আর্থিক বা সামরিক শক্তি নয়, দরকার ঈমানী শক্তি

প্রকাশিত: ৪:৩৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৭, ২০১৯
আরিফ রব্বানী
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টাচার্চ শহরের বাইতুন নুর মসজিদে এক খ্রিস্টানসন্ত্রাসী বন্দুকহামলা করে পঞ্চাশোর্ধ মুসলিমকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। শুধু হত্যা-ই নয়, ইসলামপন্থীদের মাঝে উত্তেজনা বাড়াতে সেই হত্যার ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দিয়েছে গণমাধ্যমে। পুরো মুসলিমবিশ্ব আজ এই ঘটনায় শোকাহত। এটা যে মূলত মুসলিমদের দূর্বলতা বা ব্যর্থতার জাজ্বল্যমান প্রমাণ সেটা এখন সবাই আচ করতে পেরেছে। যদিও চিনের ইউঘুর, ফিলিস্তিন ও কাশ্মীরি মুসলিমদের ওপর চলমান নির্যাতনের ফলে সচেতন মুসলমানরা তাদের দূরাবস্থার বিষয়টা অনেক আগ থেকেই অবগত হয়েছে। তথাপি মুসলিমদের ইবাদতখানায় ঢুকে ইবাদতরত মুসল্লিদের এভাবে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার নির্মম দৃশ্য—সেই অবগতির মাঝে আরেকটা বার্তা দিয়ে গেল। ‘জিহাদ’ ছাড়া মুসলিমদের বিকল্প কোন পথ নেই—এই বিশ্বাস কিতাবপড়ুয়া সবাই রাখে। ইসলামকে বিজয়ী করতে চাইলে, সর্বত্র ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে ‘জিহাদ-ই  যে একমাত্র পথ’ এটা কেউ অস্বীকার করবে না আশাকরি। অন্য কোন পন্থা বা পদ্ধতিতে স্থায়ীভাবে কোন ভূখণ্ডে ইসলামকে রাষ্ট্রনীতি হিসেবে ঘোষণা করা যাবে না—এটাও জানে সবাই। 
তবুও মুসলিমদের একটা বৃহৎ অংশ আজ সেই ‘জিহাদ’ থেকে বহুদূরে। বলতে গেলে পলায়নরত। জিহাদের কথা শুনলে ‘ছাইরা দে মা কাইন্দা বাঁচি’ অবস্থাতে দাঁড়াই। যদিও সময়েসময়ে জিহাদের কিছুটা চেতনা জাগ্রত হয় কিন্তু সেটা সাময়িকের জন্য। বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। রাতে জাগলে সকালেই স্তিমিত হয়ে যায়। সকালে জাগলে বিকালে আর সেই চেতনার হদিস থাকে না। এই যে একটা ‘হুটহাট’ মনোভাব এটা আমার ভেতরেও যেমন কাজ করে, আপনার ভেতরেও তেমন কাজ করে। আপনিও যেমন কোনো এক সালাউদ্দিন আইয়ুবির আহবান শোনার অপেক্ষায় থাকেন; জিহাদি কাফেলায় শরিক হওয়ার তামান্না ভেতরে ভেতরে লালন করেন—আমিও তেমন করি। কিছুটা প্রতিবন্ধকতার দোহাই দিয়ে আপনিও যেমন চুপ মেরে থাকেন—আমিও তেমন থাকি। যেহেতু বিষয়টা ‘বরাবর’ সেহেতু শুধু শুধু কেন অপরকে দোষারোপ করি আমরা? কেন অমুক পীর, অমুক দল, অমুক আলেম ‘জিহাদের ডাক দেয় না’ বা ‘আমিরুল মুজাহিদিন বলে অথচ জিহাদের খবর নেই’ বলে বলে নিজের অজ্ঞতা প্রকাশ করি? সবাই যখন একই নাওয়ের মাঝি, একই পথের পথিক তাহলে অন্য কেউ করে না বলে টিপ্পনী কাটি কেন? এটা আসলে আমাদের উগ্র মেজাজেরই বহিঃপ্রকাশ।

আমরা কেন জিহাদে যাই না, কেন জিহাদের জন্য শর্ত খুঁজে বেড়াই, কেন মনগড়া তাবিল বা তাহরিফ করে বেড়াই—এগুলো আমি আপনি ভালো করেই জানি। আমাদের শক্তি নেই বলেই আজ এত লাঞ্ছনার ভার সইতে হচ্ছে। আমরা দুর্বল বলেই জালিমরা আজ মাথায় চড়ে বসছে। আমরা কাপুরুষ বলেই বিধর্মীদের হাতে আমাদের মা-বোন দিনেরাতে ধর্ষিতা হচ্ছে। এই যে শক্তির কথা বললাম, দুর্বলতার কথা শোনালাম ওগুলো কিন্তু আর্থিক ও সামরিক শক্তি বা দুর্বলতা নয়। আমরা শক্তিহীন ইমানের দিক দিয়ে। আমরা দুর্বল ইমান মজবুত নেই বলে। আমরা কাপুরুষ সেজেছি আমাদের ইমানে ঝংকার ধরেছে বলে। এই ইমান-নামক শক্তিটা যতদিনপর্যন্ত সবল না হবে ততদিনপর্যন্ত মার খেয়েই যাবো, আর একে অন্যকে দোষ দিতেই থাকব।


ইসলামের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে অমুসলিমদের তুলনায় মুসলিমরা সবসময় আর্থিক ও সামরিক শক্তিতে কম ছিল। কিন্তু মুসলিমদের ইমানিশক্তির কাছে তারা বারবারই পরাভূত ও পরাজিত হয়েছে। যেদিন থেকে ইমানিশক্তি নিস্তেজ হতে শুরু হয়েছে সেদিন থেকে মুসলিমরা আবার পরাজিত হতে শুরু করেছে। সেই পরাজয়ের ধারাবাহিকতা আজও চলছে। এখনও যদি মুসলিমরা ‘আমলে সলেহ’ আর ‘মজবুত ইমান’কে ধারণ করতে পারে তাহলে পুরো বিশ্ব মুসলিমদের পায়ের নিচে এসে যাবে, ইনশাআল্লাহ। যার সুসংবাদ সুরা নুরের পঞ্চান্ন নাম্বার আয়াতে আল্লাহপাক বলে দিয়েছেন।
বর্ণিত হচ্ছে, ”তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস (ঈমান) স্থাপন করে ও সৎকর্ম (আমলে সলেহ) করে, আল্লাহ তাদের ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদের অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমম তিনি দান করেছেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদের শান্তি দান করবেন। তারা আমার ইবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরিক করবে না। এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে, তারাই অবাধ্য।”
তাই আসুন পরস্পর পরস্পরকে আপত্তিকর কিংবা উস্কানিমূলক বক্তব্য বা মন্তব্য ছুড়ে না দিয়ে ঈমানকে শক্তিশালী এবং আমলকে সলেহ করতে থাকি। এই দুটো জিনিস ঠিক হয়ে গেলে ’জিহাদ’ করতে আর কোনো দ্বিধা বা পিছুটান থাকবে না, ইনশাআল্লাহ।
ছাত্র-
জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলুম, ঢাকা।

মন্তব্য করুন