদিমানী একটি মিটিংয়ে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুকের বরাত দিয়ে চরমোনাইর পীর মুফতী সৈয়দ রেজাউল করীম ঢাকার ফরিদাবাদ মাদরাসায় পড়েছেন এবং কোন ক্লাশে পাশ করেননি বলে যে দাবি তুলেছেন তার কোন ভিত্তি অনেক খুজেও পাওয়া যায়নি। ফরিদাবাদ মাদরাসায় চরমোনাইর বর্তমান পীর সৈয়দ রেজাউল করীম একদিনের জন্যও ভর্তি হননি বলে পাবলিক ভয়েসকে নির্ভরযোগ্য তথ্য দিয়েছেন ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের’ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান। বরং যাত্রাবাড়ী মাদরাসার শিক্ষা জীবন চলাকালে একাধিকবার মাদরাসায় মুফতী সৈয়দ রেজাউল করীমের কাছে তিনি এসেছেন এবং সার্বিক খোজ-খবর নিতেন বলেও জানিয়েছেন।

সৈয়দ রেজাউল করীমকে নিয়ে দেয়া বক্তব্যের ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

এ বিষয়ে পুনরায় মাওলানা খাদিমানীর সাথে পাবলিক ভয়েসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি যা বলেছি তা জেনেশুনেই বলেছি। এবং তিনি তার অবস্থান থেকে সরে আসেননি বলেও জানিয়েছেন । সাথে সাথে তিনি বলেছেন, ‘আপনারা খোজ নিন এবং তারপর আমাকে জানান’। মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফরুকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ব্যক্তিগত মোবাইলের নম্বরটি (01712789***) বন্ধ পাওয়া গেছে।

শিক্ষাজীবন শেষ করার পর মুফতী সৈয়দ রেজাউল করীমের রয়েছে একটি বর্ণীল জীবন:

১৯৯৪ সালে তাঁর পিতা সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করীম (রহঃ) থেকে তিনি খেলাফতপ্রাপ্ত হন। ঐ বৎসর চরমোনাই’র বাৎসরিক মাহফিলে খলিফা হিসেবে তার নাম ঘোষনা হয়। তিনি ২০১৩ সালে থানভী সিলসিলার অন্যতম খলিফা যাত্রাবাড়ী মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা মাহমুদুল হাসান থেকে খেলাফত লাভ করেন এবং ২০১৬ সালে উপমহাদেশের প্রাচীন ও প্রধান দীনি বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম দেওবন্দ এর প্রধান মুফতি আল্লামা হাবিবুর রহমান খায়রাবাদী’র খেলাফতপ্রাপ্ত হন।

দারুল উলুম দেওবন্দের প্রধান মুফতী হাবিবুর রহমান খায়রাবাদী এর কাছ থেকে খেলাফত নেওয়ার সময়

ছাত্রজীবন শেষ হতেই তিনি চরমোনাই আলিয়ার শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। পরে দীর্ঘদিন যাবত চরমোনাই আলিয়া ও কওমী মাদরাসার নাযেমে আ’লার দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি উভয় শাখার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ডে নামের স্বতন্ত্র মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের সভাপতি এবং বাংলাদেশর কওমী মাদরাসাসমূহের প্রধান শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ সভাপতি’র দায়িত্বে আছেন।

মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম দীর্ঘদিন চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। অত্যান্ত কৃতিত্ব ও সফলতার সঙ্গে তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর ইউনিয়নের সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা দিয়ে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। পূজার সময় বরিশালের বিভিন্ন ইউনিয়নে পুলিশ মোতায়েনের দরকার হলেও তার ইউনিয়নের হিন্দুদের পুলিশের নিরাপত্তার দরকার হয়নি। প্রশাসনকে সংখ্যালঘুরা বলতো “আমাদের পুলিশ লাগবে না, আমাদের চেয়ারম্যানই আমাদের জন্য যথেষ্ট।” তিনি তার সততা ও নিষ্ঠার কারণে সারা বাংলাদেশে শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে স্বর্ণপদক পেয়েছেন।

ছাত্র জীবন থেকেই সৈয়দ রেজাউল করীম ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং সর্বশেষ তিনি ইশা ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রিয় কমিটির ছাত্র কল্যান সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতির ইতি টানেন। এতে প্রমাণিত হয়; তিনি গদিনিশীন পীর বা আমীর নন, তিনি তাঁর যোগ্যতা বলেই এতদূর এসেছেন। কারণ, পিতা যেই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সেই সংগঠনে তৃণমূল থেকে কাজ করে কেন্দ্রীয় কমিটিতে এসে অন্যের নেতৃত্বে কাজ করে সভাপতির পদ দখল না করে ছাত্র কল্যাণ সম্পাদক হয়ে কাজ করা এবং সেখান থেকেই অবসরে আসাটা যেন তেন মানুষের কাজ নয়। তিনি সংগঠনে কাজ করেছেন, কাজ শিখেছেন। পদ-পদবী আঁকড়ে পড়ে থাকেননি। সেখান থেকে সমৃদ্ধ হয়েছেন; আজ এখান থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সক্রিয় থাকায় তিনি এবং তাঁর অন্যান্য ভাইয়েরা কারা নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ৩ হাজার টাকা চুরির মামলা দিয়ে হাস্যরসের জন্ম দেওয়া হয়েছিল সে সময়।

