

তার নাম রাফিয়া। বয়স মাত্র ১০ বছর। চেহারায় মায়া যেন ঠিকড়ে পড়ছে তার। এ বয়সেই দারিদ্র্যতার সঙ্গে লড়ে যাচ্ছেন ছোট্ট মেয়েটি। অভাবের তাড়নায় বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে ঝিনুক বিক্রি করেন রাফিয়া। এরই মধ্যে ইফতেখার নুর তিশন নামের কক্সবাজার সিটি কলেজের এক ছাত্র রাফিয়ার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করলে সঙ্গে সঙ্গে তা ভাইরাল হয়ে যায়।
এরপর অনেকটাই গৃহবন্দি হয়ে পড়ে ছোট্ট মেয়েটি। পরিচিত হয়ে যাওয়াতে সৈকতে ঝিনুক কুড়াতে গেলে সবাই তার সাথে ছবি তোলে, ভিডিও করে। এজন্য অপহরণ বা এ ধরণের আশংকায় তার পরিবার তাকে আর বাইরে বের হতে দিচ্ছিলো না। অথচ তার গরিব পিতার চিকিৎসা করানোসহ সংসারের হাল ধরে রেখেছিল এই বাচ্চা মেয়েটিই। সৈকতে ঝিনুক বিক্রি করা টাকা দিয়ে টেনেটুনে চলে যেত সংসার। কিন্তু ভাইরাল হয়ে পড়ার পর তার এই আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়। সংসারেও নেমে আসে দুর্বিসহ যন্ত্রণা।
সম্প্রতি জানা গেছে, অসহায় গরিব পিতার চিকিৎসার খরচ যোগাতে ঝিনুক হাতে সৈকতে আর ফিরতে হচ্ছে না রাফিয়াকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল এবং কয়েকটি গণমাধ্যম তাকে নিয়ে অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ করার পর রাফিয়া ও তার পরিবারের দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে অনেকেই। তাদের মধ্যে জনপ্রিয় ইউটিউভার তৌহিদ আফ্রিদি, সুমন এবং ইমনও রয়েছেন। সম্প্রতি ইউটিউব চ্যানেল মজার টিভির মালিক মাহসান স্বপ্ন একটি ভিডিও আপলোড দিলে বিষয়টি আরও অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠে। তাই অনেকেই তার বিষয়ে খোজ নিচ্ছেন তার পরিবারের দায়িত্ব নিতে।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর এক প্রকার গৃহবন্দি হয়ে পড়া রাফিয়ার আর সৈকতের বালিয়াড়িতে ঝিনুক হাতে ফিরতে হচ্ছে না। তার বদলে রাফিয়া ফিরবে স্কুলে। সাম্প্রতিক রাফিয়ার মিষ্টি হাসি ও সুন্দর মায়াবী চেহারার কারণে ভাইরাল হলেও কেউ জানতো না তার পেছনের কঠিন বাস্তবতার গল্প। সংবাদ মাধ্যমে তার পেছনের গল্প তুলে ধরার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় পরিস্থিতি। সংগ্রামী রাফিয়াকে চিনে ফেলে লাখো মানুষ।
রাফিয়ার বাবা আবদুল মালেক বলেন, ‘এখন আমার অনেক ভালো লাগছে। কারণ রাফিয়ার পড়াশোনা আর বন্ধ হচ্ছে না। কয়েকদিনের মধ্যে সে স্কুলে ফিরবে বলে জানান রাফিয়ার বাবা।
কয়েক আগে বছর ঠিক একইভাবে ভাইরাল হয়েছিলেন সমুদ্র সৈকতের আরেক বালক জাহেদ। ‘মধু হই হই’ গানটি তার মাধ্যমে শুধু বিখ্যাত হয়নি। বদলেছে তার জীবনও। জাহেদ বর্তমানে কক্সবাজারের তারকা মানের হোটেল সাইমুনে কর্মরত আছেন। হোটেল কর্তৃপক্ষ তার পড়াশোনা ও তার পরিবারের পুরা দায়িত্ব বহন করেছেন।
অনেকেই মনে করছে ঠিক একই পথে হাঁটছে রাফিয়ার জীবনের গল্পটাও।