ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত তোমরাই আনিবে রাঙা প্রভাত

প্রকাশিত: ৭:০১ অপরাহ্ণ, মার্চ ১০, ২০১৯
 -এইচ এম কাওছার বাঙ্গালী
অন্যায় যখন নিয়ম হয়ে ওঠে, প্রতিরোধ তখন কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। লেখার শুরুতেই একটি উদ্ধৃতি বলে নিলাম। এ বক্তব্যটির  জনক হচ্ছেন আর্জেন্টাইন মার্কসবাদী নেতা চে-গুয়েভারা। যিনি ছিলেন গোটা বিশ্বের বাম রাজনীতির গুরু। যিনি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার লক্ষ্যে অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য আজ এই চে-গুয়েভারার সুযোগ্য (!) অনুসারীরা অন্যায় থেকে মহা-অন্যায় প্রতিষ্ঠার বিপ্লবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচন এর কথাই বলছি- মুক্তবুদ্ধি চর্চার চারণভূমি, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। “ডাকসু” (DACSU) হচ্ছে- ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’ এর সংক্ষেপিত রূপ। বাংলায় বলে- ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ’ এর শুরু হয় ১৯২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে।
তখন নাম ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (DACSU) ‘ডাকসু’। শিক্ষার্থীদের ১ টাকা চাঁদা দিয়ে এর সদস্য হতে হত। তখন থেকেই সকল জুলুম, অন্যায় আর অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এই ‘ডাকসু’। ভাষা, স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার বলা হয় একে। ১৯৯৫৩ সালে এর গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে নাম রাখা হয়- ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (DACSU) নামে’। দেশ বিভাগের পর ১৯৭২ সালে ডাকসু’র প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আর জি. এস নির্বাচিত হন মাহবুবুর রহমান। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০-১৯৯১ সেশনে।
তখন ভিপি নির্বাচিত হন আমানুল্লাহ আমান আর জি. এস খায়রুল কবির খোকন। এরপরে 29 বছরে আর ঢাকা ইউনিভার্সিটি’তে ডাকসু নির্বাচন হয়নি। যদিও ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুসারে বলা আছে যে, প্রতিবছর ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এই ২৯ বছর পর্যন্ত আর কোনো নির্বাচন হয়নি।
স্বাধীনতার পরে মোট সাতবার ‘ডাকসু’ নির্বাচন হয়। এই ডাকসু নির্বাচন বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য নির্বাচন। বাংলাদেশের মানুষের কাছে এটি দ্বিতীয় সংসদ নামে পরিচিত।
২.
অনেক কল্পনা-জল্পনার অবসান ঘটিয়ে আগামী ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন হবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। এই ঘোষণার পর থেকেই মুখরিত হয়ে ওঠে দেশসেরা এই বিদ্যাপীঠের ক্যাম্পাস। রীতিমতো ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনও নিয়মতান্ত্রিকতা রক্ষা করে। দফায় দফায় বৈঠক করে কর্তৃপক্ষের সাথে। গতবছর (২০১৮ সালের) ১৫ অক্টোবর ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান স্যারের সাথে দেখাও করেন তারা। ভিসি মহোদয় তাদের আশ্বস্ত করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা বলে আসছে কিছু উগ্রবাদী সংগঠন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ জানুয়ারি নির্বাচনের অধিকার পেতে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে বিক্ষোভ মিছিল করে ইশা ছাত্র আন্দোলন। তাতে আবারো টনক নড়ে বাম প্রগতিশীল দাবিদার ছাত্রনেতাদের। তারা আপত্তিজনক বিবৃতি দিতে থাকেন। দাবি করেন অলিখিতভাবে ক্যাম্পাসে ধর্মীয় রাজনীতি নিষেধ করা হয়েছে অনেক আগেই। তাদের সাথে সুর মিলায় ছাত্রদলসহ কিছু লক্ষ্যভ্রষ্ঠ দলের নেতারা। আশ্চর্য! যে দেশে ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলো সরকারী অনুমোদনে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে সে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে ধর্মীয় সংগঠন নিষিদ্ধের দাবি শুধুই হাস্যকর নয় বরং গভীর উদ্বেগজনকও।


