আসুন! চরিত্রবান তুর্কীদের পাশে দাঁড়াই

প্রকাশিত: ৫:৫৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০১৯

আসলে কি! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র পরিষদ ‘ডাকসু’ নির্বাচনটা নিয়ে এ প্রজন্মের মাঝে ধোঁয়াশা কাজ করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া শেষ করে চাকরি বাকরি করছে অনেকে, অথচ ডাকসু নির্বাচন দেখেনি। দেখার কথাও না। এ প্রজন্মের মাদ্রাসা ছাত্ররা তো দূরের কথা! স্কুল কলেজের অনেক শিক্ষার্থী আজ বলতে পারবেনা ‘ডাকসু’র এলাবারেশনটা কি? এ প্রজন্মের জন্মের পূর্বে সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছে।

ডাকসু নির্বাচন ৯০’র পর হয়নি। এটা একটা আন্দোলনের পাওয়ার হাউজ। সাধারনত সরকারের বাইরে যারা থাকে, তারাই জিতে। এ বছরে সেটা হতে দিবে না ঢাবি প্রশাসন ও সরকার। আকারে ইঙ্গিতে তাই মনে হচ্ছে।

ডাকসু নেতৃত্বই পরবর্তীতে জাতীয় পর্যায়ের নেতা হন। উইন করুক আর নাই করুক, ডাকসু নেতা এটাই বড় পরিচয়।
এ রেওয়াজটা ভেঙ্গেছে নব্বইর পরের সরকারগুলো। কারণ এটা একটা বাড়তি সমস্যা সৃষ্টি করে। নির্বাচন দিয়ে শত্রু পোষার দরকার নাই।

এ বছরে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তা কিন্তু সরকার বা প্রশাসন দেয়নি। হাইকোর্ট বাধ্য করেছে। হাইকোর্টে রিট হয়েছিল কয়েক বছর আগে। রায় অনুযায়ী ঢাবি প্রশাসন নির্বাচন দিচ্ছে। এছাড়া উপায় ছিল না।

বাংলাদেশ হবার পরে ডাকসুতে কোন ইসলামী দলের ছাত্র সংগঠন এককভাবে প্যানেল দিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নাই। এ বছর তা হচ্ছে। এটি একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। এ ছাত্র সংগঠনটির নাম ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠন। যাকে মিডিয়া সোজাসাপ্টা লিখে থাকে, চরমোনাই পীরের ছাত্র সংগঠন।

হ্যাঁ, চরমোনাই পীরের দল- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জাতীয় নির্বাচনে তিনশো আসনে প্রার্থী দিয়ে চমক দেখিয়েছে, অনুরূপ চমক দেখাচ্ছে ডাকসুতে ইশা ছাত্র আন্দোলনের প্যানেল দিয়ে। প্রথমে রাম-বামরা বিবৃতি দিয়ে ক্যাম্পাসে এদের পদচারণার ব্যাপারে উষ্মা প্রকাশ করেছে। ওসব কেয়ার না করে প্যানেল দেয়ার কাজটা এগিয়ে নেয় ছাত্র আন্দোলন। এখন নাকি বড় দল দু’টোর ছাত্রসংগঠনও গররাজি। মিডিয়া তো বরাবর উস্কানি দিচ্ছে। গতকাল প্রথম আলো লিখেছে, নিষিদ্ধ ইসলামী ছাত্র সংগঠন ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। নব্বইতে যে নিষিদ্ধের কথা বলছে, তার এক বছর পরে জন্ম এ ছাত্র সংগঠনটি। কি বোকা বোকা রিপোর্ট এদের।

ডাকসুতে ছাত্র-ছাত্রীরা ভোট দিয়ে তাঁদের নেতা নির্বাচন করবে। কিন্তু সরকার চাইবে না এখানে বিরোধী দলের ছাত্রসংগঠন জিতুক। তাহলে সর্বদা আন্দোলনের আতঙ্কে থাকতে হবে। ডাকসু যাদের দখলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা তাদের অধীনে থাকে। সুতরাং সরকার চাইবে না, এখানে ছাত্রদল-ছাত্রশিবির জিতে যাক। জাতীয় নির্বাচনের ন্যায় চুরি-মারার আশঙ্কা না থাকলেও প্রশাসনের মাধ্যমে একটা হেস্তনেস্ত করার প্লান থাকবেই। অন্ততঃ রাতে ব্যালট বাক্স ভরবে না।

