

ইসলামী সঙ্গীত জগতের উজ্জল নক্ষত্র ছিলেন আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.। বাংলাদেশে ইসলামী সঙ্গীতে জাগরণের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা অপরিসিম। দীর্ঘ প্রচেষ্টায় সারাদেশ ব্যাপী তৈরি করেছেন একঝাঁক সঙ্গীতামোদী। কলরব নামের জাতীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন তাঁর হাতেই গড়া। আজ কলরব দেশব্যাপী প্রতিষ্ঠিত একটি ইসলামী সঙ্গীতগোষ্ঠী। আইনুদ্দীন খুব কম বয়সেই মৃত্যুপথের যাত্রী হন। ২০১০ সালে তিনি রোড এক্সিডেন্টে মৃত্যুবরণ করেন।
মৃত্যুর পর তার পরিবার অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়ে। সম্প্রতি গত ৪ মার্চ সোমবার আইনুদ্দীন আল আজাদের বাবা মাস্টার শমসের আলী ব্রেইনস্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এক সপ্তাহ হলেও তার উন্নতি হয়নি তেমন। ধিরে ধিরে এগিয়ে যাচ্ছেন মৃত্যুর দিকে। চিনতে পারছেন না কাউকেই। ঝিনাইদাহ সদর হাসপাতালে কয়েকদিন ভর্তি থাকার পর সেখান থেকে তাকে রিলিজ করে দেওয়া হয়। পরবর্তিতে তাকে ফরিদপুর মেডিকেলে নিয়ে ভর্তি করেন পরিবারের লোকজন। সেখানে অনুন্নত এবং বেশ অসহায় অবস্থায় তাকে চিকিৎসাসেবা নিতে দেখা যায়। “স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে হাসপাতালের ময়লা বিছানায় শুয়ে আছেন তিনি” এমন একটি ছবি ফেসবুকে ইসলামী সঙ্গীতপ্রেমীদের মাঝে ভাইরাল হয়ে পড়ে। যেখানে সবাই তুমুল সমালোচনা করছে আইনুদ্দীন আল আজাদ সংশ্লিষ্ঠদের নিয়ে। বিশেষ করে তার হতে গড়া “কলরবের” সিনিয়র শিল্পীদের বিষয়ে অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করেন।
হাসপাতালের বিছানায় আইনুদ্দিনের পিতা। এ ছবি নিয়ে ফেসবুকে চলছে বিরূপ মন্তব্য।
এ বিষয়ে পাবলিক ভয়েস থেকে অনুসন্ধান চালিয়ে উভয়পক্ষের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে।
কলরবের নির্বাহী পরিচালক মাও. সাঈদ আহমেদ পাবলিক ভয়েসকে বলেন, “আমরা কলরবের পক্ষ থেকে তার খোঁজখবর রাখছি, তার সামগ্রিক যেকোনো ধরণের সহায়তাও আমরা করছি। মরহুম আইনুদ্দীন আল আজাদের সন্তান আসাদুল্লাহ গালীবকে আইনুদ্দীনের বাবা দেখতে চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাকে আমাদের একজন প্রতিনিধির সঙ্গে ঢাকা থেকে পাঠিয়ে দিয়েছি এবং আর্থিক সহযোগিতাও করেছি। এমনকি এরপরও যেকোনো সহায়তা করতে আমরা প্রস্তুত আছি”। “আমাদের একজন লোক সেখানে সার্বক্ষনিক সময় তাঁর সুস্থতার জন্য সেবায় নিয়োজিত থাকবে” এ কথাও বলেন তিনি। কলরবের পক্ষ থেকে তাকে দেখতে যাবেন কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের যাওয়ার প্রসেসিং চলছে।
বিষয়ে কলরবের সিনিয়র শিল্পী হলিটিউনের সিইও মুহা. বদরুজ্জামানের কাছে মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তিনি তার ফেসবুক পোস্টে এ বিষয়ে একটি পোস্ট করে জানিয়েছেন, তারা কলরবের পক্ষ থেকে আইনুদ্দীন আল আজাদের পিতার খোজ খবর নিচ্ছেন এবং তিনি তার পোস্টে আইনুদ্দীন আল আজাদের পিতার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
কলরবের অপর অংশের পরিচালক শিল্পী মাও. আবু সুফিয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি পাবলিক ভয়েসকে বলেন, আমি “আমাদের কলরবের” পক্ষ থেকেও যোগাযোগ করেছি এবং আইনুদ্দীন আল আজাদের ছোটভাই সিরাজুল ইসলামের কাছে কিছু আর্থিক সহযোগিতাও পাঠিয়েছি। আমরা এরপর আরও খোজ খবর নেবো। আমাদের চেষ্টা অব্যহত থাকবে তার চিকিৎসার ব্যাপারে।
এ বিষয়ে আইনুদ্দীন আল আজাদের বড়ভাই শামসুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, কলরবের সিনিয়র শিল্পী মুহাম্মাদ বদরুজ্জামানের কাছে বাবার অসুস্থতার বিষয়ে জানানোর পর তারা “পাঁচ হাজার টাকার” প্রাথমিক আর্থিক সহযোগিতা করেছে। আব্বা আমার ভাই আইনুদ্দীনের সন্তান গালীবকে বারবার দেখতে চাইলে কলরবের পক্ষ থেকে তাকে ঢাকা থেকে পাঠানো হয় এবং সে তাঁর দাদার সঙ্গে দেখা করে আবার ঢাকা চলে যায়। মাদরাসা ছুটি হলে সে আবার আসবে বলেও জানিয়েছে তারা। এখন তার মাদরাসায় পরীক্ষা চলছে।
আপনার বাবার অসুস্থতার কী অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বাবার অবস্থা খুবই খারাপ, কাউকেই তেমন চিনতে পারছেন না, প্রায় এক সপ্তাহ যাবত তিনি অসুস্থ হয়ে আছেন। যেভাবে বাবার খোজ-খবর নেওয়ার কথা সেভাবে কেহই খোজ নেয়নি। বাবার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। আর্থিকভাবে আমরা তার চিকিৎসা চালাতে হিমশিম খাচ্ছি” অন্তত বাবার চিকিৎসার জন্য সবাই বিশেষ করে যারা আমার ভাইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল, তারা একটু এগিয়ে আসা উচিত যাতে বাবা সুচিকিৎসা পান।
কেবল শামসুল আলমেরই নয় এ দাবি অসংখ্য ইসলামী সঙ্গীতপ্রেমীদের। সবাই-ই চায় আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ. এর পিতার সর্বোচ্চ চিকিৎসার জন্য আইনুদ্দীন আল আজাদের প্রতিষ্ঠিত কলরবের পক্ষ থেকে জোড়ালো ভূমিকা রাখা হোক! পাবলিক ভয়েসকে ফোন করেও অনেকে এমন দাবি জানিয়েছেন।