সোলায়মান সুখনের ফেসবুক পোস্টের বই : ফেসবুকে কড়া প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত: ৮:২৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ৭, ২০১৯

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত প্রায় পাঁচ হাজারের বইয়ের মধ্যে কিছু বই ছিল কথিত ফেসবুক সেলিব্রিটিদের। ফেসবুকে নিজেদের দেয়া পোস্টগুলো তারা বইয়ের মলাটে এনে প্রকাশ করে ফেলেছেন আস্ত একটি বই। সে বই অনেকের আবার বেস্ট সেলার তালিকায়ও ছিল। প্রোফাইলে প্রচুর ফলোয়ার আর অ্যাকটিভিটি থাকায় ফেসবুকে তারা বইয়ের ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছে__ফলাফলে তাদের ফলোয়াররা সে বই কিনেছে দেদারসে কিন্তু বই কেনার পর ফেসবুক ফলোয়াররা জানতে পেরেছেন__বইয়ে মূলত পড়ার মত বাড়তি তেমন কিছুই নেই। বরং ফেসবুক লেখকের ফেসবুক পোস্টগুলো সব একত্রিত করে বইটি লেখা হয়েছে। যে কারণে সেই ভক্তকুলরাই আবার জানিয়েছে কড়া প্রতিক্রিয়া।

ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া আসা তেমন একটি বই হল “মস্তিস্কের ক্যানভাস”

একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত বিশিষ্ট মোটিভেশনাল স্পিকার ও ফেসবুক অ্যাকটিভিস্ট সোলায়মান সুখনের “মস্তিস্কের ক্যানভাস” বই নিয়ে ফেসবুকে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন অনেকেই। বই কেনার টাকা ফেরত দেয়ার দাবিতেও অনেকে ফেসবুক পোস্ট করেছেন_দেখিয়েছেন ভিডিও প্রতিক্রিয়া। বিভিন্ন পাঠক গ্রুপগুলোতে সুলায়মান সুখনের বই নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন অনেকে।

একজন লিখেছেন,

প্রজন্ম কতটা বেহাল ক্রাইসিসের ভিতর দিয়ে গেলে এই সমস্ত সেলিব্রেটি উৎপন্ন হচ্ছে প্রতিনিয়ত এবং তারা বিনা পয়সার ফেসবুকের স্ট্যাটাস দিয়ে বই বের করে রীতিমতো বেস্টসেলার বনে যাচ্ছেন -ভাববার বিষয়!
সাব্বির জাদিদ লিখেছেন, সোলায়মান সুখনের বই কিনে অনেকেই নাকি টাকা ফেরত চাচ্ছে। আপনাদের এভাবেই ঠক খাওয়া উচিত। আপনারা মাছ কেনেন মাছের পেটে আঙুল বসিয়ে। আলু-পটল-বেগুন কেনেন তাজা দেখে। টি শার্ট কেনেন ট্রায়াল দিয়ে। এমনকি একশ টাকার তরমুজ কেনেন সেটাও নিরীহ তরমুজের পেট কেটে রং দেখে। অার বই কেনেন হুজুগে পড়ে। হুজুগে পাঠকদের এভাবেই প্রতারিত হওয়া উচিত।