ক্যাম্পাসে ইসলামী রাজনীতির শক্তিমত্তা বৃদ্ধি পাক, এটা কোন দলই চায় না। সুতরাং সব দলের সাথে ইশার প্যানেলকে লড়াই করতে হবে। হুমকি-ধমকিতে কাবু হবেনা জানি, সেক্ষেত্রে তাঁরা সরাসরি হামলার শিকার হলে আশ্চর্য হবো না। কারণ নষ্ট রাজনীতির প্রবক্তারা কখনো চায়না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দাঁড়ি-টুপি ওয়ালারা বিচরণ করুক। সুতরাং বাতিলরা একপক্ষ আর ইসলামিস্টরা একপক্ষ।

না। ইসলামিস্টরা সবাই আসবে না। সে লক্ষন দেখছি না। কারণ, উনারা নিজেদেরকে বণেদি ও জমিদার মনে করেন। ফেসবুকে কতক আলেম নামধারী জাহেলদের আস্ফালন দেখেছি। তিনজন মেয়েকে কেন প্যানেলে নেয়া হলো? একজন ছাত্রীকে তারা হেনস্থা করেছে নামে মিল থাকার কারণে। তামান্না তাসনীম নামের ঐ ছাত্রী আমাদের প্যানেলভুক্ত না হলেও তার আইডি থেকে ছবি নিয়ে অশ্লীল প্রচারণায় নেমেছিল ফেসবুকের ছন্নছাড়া কিছু কওমি পোলাপান। ভূক্তভোগী ছাত্রী তামান্না ওদের বিরুদ্ধে সাইবার এক্টে মামলা করার প্রস্তুতি নেয়ায় বীরপুরুষ কালপ্রিট গুলো নিজ নিজ আইডিগুলো ডিএকটিভ করে বসে আছে। ফলে এখন ফেসবুকে তাফালিংটা কম হচ্ছে। শান্ত শান্ত ভাব বিরাজ করছে।

আগেই বললাম, এরা নিজেদেরকে বণেদি ভাবে। অথচ চালের কলশীতে ইঁদুর পড়লে মরতে বাধ্য হয় উঠতে না পারার কারণে। এরাই আমাদেরকে এডভাইস দেয়, ফতোয়া ছাড়ে ঘন্টায় ঘন্টায়। আমি তাঁদের রাজনৈতিক সক্ষমতার ব্যাপারে উপমা দিয়েছি। ফেসবুকেই এদের বিচরণ। বাস্তবে ঠনঠন। চরমোনাই বিরোধী জিহাদ করে আদতে তাদের কোন অর্জন নাই। তবে নিজেরা নিজেরা আত্মতুষ্টি পায়, তারা জাতে উঠেছে বলে।

হ্যাঁ, ফেসবুকে জাতে উঠতে চাইলে চরমোনাইর বিরোধিতা করে পোস্ট দাও, মিথ্যাচার করো, তোহমত দাও, গালির পরিমাণ বাড়াও, তখন সবাই চিনবে। অর্থাৎ ছ্যাঁচড়া হও, জাতে উঠো।

ইশা ছাত্র আন্দোলনের এ অগ্রগতির সাথে আছি। সুষ্ঠু ভোট হলে দেশের মানুষ দেখবে ঢাবিতে ইশার কার্যক্রম কতটা এগিয়েছে। প্রথমবারে ডাকসুতে অংশগ্রহণ সেটাই তো বিরাট বিজয়। ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলে তোমরা।

গতকাল ডাকসু সভাপতি ঢাবি ভিসি মহোদয় প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ছাত্রদের সাথে মতবিনিময় করেছেন নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেটে হাউজ মিলনায়তনে। যেখানে ঢাবি’র সিনেটে অধিবেশন বসে। ওখানে দু’একবার আমিও বসেছি সাবেক ছাত্র তথা এলামনাই হিসেবে। আসলেই ঐ ভবনটি একটি মিনি পার্লামেন্টের মত। সদস্যদের সামনে মাইক রাখা থাকে, দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কথা বলা যায়, বক্তৃতা দেয়া যায়।

ইশা ছাত্র আন্দোলনের প্যানেলভূক্তরা আমাদের ছোট ভাই। দুএকজন আক্ষরিক অর্থেই ছোট ভাই। তাঁদেরকে সাহস ও উৎসাহ দেয়া আমাদের জন্য জরুরি। তাঁদের বাক্সে যাতে অনেক ভোট পড়ে, সে ব্যাপারে কাজ করা দরকার। প্রথম বছরে আহামরি ফলাফল প্রত্যাশা করিনা, তবুও প্রচারণা চালাতে আমরা যেন উদাসীন না থাকি।

প্রিয় দোস্ত ও বুযুর্গ! আমার এ অনুরোধখানা সবার প্রতি। একদল ভাল মানুষের পাশে দাঁড়াতে সবাইকে আহ্বান জানাই। ওরা চরিত্রবান, মেধাবী ও সুন্নাতের পাবন্দি করা ছাত্রজনতা।

মন্তব্য করুন