অদ্ভুত উট ঘুরে ফিরে চলে আসে

প্রকাশিত: ৪:২১ অপরাহ্ণ, মার্চ ১২, ২০১৯
দু’একদিন আগের নিউজ। উত্তর কোরিয়ায় একটি ইলেকশন হয়েছে। একজন প্রার্থী। ব্যালট একটি। সীল মারামারি নাই। কাগজটা নিয়ে টেবিলের উপর রাখার নামই ওখানকার ভোট। শতভাগ ভোট কিমকে দিয়েছে সে দেশের জনগন! 
বাংলাদেশ এখনো উত্তর কোরিয়া হয়নি বা হবেনা। এখানে গনতন্ত্র চলমান। কোরিয়ার চেয়ে অনেক উন্নত।এখানে ব্যালটে একাধিক প্রার্থীর নাম থাকে। প্রার্থীরা দৃশ্যমান। তবে নির্বাচনের আগে প্রার্থীর মাথা ফাটতে পারে, ঠ্যাং ভাঙতে পারে, সাদা পাঞ্জাবি লাল হতে  পারে, তবুও একটা নির্বাচন হয়! ফলাফলও ঘোষিত হয়। তবে এখানে আগের রাতে একপক্ষের ভোটের মচ্চব চলে।ভোরে ব্যালট বাক্স ফুল-ফিল।
আমরা জনগন বিগত নির্বাচনের কারগুজারি করছিলাম। এর মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ডামাডোলে তা চাপা পড়ে গিয়েছিল। সকলের একটা আশাবাদ ছিল, অন্ততঃ ডাকসু নির্বাচন ত্রিশে ডিসেম্বরের চেহারা ধারন করবে না।
আমার বৃহত্তর বাড়ী বরিশালে। আমি ক্ষুব্ধ ও লজ্জিত। ঢাকাস্থ এক বরিশালের বন্ধু আক্ষেপ করে বলেছিলেন, “আমরা বরিশাইল্লারা বড় কোন দায়িত্ব পেলে এমনভাবে দায়িত্ব পালন করি, যাতে মানুষ গালির একটা উপলক্ষ্য পায়। এমন আকাম করি, যাতে মানুষ গালির হাট বসায়।”
সারা বাংলাদেশে উন্নয়ন হলে তাতে কি? লঞ্চ যোগে বরিশালে আসুন আর দেখুন একটা বিভাগীয় শহরটার সিনারিও। এখানের কেউ মন্ত্রীত্ব পেলে নিজের উন্নয়ন হয়। জনগন যেই, সেই।

ওয়ান ইলেভেনের সময় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়ে প্রথম যে কর্মটি করেছিলেন, নিজ বাপের বাড়ি, যেখানে ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বাস করছিলেন, তিনি সেখানে পুলিশ দ্বারা তল্লাশি চালিয়ে মদের কয়েকটি বোতল উদ্ধার করছিলেন। আর আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এক কাপড়ে পালিয়ে বেঁচেছিলেন। পরবর্তীতে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নাকি বলেছিলেন- এমন দিনও আসতে পারে, তাঁর কাপড় রেখেই ভাগা লাগতে পারে!