বামদের বিবৃতির পাল্টা বিবৃতি দেন ইশা ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি, চৌকস ছাত্রনেতা, ঢাকা ইউনিভার্সিটির মেধাবী ছাত্র ‘শেখ ফজলুল করিম মারুফ’। তার বক্তব্যের ফলে চেতনা ফিরে পায় গোটা বাংলাদেশের তরুণ ছাত্রসমাজ। তিনি অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় জানান- যদি এই ক্যাম্পাসে মার্কসবাদ, লেনিনবাদ, মাওবাদ ও লিংকনবাদ চলতে পারে ; তবে কেন দুনিয়ার মাঝে সর্বকালের সেরা মানব, মুহাম্মদের (সা.) এর আদর্শ চলতে পারবে না?
সুতরাং বামদের এ দাবি অন্যায়। এ দাবি পশ্চাৎপদ। তাদের এই কথিত নীতির তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। এদেশের আগামী প্রজন্মের জন্য তার এ বক্তব্য আশার সঞ্চার করে। ছাত্র আন্দোলন আরও সাফ জানিয়ে দেয়- ভার্সিটির ‘ডাকসু’ কর্তৃপক্ষ যদি তাদের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করে, বিষয়টি নিয়ে তারা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবেন। দেশসেরা প্রতিষ্ঠানে ইশা ছাত্র আন্দোলনের এই সাহসী পদক্ষেপ, নিশ্চয়ই আগামীর বাংলাদেশের জন্য একটি ইতিবাচক দিক।
আমরা জানি, এদেশের ওলামায়ে কেরাম যদিও দেশীয় রাজনীতির প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই সম্পৃক্ত ছিলেন কিন্তু; পাকিস্তান বিভাগের পর আলেমদের নিষ্ক্রিয়তার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে ইসলাম যোজন যোজন দূরে চলে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় এদেশের জনগণের উপর চেপে বসে ধর্মহীন রাজনীতি। ইসলাম থেকে যায় সর্বমহলে উপেক্ষিত। জাতীয় রাজনীতিতে অনুপস্থিত। আলাদা হয়ে যায় দেশের রাজনীতি ও ধর্ম।

পরবর্তীতে হাফিজ্জী হুজুরের হাত ধরেই দেশে উত্থান ঘটে ইসলামপন্থী রাজনীতির। আবার গণ-মানুষের নজর কাড়ে ইসলাম। কিন্তু ওলামায়ে কেরামের অদূরদর্শিতায় রাজনীতিতে সুবিধাজনক অবস্থান কখনও আসেনি। পর্যায়ক্রমে হাফিজ্জী হুজুরের প্রিয় শীষ্য মাও. সৈয়দ ফজলুল করীম পীর সাহেব চরমোনাই (রহমতুল্লাহি আলাইহি) ইসলামী রাজনীতিতে একটা নীতিগত প্ল্যাটফর্ম গড়ার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালান এবং আপাতঃ দৃষ্টিতে তার এই প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নামের সংগঠন আজ সারা বাংলাদেশের মানুষের আশা-ভরসার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে


আলহামদুলিল্লাহ! এই সংগঠনেরই ছাত্র সংগঠন “ইশা ছাত্র আন্দোলন” যার জন্ম ১৯৯১ সালের ২৩ আগস্ট রোজ শুক্রবার। প্রতিষ্ঠা করেন মাওলানা সৈয়দ ফজলুল করিম রহ. ঐতিহ্যবাহী সংগঠন, ইশা ছাত্র আন্দোলন ঢাবি শাখার এই প্রত্যয়-দীপ্ত ঘোষণা যেভাবে সীমাহীন আশার সঞ্চার করেছে, তেমনি তাদের উপরে অনেক বিরাট দায়িত্বও অর্পিত হয়েছে।
ঢাবি শাখার সভাপতি, মুহাম্মদ সাইফুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক, মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান বাঙালিকে আরও জোরদার ভূমিকা পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে হাজারো ধাপের সিঁড়িতে তারা কেবলমাত্র একটি ধাপ অতিক্রম করতে পেরেছে। ইসলাম প্রতিষ্ঠায় জীবন-মরণের সংগ্রামে তাদের জয়ী হতে হবে। প্রয়োজনে শাহাদাত বরণ করে নিতে হবে।
বিজয় অর্জন থেকে পিছু হটার কোনো সুযোগ নাই। আজকে পথচলা শুরু, একসময় বিজয় আসবেই ইনশাআল্লাহ। কথা তো ওই প্রথমেই যা বলেছিলাম- চে’র বক্তব্য “অন্যায় যখন নিয়ম হয়ে যায়, প্রতিরোধ তখন কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায় ” এজন্য কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতেই হবে।
আজ ১৪ বছর পরে ঢাবি ক্যাম্পাসে যেভাবে তাওহিদের ধ্বনী উচ্চারিত হলো সেভাবেই ইসলামের বিজয় নিশান উড্ডীনে এটি একটি সফল ঘটনা। এই সফলতার দেখা পেতে মাহমুদদের এখন কর্তব্য পালনের পালা। এগিয়ে চলো বীর-বিপ্লবীরা। তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছে একটি সোনালী প্রভাত।

 

মন্তব্য করুন