লালখান মাদরাসায় পরীক্ষা বিষয়ে যা বলছেন বেফাক মহাসচিব ও আনাস মাদানী

প্রকাশিত: ৭:২০ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০১৯
  • লালখান মাদরাসার বিষয়ে কোন সম্পৃক্ততা আনাস মাদানীর আছে প্রমান করতে পারলে তিনি পদত্যাগ করবেন বেফাক থেকে
  • ছাত্রদের পরীক্ষা দিতে কোন বাধা নেই ; সিদ্ধান্ত কেবল পরীক্ষাকেন্দ্র থাকছে না লালখান মাদরাসায়

গতকাল রবিবার (১৭ মার্চ) রাজধানীর ফরিদাবাদ মাদরাসায় কওমী মাদরাসা সম্মিলিত শিক্ষা বোর্ড ‘আল হাইয়াতুল উলয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া’র কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্তক্রমে চট্টগ্রামের মুফতি ইজহার পরিচালিত লালখান মাদ্রাসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে, লালখান মাদ্রাসায় হাইআতুল উলয়ার কেন্দ্রীয় পরীক্ষার কেন্দ্র থাকবে না।

সেখানের “ছাত্ররা কেন্দ্রীয় পরীক্ষা দিতে পারবে না বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল” কিন্তু পরবর্তীতে হাইয়াতুল উলয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, “ছাত্রদের পরীক্ষার বিষয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই বরং সে মাদ্রাসায় কেবল পরীক্ষা কেন্দ্র থাকবে না কারণ মুফতি ইজহার তাবলীগের বিতর্কিত মুরুব্বী মাওলানা সাদ সমর্থক এবং কওমি মাদ্রাসা ছাত্রদের উপর হামলাকারী তাবলীগের উগ্র এতায়াতিদের সঙ্গ দিচ্ছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। এ অভিযোগেই তার মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষা কেন্দ্র সরানো হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের মহাসচিব ও হাইয়াতুল উলয়ার সদস্য মাওলানা আবদুল কুদ্দুস বলেছেন, পরীক্ষা স্থগিত করার অর্থ হলো সেই মাদরাসার কেন্দ্র স্থগিত করা, ছাত্রদের পরীক্ষা স্থগিত করা নয়। তিনি বলেন, আমরা সব সময় ছাত্রদের অধিকার ও স্বার্থের বিষয়ে সচেতন। তাদের পরীক্ষা কোনো অবস্থায় বন্ধ করা যাবে না। কিন্তু মাদরাসা পরিচালক ও কর্তৃপক্ষ দেওবন্দ ও উলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় আমরা কেন্দ্র স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছি। ছাত্ররা যথারীতি অন্য পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা দেবে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা নিজ অবস্থান থেকে সরে এলে হাইয়াতুল উলয়া আবারও পরীক্ষা কেন্দ্র চালু করার বিষয়ে বিবেচনা করবে বলেও জানান তিনি। (I.T.)

এ সিদ্ধান্ত প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে কওমি মাদ্রাসা ছাত্রদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, বেশিরভাগই বিষয়টি নিয়ে হাইয়াতুল উলয়ার সিদ্ধান্তের বিপক্ষে কথা বলেছেন। তারা বলছেন, মাদরাসার বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত কোনক্রমেই সঠিক নয়। এর মধ্যে হাইয়াতুল উলয়ার প্রধান চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ছেলে ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ-সভাপতি মাওলানা আনাস মাদানীর বিষয়ে অনেকে অভিযোগ তুলছেন। ফেসবুকে দেখা গেছে মাওলানা আনাস মাদানী কে নিয়ে অনেকে বলছেন তিনি এর পিছনে মূল কলকাঠি নেড়েছেন। স্বনামধন্য একজন কবির ফেসবুক পোস্টের পর বিষয়টি নিয়ে আরও অনেকেই কথা বলেছেন।

এ বিষয়ে পাবলিক ভয়েস এর পক্ষ থেকে মাওলানা আনাস মাদানীর সাথে দীর্ঘক্ষন আলোচনা করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেছেন,

লালখান মাদ্রাসা নিয়ে হাইতুল উলয়ার সিদ্ধান্তের সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি আগে থেকে এ বিষয়ে কিছুই জানতাম না বরং ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় হাইয়াতুল উলয়ার কার্যনির্বাহী দায়িত্বশীলদের উপস্থিতিতে লালখান মাদ্রাসার বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এমনকি তিনি দাবি করে বলেন, কেউ যদি লালখান মাদ্রাসার এই ঘটনার সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা দেখাতে পারে বা এই ঘটনায় আমি কোনরূপ প্ররোচনা দিয়েছি এটা প্রমাণ করতে পারে তবে আমি বেফাকের পদ থেকে পদত্যাগ করতে রাজি আছি।


লালখান মাদ্রাসার পরীক্ষা স্থগিত বিষয়ে মাওলানা আনাস মাদানীর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত কেবল লালখান মাদ্রাসার বিষয় নয় বরং হাইয়াতুল উলয়ার সিদ্ধান্ত হল এতায়াতিদের সাথে যেসব মাদ্রাসার মুহতামিম জড়িত থাকবে তাদের মাদ্রাসায় পরীক্ষা কেন্দ্র রাখা হবে না। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে মুফতি ইজহারের মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষার কেন্দ্র সরানো হয়েছে।

ছাত্রদের পরীক্ষা দিতে কোন বাধা আছে কি না জানতে চাইলে আনাস মাদানী বলেন, ছাত্রদের পরীক্ষায় কোন বাধা নেই তারা যে কোন কেন্দ্রে নিজেদের খুশিমতো পরীক্ষা দিতে পারবে। সিদ্ধান্ত কেবল এতোটুকু_লালখান মাদ্রাসা পরীক্ষা কেন্দ্র থাকবে না। হাইয়ার মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি উপস্থিত ছিলাম তবে এ বিষয়ে আমার কোন অবস্থান ছিল না বরং দায়িত্বশীলরা সম্মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিষয়ে।

“আপনার ব্যাপারে ফেসবুকে যে আলোচনা হচ্ছে সে বিষয়ে আপনার মতামত কি” জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি ফেসবুক চালাই না এবং ফেসবুকের এসব আলোচনাকে আমি গুরুত্ব দেই না বরং এই ঘটনায় আমাকে নিয়ে কেউ যদি কোন কথা বলে সেটার জন্য তারা আল্লাহর কাছে পাকড়াও হবেন।

প্রসঙ্গত : লালখান মাদ্রাসা থেকে হাইয়াতুুল উলয়ার পরীক্ষা কেন্দ্র সরানোর বিষয়ে সিদ্ধান্তের পর মুফতি ইজহারের ছেলে লালখান মাদ্রাসার কার্যনির্বাহী মুহতামিম মুফতি হারুন ইজহার কঠোর প্রতিবাদ ব্যক্ত করেছেন।

মুফতি হারুন ইজহার এর প্রতিবাদ এখান থেকে পড়তে পারেন

লালখান মাদরাসার কেন্দ্রীয় পরীক্ষা স্থগিত ; মুফতী হারুণ ইজহারের ক্ষোভ

মন্তব্য করুন