

কেবল লালখান মাদরাসাই নয় যারাই জমহুর আলেমদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে তাদের ব্যাপারেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
চট্টগ্রামের লালখান বাজার কওমী মাদরাসার কেন্দ্রীয় পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সম্মিলিত কওমী শিক্ষাবোর্ড আল হাইয়াতুল উলয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ। লালখান মাদরাসার পরিচাল মুফতী ইজহারের উপর বাংলাদেশের উলামায়ে কেরামের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তাবলীগের বিতর্কিত মুরুব্বি মাওলানা সা’দের পক্ষে অবস্থান নেয়ার অভিযোগ এনে দায়িত্বশীলদের মতামতের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাইয়াতুল উলয়ার সহ-সভাপতি মাও. মোসলেহউদ্দিন রাজু।
আজ (শনিবার) রাজধানী ঢাকার ফরিদাবাদ মাদরাসায় হাইয়াতুল উলয়ার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন হাইয়াতুল উলয়ার চেয়ারম্যান আল্লামা আহমদ শফী।
তবে এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুফতী ইজহারের ছেলে মুফতী হারুণ ইজহার ফেসবুক একটি প্রতিবাদী পোস্ট করে লিখেছেন,
কওমী সংস্থাগুলো কি কারো পকেট কমিটি? আল্লাহতালা জালেমদের পাকড়াও করুন আমীন! আমরা জানি কোথায় থেকে কলকাঠি নাড়া হচ্ছে। জামিয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া লালখানবাজারের কোন ছাত্র-শিক্ষক অভিভাবক ও শুভানুধ্যায়ী মাওলানা সা’দ সাহেবের কখনো অনুসারী ছিলনা। আমরা মূলধারার ওলামাদের সঙ্গে আছি আদর্শিক ও ঐতিহ্যিক কারণে। আমার আব্বার কিছু বক্তব্য একান্ত তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়, এটার সাথে আমাদের কোন যোগসূত্র নেই। এবং গত সপ্তাহে সা’দ সাহেবের অনুসারীরা আমাদের মাদরাসার মাহফিলকে প্রভাবিত করতে চাইলে আমরা সম্মিলিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তা স্থগিত করি। আমাদের এরকম সুস্পষ্ট অবস্থান সত্ত্বেও এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এহেন ন্যক্কারজনক সিদ্ধান্তের পিছনে বাতিল শক্তির চক্রান্ত রয়েছে সন্দেহাতীতভাবে। আমাদের সাথে কোনরকম যোগাযোগ ছাড়াই এমন সিদ্ধান্ত সাংগঠনিক ধারার আওতায় কি পড়ে? কওমী মাদরাসা ও সংস্থাগুলো আর কতবছর এভাবে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীবিশেষের কাছে জিম্মি হয়ে থাকবে? অসংখ্য অযোগ্যদেরকে বিভিন্ন কমিটিতে যুক্ত করে কেন কওমী প্রজন্মকে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে? আল্লামা আহমদ শফির সাথে শীর্ষ আলেমদের (যারা হাটহাজারী মাদরার ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট ফুজালা) দূরত্ব তৈরী করে আনাড়ি অপরিণামদর্শী চক্র কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে? আমি প্রতিমাসে প্রায় একডজন হেফাজতের মামলায় হাজিরা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি। কোন একদিন তারা আমাদের, আহতদের, শহীদ পরিবারগুলোর খবর নিয়েছে? ওরা নাকি কওমীর অভিভাবক ? ওরা নাকি দেওবন্দের পতাকাবাহী? অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হবে, নিরীহ তালিবুল ইলমরা পরীক্ষা দেবে, এবং লালখানবাজার মাদরাসা পরীক্ষার কেন্দ্র থাকবে। অন্যথা ইনশাআল্লাহ আমারা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ ঘোষণা করব।
তবে হাইয়ার নেতৃবৃন্দ জানান, লালখান মাদরাসার পরিচালক মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী দারুল উলুম দেওবন্দের সিদ্ধান্ত ও উলামায়ে কেরামের অবস্থানের বিরোধিতা করেছেন এবং বিতর্কিত তাবলিগি মুরব্বি মাওলানা সাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তাই তার মাদরাসার তাকমিল জামাতের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আপাতত তারা পরীক্ষা দিতে পারবেন না। তবে মাদরাসা পরিচালক ও কর্তৃপক্ষ যদি উলামায়ে কেরামের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং নিজেদের ভ্রান্ত অবস্থান ত্যাগ করতে সম্মত হন তবে পরবর্তীতে সেই আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তারা আরও জানান, শুধু লালখান নয়; যেসব আলেম ও তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একই রকম অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদেরকে ডেকে এনে এই বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করতে বলা হবে। যদি তারা জমহুর (অধিকাংশ) উলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তবে তাদের ব্যাপারে একই রকম সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন, আল্লামা আশরাফ আলী, আল্লামা আজহার আলী আনোয়ার শাহ, মুফতি রুহুল আমিন, মাওলানা মুহিব্বুল হক, মুফতী মোহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, মাওলানা মাহফুজুল হক, মুফতি নুরুল আমিন, মুফতি মোহাম্মদ আলী, মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী প্রমুখ।