২০০৬ সালের ২৫ নভেম্বর তাঁর পিতা মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ ফজলুল করীম পীর সাহেব চরমোনাই (রহঃ) ইন্তেকাল করেন। তার ইন্তেকালের পর বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরবর্তী আমীর হিসেবে সর্বসম্মতিক্রমে মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমকে নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির গঠনতন্ত্রে আমীর নির্বাচন পদ্ধতি হচ্ছে, নির্বাচিত আমীরের মৃত্যুর পর বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির মজলিসে খাস ও আমীরের খলিফাগণের সংখ্যাগরিষ্ঠদের সিদ্ধান্তে নতুন আমীর মনোনীত হবেন; তবে শর্ত থাকে যে, নতুন আমীর হিসেবে যিনি মনোনীত হবেন, তাকে অবশ্যই পূর্ববর্তী মরহুম আমীরের খলিফা হতে হবে। তার উপাধি হবে ‘পীর সাহেব চরমোনাই’। তিনি বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির ‘আমীরুল মুজাহিদীন’ এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র আমীর হবেন।

দলীয় প্রধানের গুরুদায়িত্বে এসেই তিনি বিপ্লব সৃষ্টি করেন। অত্যন্ত বিচক্ষনতার সঙ্গে উভয় সংগঠনের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলে রূপ দেন। নিবন্ধন পেতে গিয়ে হারান শাসনতন্ত্র শব্দটি। নিবন্ধন লাভ করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নামে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বাহিরে সবচেয়ে বেশি আসনে দলীয় প্রতিক হাতপাখা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করে দেশপ্রেমিক তৌহিদী জনতার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাননি।এগিয়ে চলছেন দুর্বার গতিতে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আহুত জাতীয় মহাসমাবেশে জনস্রোত

দেশ রক্ষায় ২০০৯ সালে মরণ ফাঁদ টিপাইমুখ বাঁধ অভিমুখে লংমার্চ করে দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হন তিনি। দেশ ও ইসলামের পক্ষে বড় বড় আন্দোলনের পাশাপাশি সংগঠন বিস্তৃত করেন দুর্বার গতিতে। এর আগে ইশা ছাত্র আন্দোলন ছাড়া আর কোনো সহযোগী সংগঠন না থাকলেও তিনি অল্প সময়েই প্রতিষ্ঠা করেন একাধিক সহযোগী সংগঠন। ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন, ইসলামী যুব আন্দোলন, জাতীয় শিক্ষক ফোরাম, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ, জাতীয় আইনজীবী পরিষদ, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ-সহ আরও অনেক সংগঠন। প্রতিটি সহযোগী সংগঠনেরই জেলা, থানা, ইউনিয়ন, এমনকি ওয়ার্ড কমিটিও রয়েছে। ১১শ’র ওপর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতিকে অংশ নিয়েছে দলটি। সিটি নির্বাচনগুলোতে প্রার্থী দিয়ে ভোটের দিক থেকে নজর কেড়েছে সর্বমহলে। ৩০০ আসনে সবার আগে প্রার্থী ঘোষণা করে মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই দেখিয়েছেন তার নেতৃত্ব কতটা সুসংগঠিত। সুজনের রিপোর্টে ওঠে এসেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের চেয়ে বেশি ডিগ্রিধারী প্রার্থী দিয়েছেন পীর সাহেব চরমোনাই’র নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। যা প্রমাণ করে মাত্র একযুগের নেতৃত্বে তিনি সারাদেশে কী পরিমাণ যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করছেন।

তিনি দেখিয়েছেন তাঁর একটি আহবানে বাংলাদেশের সবগুলো আসনে কীভাবে নেতাকর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আবার তাঁর নির্বাচন বর্জনের ডাকে সারাদেশের উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নিয়ে নির্বাচন বর্জন করেছে। প্রার্থীদের প্রস্তুতি থাকার পরও তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচনে আসেননি। এ থেকে প্রতিয়মান হয় যে, সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাঁর নেতৃত্বের প্রতি কী পরিমাণ আনুগত্যশীল। তাঁর সংগঠনে কোথাও বিদ্রোহী প্রার্থী নেই, নেই পাল্টা-পাল্টি কমিটি গঠনের নজির। এমন বিশাল কর্মীবাহিনী থাকার পরও তিনি সংঘাত এড়িয়ে চলেন। নিজেকে ইসলামী আন্দোলনের আমীর হিসেবে নয়, বরং কর্মী হিসেবেই তিনি গর্ববোধ করেন বলে জনসম্মুখে ঘোষণা করেছেন।