সিইসি কেএম নূরুল হুদা বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি। প্রভুর মন ও মাণ রক্ষা করতে গিয়ে এতটা নগ্ন হওয়ার আদৌ কি দরকার ছিল? তিনি কখন কি বলেন নিজেও জানেন না। একজন সাবেক সচিবের কান্ডজ্ঞাণ এত নীচে নামতে পারে? ভাবা যায়? তিনি এখন ভেক ধরেছেন। রাতের ভোট প্রসংগে কথা বলে আরো বিরক্তি ও ঘৃণার বস্তু বানালেন নিজেকে।
মোঃ আক্তারুজ্জামান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। তিনি ডাকসু নির্বাচন নিয়ে যে তেলেসমাতি করলেন, এটা ডাকসুর ইতিহাসে নেই। হিস্টোরী ব্রেক। ডাকসুর ফলাফলের নিউজ দেখে ঘুমাতে গেলো জাতি। শেষ রাতে তিনি কী ঘোষনা করলেন ? যা কেউ বিশ্বাস করছে না। তিনি একজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। ঢাবি শিক্ষক। আজ তার মর্যাদা কোথায় গিয়ে দাঁড়ালো? খোদ ছাত্রলীগের হাতে নাজেহাল হচ্ছিলেন। তাঁর অসহায় মুখ দেখেছি সিনেট ভবনে, ছাত্রলীগের ছেলেরা যখন ঘিরে রেখেছিল ভিপি হিসেবে শোভনকে ঘোষনা না করায়।
আমি যমুনা টিভির ৪৬ মিনিট ভিডিও দেখেছি। তাঁর চেহারা দেখে মনে হয়েছে তিনি জনতার হাতে ধৃত হয়েছেন। একটু পর গনপিটুনি শুরু হবে, এমন একটা আবহ ছিলো সেখানে।অবশ্য ছাত্রলীগ থেমে গেছে তাদের বৃহত্তর স্বার্থের জন্য। ঠিক এ কারণেই তিনি রক্ষা পেলেন।
উপরের তিনজনই নিয়োগকর্তার আদেশ পালন করতে গিয়ে জাতির কাছে চরম বিতর্কিত হয়েছেন, নিন্দিত হয়েছেন। অথচ দরকার ছিল না। প্রভুর অর্ডার ফলো করতে গিয়ে পরনের লুঙ্গি খুলে গলায় ঝুলাতে হবে নাকি? ঢাবির ইতিহাসে তিনি সবচেয়ে অজনপ্রিয় ভিসি হিসেবে ইতিহাস স্মরণ করবে। দুঃখের কথা, বর্ণিত তিনজনের বাড়ীই কিন্তু বৃহত্তর বরিশালে। এরা প্রচন্ড রকম প্রভু ভক্ত। প্রভু ভক্ত বিশেষ প্রাণীর খাসলত এদের মাঝে। এরা মালিকের হুকুম ছাড়া আর কিছু বুঝে না।
ভিসির বাড়ীর বাইরের দেয়ালে লেখা গ্রাফিতি যদি তিনি পড়েন, তাহলে অনুধাবন করবেন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতটা ক্ষতি করেছেন। ১১ ই মার্চ ঢাবির মৃত্যু হয়েছে। এমনি এক সত্য কথা তাঁর বাড়ীর দেয়ালে লেখা।
কাল সমগ্র জাতির চোখ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নামক গ্রামটির দিকে। যদিও এ গ্রামকে কবি আল মাহমুদ বহু পূর্বে  তাঁর কবিতায় ‘ডাকাতের গ্রাম’ বলেছিলেন। হ্যাঁ শেষ রাত ডাকাতির উপযুক্ত সময়। আর সে সময়েই ঘোষিত হলো অবিশ্বাস্য ফলাফল। ভোটাররা কোটা আন্দোলনের নেতাদের প্যানেলে ভোট শুধু দুজনকেই ভোট দিয়েছে। এটাও আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে?
এই তো আমার হাতে একটি নিউজ পেপার, তাতে তো ভিপি হিসেবে নূরুল হক নূরের নাম তো ছিল না। শোভনের নাম এসেছিল। আর প্রিন্ট মিডিয়া মাঝরাতে ভোটের হিসাব না জেনেই বুঝি শোভনের নাম লিখে দিয়েছে? শোভন- রাব্বানীকে বিজয়ী হিসেবে পুষ্প দ্বারা অভিনন্দন জানানোর ছবিও দেখেছি। অথচ তিনটার পর থেকে নুরুল হক নূরের নাম ভিপি পদে বিজয়ী ঘোষনা করা হলো।
সমস্যা হলো, এটা খোদ ছাত্রলীগও বিশ্বাস করছে না। তাঁরা মানতে চাইছে না। এমন ডিসিশনের ব্যাপারে ছাত্রলীগ আগে জানলে হয়তো এতটা মারমুখী হতো না। তবুও বৃহত্তর স্বার্থ বলে কথা। আমরা আমরাই তো!
ছাত্রলীগের ছাত্রীদের দ্বারা পিটুনীতে আহত হওয়া নূর এখন কোথায়? না তিনিও প্রভাবিত মালিকের দ্বারা? বৃহত্তর স্বার্থ বলে কথা। বলা তো যায় না! নূরের বাড়ীও তো দক্ষিন বঙ্গে, বৃহত্তর বরিশালে। গলাচিপায় নাকি! তাহলে তো খাপে খাপ মিলে গেছে। মুনাফিক চরিত্রটা যেন বরিশালের জন্য খুব মানায়।
আসল কথা হলো, জাতি কি কইলো আর গেলো! তাতে কি? কিন্তু জনগনের শেষ ভরসাটারও ব্যবচ্ছেদ হয়ে গেলো। এ সম্ভ্রমহানি না করলেও পারতেন। আমার মত অনেকেরই ন্যুনতম বিশ্বাস ছিল, ভোট নিয়ে এখানে তামাশা করা হবে না।
মানুষের বিশ্বাস তথা আস্থার প্রতিদান এত বাজে হতে পারে, তা এবারে সরাসরি দেখা হলো। মানুষের আস্থার জায়গা আর রইলো না। এ জাতির কপালে শনির দশা ভর করেছে। স্বৈরাচারী এরশাদ জামানার বিখ্যাত উক্তি টি মনে পড়ছে- ‘অদ্ভুত উটের পিঠে চলছে বাংলাদেশ।’

লেখক-

এ্যক্টিভিস্ট ও বিশ্লেষক।

মন্তব্য করুন