

পুরো মুসলিম উম্মাহকে আমি আমার ক্বওম মনে করি : আল্লামা সাঈদ আহমাদ পালনপুরী
সেদিন হযরতুল উস্তায, দারুল উলূম দেওবন্দের শাইখুল হাদীস আল্লামা সাঈদ আহমাদ পালনপুরী হুজুর হাফিযাহুল্লাহ’র মজলিশে বসা ছিলাম।
বাদ আছর হুজুর নিজের কামরায় বসেন। মেহমানদের সময় দেন। ছাত্ররাও এসময় হুজুরের খাস সান্নিধ্যে বসেন। হুজুর ছাত্রদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এক প্রশ্নের জবাব প্রসঙ্গে হুজুর একটি ঘটনা বললেন। দারুল উলুম দেওবন্দে কিভাবে এলেন তিনি তা জানালেন।
তিনি বলেনঃ “যখন আমার দারুল উলূম দেওবন্দে খেদমতের ব্যবস্থা হলো, তখন নিজের এলাকায়ই খেদমতে ছিলাম। গ্রামের লোকজন বললেন: আপনি নিজের এলাকাতেই খেদমত করুন, নিজের কওমের খেদমত করুন, কওম (গোত্র) ছেড়ে যাবেন না। তখন আমি বললাম: ক্বওম বলতে আপনারা কী বুঝাতে চান? আমি তো পুরো মুসলিম উম্মাহকেই আমার ক্বওম মনে করি। অতএব দারুল উলূম দেওবন্দে আমাকে যেতে হবে খেদমতের জন্য। আব্বাজান প্রথমেই রাজী হয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু আম্মাজান কোনোভাবেই রাজী হলেন না। সরাসরি নিষেধ করলেন, এত দূর যাওয়ার দরকার নাই। নিজের এলাকায় ই খেদমত করো। তখন আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম, গ্রামের লোকদের তো বুঝিয়ে দিলাম, আম্মাজানকে কিভাবে বলবো? পুরো মুসলিম উম্মাহর খেদমতের লক্ষ্যে আমাকে দারুল উলূম দেওবন্দে যেতেই হবে। এদিকে আম্মাজানের ইজাযাত ছাড়াও তো যেতে পারি না!
আল্লাহর কাছে দোয়া করতে লাগলাম। এরই মধ্যে আম্মাজান একটা স্বপ্ন দেখলেন যে, ” ঘরের মধ্যে আম্মাজান চেয়ারে বসা, আর আমি ঘরের ভিতর কাঠের একটা উপরে ওঠার উক-এর (মই সদৃশ বস্তুর) একদম চূড়ায় বসা। ওখান থেকে চা’য়ের কাপ নিয়ে আমি আম্মাজানকে বলছি; আম্মা, কাপ টা নিন। তখন আম্মা বললেন, এত উপর থেকে কাপ নেবো কিভাবে? আমি বললাম; হাত তো দিন। তখন আম্মা হাত লম্বা করলেন, আমার হাতের কাপ টা আম্মার হাতে চলে গেল। ” পরদিন যখন আম্মাজান আমাকে স্বপ্নের কথা বললেন, তখন আমি বললাম, আম্মা, এটার তা’বীর হলো; আমি যত দূরেই থাকি না কেন, আপনার প্রতি আমার খেদমত জারী থাকবে। তখন আম্মাজান বুঝে ফেললেন এবং দারুল উলূম দেওবন্দে পড়ানোর অনুমতি দিয়ে দিলেন। আমাদের জন্য উচিৎ হলো : পুরো মুসলিম উম্মাহকেই নিজের ক্বওম (গোত্র) মনে করা। মুসলিম উম্মাহর উপকারের জন্য কাজ করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সারা দুনিয়ার মুসলিম উম্মাহর উপকারের জন্য কাজ করার তাওফিক দান করুন, আমীন।
হুমায়দী হুসাইন
শিক্ষার্থী, দাওরায়ে হাদীস, দারুল উলূম দেওবন্দ, ভারত।