রাজপথে কর্মীদের আগে নিজের বুকেই বুলেট নেওয়ার মানসিকতা তাঁর আছে। তাই কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে কর্মীবাহিনী যেন বিপদে না পড়ে, সে সুচিন্তা মাথায় রেখেই কর্মপন্থা ঠিক করেন। লোভ-লালসা আর ভয়-ভীতিকে উপেক্ষা করেই পথ চলছেন তিনি। লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিকে শুরু থেকেই বর্জন করেছেন তিনি। ইসলামী শক্তির একক উত্থানেই তিনি বিশ্বাসী। তোষামোদ শ্রেণীর মানুষকে এড়িয়ে চলেন সর্বদা। হাসিমুখে কথা বলেন, অল্প সময়েই মানুষের হৃদয়ে প্রবেশ করতে পারেন। সর্বশ্রেণীর মানুষের সঙ্গেই সহজ-সরল ভাবে চলা ফেরা করতে পারেন। নিরহঙ্কার একজন মানুষ, চলা ফেরাও একেবারে সাধারণ মানুষের মতো।

মানুষকে শুধু ভালোবাসতেই জানেন, ঘৃণা করতে পারেন না। তাই কত পথভোলা পাপী মানুষের জীবনে পরিবর্তন এনেছেন পরশপাথরের মতো পেয়ে। অন্তরে জ্বালিয়েছে দীনের আলো, দেখিয়েছেন দীন বিজয়ের স্বপ্ন। যুবক বয়সেই নেতৃত্ব কাঁধে এসেছিল। যৌবনের শক্তি প্রদর্শন করেছেন আল্লাহর পথে। তারুণ্যের নেতৃত্বে রচিত হয়েছে স্বতন্ত্র ইসলমী শক্তির একক বলয়। তাঁর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো তাঁর দক্ষতা ও বিচক্ষণতার প্রমাণ বহন করে। যেকোনো কর্মসূচীতে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দেন তিনি। ইসলামী সমাজ বিপ্লবের সংগ্রাম অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে ও পরামর্শভিত্তিক আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। আত্মশুদ্ধি ও জিহাদের সমন্বিত ধারায় এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দল ও বিশাল কর্মীবাহিনীকে।

দেশীয় নোংরা মানসিকতা ও পাপাচার আনাচারের রাজনৈতিক সমুদ্রে তিনি যে শুদ্ধতার যাত্রা শুরু করেছেন, তা সিন্দাবাদের অ্যাডভেঞ্ছারে ভরা আরব্য উপন্যাসের চেয়ে কম কিসে?

দিন রাত দেশের অচেনা অলিগলি একাই ঘুরে বেড়ান। কখনও নদীর বুকে ভেসে বেড়ান। কখনও পায়ে হেঁটে চলেন জনতার মাঝে। কখনও স্বজাতির প্রতিহিংসার ভয়ঙ্কর ঝড়ের কবলে পড়েন, কখনও গিয়ে পড়েন শত্রুর কঠিন বাঁধার কবলে। কখনও ঐক্য ভেবে ভুল করে পা রেখেছেন গাদ্দারের পিঠে, কখনও লড়াই করেছেন মুখোশপরা ভন্ডের বিরুদ্ধে। সাহস, দৃঢ়তা, সততা এবং আল্লাহর প্রতি অসীম বিশ্বাসের কারণে তিনি প্রতিটি বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়েছেন খোদার দয়ায়। অসংখ্য মানুষকে তিনি জাগিয়েছেন, জাগিয়ে চলছেন দীন কায়েমের স্বপ্নে। হয়ে উঠেছেন দেশজোড়া খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বে। সকল ঝড়-ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধের পথ মাড়িয়ে এগিয়ে যাক এদেশের ইসলামী রাজনীতির এই সিন্দাবাদ।

আরও পড়ুন :

শিক্ষাজীবনে কোনো ক্লাসে পাশ করেননি চরমোনাইর পীর : বিতর্কিত সেই জমিয়ত নেতা

যারা দেওবন্দি দাবি করে আবার জমিয়ত করবে না, তারা দেওবন্দের জারজ সন্তান

সে বক্তব্যের ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

 

লেখকঃ বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক কর্মী

কিছু ছবি:

চরমোনাইর মরহুম পীর সৈয়দ ফজলুল করিম র. এর তিন সাহেবজাদা

সৌদি থেকে আগত মেহমানের কাছ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট নিচ্ছেন সৈয়দ রেজাউল করিম

চরমোনাই বাৎসরিক মাহফিল বক্তব্য দিচ্ছেন মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম

ওমান থেকে বাংলাদেশে আগত বিদেশি মেহমান এর কাছ থেকে ক্রেস্ট নিচ্ছেন সৈয়দ রেজাউল করিম

সৌদি আরব ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মহাসচিব ও বাহরাইনের বিশিষ্ট আলেম এর পক্ষ থেকে সম্মাননা

মন্তব্য করুন