

বনানীতে এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নীকান্ডের পর সারাদেশ থমকে গেছে। দেশের অব্যবস্থাপনা আর ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের অসহায়ত্ব দেখে সবাই কথা বলছেন দেশের এই ভয়াবহ বিপদ নিয়ে। এর আগে চকবাজার ট্রাজেডি, নিমতলা ট্রাজেডিসহ বেশকিছু ভয়াবহ ট্রাজেডি দেখেছে দেশবাসী। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশের বর্তমান এই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে একজন মাদরাসাছাত্র বিশেষ আবেদন জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন-
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!
রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে আপনার যে সাহসী পদক্ষেপ ছিল তা দেখে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশ অভিভূত হয়েছে। আপনার যথার্থ প্রশংসা করেছে। কেউ কেউ তো ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ বা ‘মানবতার জননী’ উপাধিতে ভূষিত করেছেন। যথাসময়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আপনার প্রতি দেশের জনগণের ভালোবাসা বহুগুণে বেড়ে গিয়েছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্যাতনের দৃশ্য স্বচক্ষে দেখতে আপনি চলে গিয়েছিলেন সেই টেকনাফে। তাদের সাথে কথা বলেছেন আপনি। বুকে টেনে নিয়েছেন আপনি। তাদের সমস্যার সমাধান দ্রুত কীভাবে করা যায় সেই পদক্ষেপও নিয়েছেন। জাতিসংঘের বৈঠকে আপনি তাদের পক্ষে কথাও বলেছেন। অনেকে এ বিষয়গুলো ভালো চোখে দেখেনি। কিন্তু আপনি তাতে কর্ণপাত করেননি। আপনি বাঙালি মুসলিম ও মানবতাপ্রিয় জনগণের ভাবমূর্তি বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন। প্রিয়-অপ্রিয়দের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আপনি মাজলুম মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন—এসব কারণে আপনি ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। অন্ততপক্ষে এই একটা জায়গায় দলমতনির্বিশেষে সকলে আপনার কাজটিকে স্বাগত জানিয়েছে।
কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, আপনার প্রশংসায় যারা পঞ্চমুখ ছিলো সেই তারাই আজ আপনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ইদানীং আপনি বা আপনাদের থেকে যেসব কর্ম প্রকাশিত হচ্ছে সেসব কর্ম জনগণ ভালো চোখে নিচ্ছে না। এসব কর্মযজ্ঞ আপনি বা আপনারা ইচ্ছায় করেন বা অনিচ্ছায়, বুঝে করেন বা না বুঝে, কারো ইন্ধনে করেন বা স্ব স্ব বুদ্ধিতে মোটকথা যেভাবেই করেন তা কোনো ক্রমেই ঠিক হচ্ছে না বলেই আমরা বিশ্বাস করি।
একাদশ জাতীয় নির্বাচন-নামক তামাশার নির্বাচনের পর থেকে জনগণ আপনার প্রতি আস্থা বা বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে। যার জ্বলন্ত প্রমাণ উপজেলা নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক অনুপস্থিতি। নির্বাচনের প্রতি তাদের এখন ন্যূনতম আগ্রহবোধ নেই। আবার দেখা যায়, দেশে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেটা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আরেকটা ঘটনার আবির্ভাব হয়ে যায়। যেটাকে এখন জনগণ নাটক হিসেবেই জ্ঞান করে থাকে। যদিও সেখানে সরকারপক্ষের হাত নেই বলে দাবি করা হয় কিন্তু জনগণ সেকথা বিন্দুপরিমাণও আমলে নেয় না। আপনার প্রতি জনগণের এই যে অনাস্থাভাব এটা কিন্তু একদিনে তৈরি হয়নি। এর পেছনে সুদীর্ঘকালের নানান ঘটনাপ্রবাহ জড়িত আছে।
সম্মানিত প্রধানমন্ত্রী!
আপনি কোটি কোটি টাকা খরচ করে আকাশে স্যাটেলাইট পাঠান, বিদেশ থেকে রোবট সুফিয়াকে নিয়ে আসেন, উন্নতমানের অস্ত্রশস্ত্র ক্রয় করে আনেন, কোটি টাকা ব্যায়ে আপনি ইভিএম মেশিন আমদানি করেন—এসব নিয়ে আমরা প্রশ্ন উত্থাপন করবো না। তবে তখনই প্রশ্ন করতে মন চায়, যখন দেখি আমাদের দেশের জনগণ দুর্ঘটনার সময় পনেরো-ষোলো-সতেরো-আঠারো বা বিশ তলা থেকে নামার জন্য সামান্য একটা ‘চঙ্গ’ও[মই] পায় না। মনে তখনই প্রশ্ন জাগে, যখন দেখি জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে জানালা ভেঙ্গে অসহায়ের মতো দুটো হাত বাড়িয়ে সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকে এবং কোনোপ্রকার সাহায্য না পেয়ে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও সেই সতেরো তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা যায়।
দরদি প্রধানমন্ত্রী!
দেশের জন্য যারা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে, দিনরাত এক করে যারা দেশের আর্থিক উন্নয়ে প্রধান ভূমিকা পালন করে, যারা কোনোপ্রকার অবৈধ পন্থা বেছে না নিয়ে বৈধপন্থায় কিছু করার স্বপ্ন দেখে, যাদের ট্যাক্স পেয়ে আপনারা আলিশান জীবনযাপন করেন—সেই তারাই আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ব্যাপক অনিয়মের মধ্য দিয়ে জীবন পার করছে। স্বাভাবিক মৃত্যুর আশাটাও করতে পারছে না তারা। হয়তো আগুনে পুড়ে দগ্ধ হবে, নয়তো গাড়ির চাপায় পিষে মরবে। জনগণের মনে এখন এই ধারণাই বদ্ধমূল।
দেশের প্রধানমন্ত্রী!
আপনার গোচরে বা অগোচরে দেশে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে, সরকারের প্রতিটা খ্যাতে মাত্রাতিরিক্ত দুর্নীতি হচ্ছে, দারোয়ান থেকে নিয়ে সরকারের উচ্চপদস্থ পর্যায়ে ঘুষের মহোৎসব চলছে। ন্যায়বিচার নেয়। সুশাসনের পর্যাপ্ত অভাব। দলীয় ক্যাডারদের অসহনীয় নির্যাতনে মানুষ অতিষ্ঠ।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী!
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় এতো ত্রুটি থাকতে পারে না। আজ বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে হয়তো দেশের এই নাজুক অবস্থা সৃষ্টি হতো না। প্লিজ! দেশের প্রতি আরেকটু ভালোবাসা বাড়ান। দেশের মানুষের প্রতি আরেকটু দয়ার্দ্র হন। যে সাহসী ভূমিকা আপনি রোহিঙ্গাদের প্রতি দেখিয়েছেন সেটা আজ দেশের মানুষের প্রতি দেখান। দুর্ঘটনার কবলে যখন মানুষ নিপতিত হয় তখন বাঁচানোর জন্য যেসব সরঞ্জামাদির প্রয়োজন সেগুলো আগে ক্রয় করুন। দমকলবাহিনীদের জন্য বাজেটের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করুন। উন্নতমানের জিনিসপত্র আমদানি করুন। বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রমাণ করতে উল্লিখিত বিষয়াদির সমাধান এখন বড্ড প্রয়োজন।