আর একজন লিখেছেন,

এই ধারাটা বাংলাদেশে তথা বইমেলা কেন্দ্র করে শুরু হয়ে গেলো। এবারো বেশ কয়েকটা স্ট্যাটাস সমগ্র বই বের হয়েছে যা তাদের ফেসবুক প্রোফাইলে বিনামূল্যে পাওয়া যায়। শুধু ছেপেই ক্ষান্ত হয়নি, পেয়েছে বেস্টসেলার এর তকমা,কামিয়েছে অতিরিক্ত মুনাফা, পথে বসেছে ‘আসল বই আর সাহিত্য’,পথে বসেছে হ্রদয়ের সবটুকু ভালোবাসা আর মস্তিষ্কের সবটুকু বুদ্ধি খরচ করে লেখা বহু তরুণের বই।
বাংলা একাডেমির তথ্যমতে এবারের বইমেলায় সর্বমোট প্রায় আশি কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে! এটি যেমন আশার কথা তেমনি আতঙ্কের! না বুঝা মানুষগুলো রেস্টুরেন্ট এ টাকা ঢালার মতো করে ফেসবুকের প্রচারণা দেখে বইমেলায় নষ্ট ভুঁড়িতে ঢেলে আসছেন অজস্র টাকা,ফলে এই টাকা সাহিত্য পায়নি। পেয়েছে ভন্ডরা, ফুলে ফেঁপে উঠেছে নষ্টদের পকেট। ফকির হয়েছে ‘ভালো বই’ বের করা প্রকাশক। দুঃখ পেয়েছে ‘ভালো লেখার চেষ্টা করা কোনো নব্য লেখক’। ব্যর্থতার হতাশায় হয়তো অনেকের ঘুম হবেনা কয়েক রাত।

একজন কমেন্ট করেছেন,

ফেসবুকের স্ট্যাটাস একত্র করে বই বের করা আসলেই কি যায়? তার স্ট্যাটাস গুলো ইতোমধ্যে তার ভক্তরা পড়েছে, এবং বই বের করার পরেও ওই সমস্ত পড়ুয়া ভক্তরাই বইটা কিনেছে। মধ্যিখানে এর উদ্দেশ্য শুধু পয়সা কামানো নয় কি?

এরকম আরো কিছু বই বের হয়েছে এবং গত বেশ কয়েক বছর ধরে বইমেলা এসব বই এবং এসব বইয়ের পাঠক, লেখক (পূর্বে মার্কেটিং সম্পন্ন করা সোস্যাল মিডিয়া সেলিব্রেটি) দ্বারা বইমেলা হুজুগে বোকা বনে যাওয়া ‘আমিও বই পড়ি’ ‘বইমেলা যাই’ ধরনের পাঠকদের নষ্টনীড়ে পরিণত হয়েছে।

ভিডিও প্রতিক্রিয়ায় একজন বলেছেন,

সুলায়মান সুকন স্যার বই প্রকাশের আগে বলে দিতে পারতেন, তিনি তার ফেসবুক পোস্ট কপি করে বই বের করেছেন। তাছাড়া তিনি বইটিতে একই ফেসবুক পোস্ট কয়েকবার দিয়েছেন__এটা হয়ত খেয়াল করেননি তিনি।

তবে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সাথে সাথে সুলায়মান সুকনের বই নিয়ে পক্ষেও কিছু রিভিউ দেখা গেছে। তারা বলছেন, বইটিতে অবশ্যই শেখার কিছু না কিছু আছে। তাই উনাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করা উচিত আমাদের।

আর একজন তার পক্ষে গিয়ে লিখেছেন,

একজন মানুষ বাজে কিছু করছে না, সে কাউকে ঘৃণা শিখাচ্ছে না, সে কোনো অপরাধ করছে না। এসবের বাইরে গিয়ে সে বই লিখছে। বইয়ের মতো সুন্দর একটা বস্তুর পিছনে সময় ব্যয় করছে। এই চর্চাটা একজন অজপাড়াগাঁয়ের মানুষ করুক কিংবা কোনো বিখ্যাত মানুষ- শ্রম কিন্তু দিতে হয় সবাইকেই। মাথাটা একটু হলেও খাটাতে হয়। তাই কেউ বইয়ের জন্য ব্যঙ্গর বিষয়বস্তু হচ্ছে এটা খুব সুখকর উদাহরণ না। সোলায়মান সুখনকে আপনার পছন্দ নয়, বইটা এড়িয়ে যান। সমালোচনা করতে ইচ্ছে হলে বইটা কিনে পড়ুন, কন্টেন্ট খারাপ হলে সেটা নিয়ে কথা বলুন। শুধু বই লেখার কারণে ব্যক্তিগত আক্রমণ করাটা কতটা যৌক্তিক__এ প্রশ্নও রাখেন তিনি।

মন্তব্য করুন