

বিশেষ মতামত-
তথ্য প্রযুক্তির শিখরস্পর্শী উৎকর্ষের ফলে ক্রমেই বাড়ছে ইন্টারনেটের ব্যবহার।মানুষ প্রতিদিনের ব্যক্তিগত কাজ থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক,প্রশাসনিক,রাষ্ট্রিয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেদার ব্যবহার করছে ইন্টারনেট। বলা চলে নেটপ্রযুক্তি বর্তমান সময়ে মানব জীবনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে । নেটবিহীন জীবন প্রকৃতি যেন অচল-অসাড় র্জীর্ণ লোকাচার। সামান্য সময় নেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলে জীবন প্রবাহ কেমন যেন তার ছন্দময় গতি হারিয়ে ফেলে।
বিশ্বে অর্ধেকের বেশী মানুষ ইন্টারনেটে ঢুঁ মারেন:
ইন্টারনেট নিয়ে গবেষণা করে যুক্তরাজ্য ও কানাডাভিত্তিক দুটি তথ্য সরবরাহ কারি সংস্থার রিপোর্ট বলছে বর্তমানে পৃথিবীর ৭৫০ কোটি মানুষের প্রায় ৩৭৭ কোটি মানুষ কোনো না কোনো ভাবে ইন্টারনেটের সঙ্গে জড়িত। এরমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয় আ্যপ “ফেসবুক ব্যবহার করছে বিশ্বের ১৭৯ কোটি মানুষ।প্রতিদিন বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে ঢুঁ মারেন এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ১২৩ কোটি, এদের অধিকাংশই উঠতি বয়সী তরুণ তরুণী। তারা কাজ ও ক্লাসের ফাঁকে অথবা অফিসের কর্মবিরতিতে বন্ধু বান্ধব ও সমবয়সীদের সঙ্গে খোশগল্প ও আড্ডায় মেতে উঠে। তরুণরা ছাড়াও আজকাল নানান বয়সী মানুষ ফেসবুকে সময় ব্যয় করেন।
রেকর্ড ছুঁয়েছে ইউটিউব:
আইটি বিশ্বে ফেসবুকের পরই গুগলের যে আ্যপটি নিরঙ্কুশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে সেটা হলো ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপস ইউটিউব। বর্তমানে মানুষের ব্যক্তিগত কাজ থেকে শুরু করে পারিবারিক সামাজিক শিক্ষা গবেষণা বিনোদন খেলাধুলা সহ সব বিষয়ের ভিডিও আপলোড হয় ইউটিউবে। ভিডিও আপলোড কে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে অর্থের রমরমা ব্যবসা।এডিটিংয়ের মাধ্যমে ভিডিও ফুটেজকে আকর্ষণীয় শিরোনাম ও চোখ ধাঁধানো প্রচ্ছদে উপস্থাপন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি অসাধু চক্র।পরিসংখ্যান বলছে বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষ ইউটিউব ব্যবহার করছে । ইন্টারনেটে নিয়মিত এমন দশ জনের প্রতি ছয় জন ইউটিউব দেখেন।তাই বলা যায় ইন্টারনেটকে ঘিরে আছে একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর আনাগোনা।
সক্রিয় ভূমিকায় ইসলাম বিদ্বেষীরা:
বিপুল সংখ্যক মানুষ নেটে জড়িত থাকার সুবাদে এখন বিভিন্ন মত ও পথের কর্তাব্যক্তিরা ঝুঁকেছে ইন্টারনেটের প্রতি। নিজস্ব চিন্তা চেতনা ও মতাদর্শ প্রচারে তারা ইন্টারনেটকে ব্যবহার করছে মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে। কাদিয়ানি, শিয়া, লা মাযহাবি, মওদুদী, মুক্তমনা ও ইসলাম বিদ্বেষী চক্র ইন্টারনেট কে কেন্দ্র করে তাদের চিন্তা চেতনার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। ভিডিও, প্রবন্ধ, আর্টিকাল, বিতর্ক এবং অন্তসারশূন্য যুক্তির মারপ্যাচে মানুষের ভেতর ইসলামের বিষোদগার ফুঁকে দিচ্ছে ।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রায় ৮০% যেহেতু উঠতি বয়সী তরুণ তরুণী, তাই ভ্রান্ত মতবাদগুলোর চটকদার বুলি আর মুখরোচক প্ররোচনার ফাঁদে তারা নিজেদের অজান্তেই ফেসে যাচ্ছে। এতে করে সমাজে বাড়ছে কথিত প্রগতিশীল চিন্তার ধ্বজাধারী, মুক্তমনা নাস্তিক, এন্টি ইসলামিক চক্র । দানা বাঁধছে ইসলাম বিরোধী মনোভাব, উগ্র মানসিকতা, চিন্তার স্বাধীনতা, অশ্লীলতা ও কুরুচি পূর্ণ চেতনা। আরেক শ্রেনী আছে যারা ইসলামের পোশাক পরে সরলমনা মুসলমান ও ধর্মপ্রিয় ব্যক্তিদের বিভ্রান্ত করছে। সহিহ হাদিসের দোহাই দিয়ে তাদের মাঝে মাযহাব বিরোধী চেতনা জন্ম দিচ্ছে।
আরেক গোষ্ঠী আছে যারা ইসলামের নামে বিদআত,কুসংস্কার ও অলীক কল্পকাহিনী প্রচার করে মানুষ কে ইসলামের প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তুলছে। এতসব ভ্রান্ত ও বানোয়াট মতবাদের মরচিকায় সাধারণ মানুষের বিশুদ্ধ ঈমান আকিদা আজ বিপন্ন ও খাদের কিনারে। সঠিক ইসলাম ও স্বচ্ছ ধর্ম বিশ্বাস নিরূপণে তারা আজ ব্যর্থ। ফলে ইসলামী আদর্শ ও চিন্তা চেতনা থেকে তারা দূরে সরে যাচ্ছে দিন দিন।
জেগে ওঠো কান্ডারী:
জাতির এ ক্লান্তিলগ্নে তরুণ আলেম সমাজ যদি ইন্টারনেট ও মিডিয়ায় বিশুদ্ধ ইসলামি আকিদা ও ধর্ম বিশ্বাস প্রচারে এগিয়ে না আসেন তাহলে উম্মাহর আদর্শিক ও চিন্তানৈতিক অবক্ষয় একসময় তলানিতে গিয়ে ঠেকবে, অদূর ভবিষ্যতে যা আমাদের ইসলামি সমাজ ব্যাবস্থার জন্য অশনিসংকেত হয়ে দাঁড়াবে। তাই দেশের বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ মুরুব্বিদের তত্ত্বাবধানে তরুণ আলেমদের জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা তত্বপূর্ণ লেখালেখি বিতর্ক সংলাপ ইত্যাদির মাধ্যমে এসব অপশক্তির মূলোৎপাটন করে ইসলামের সুমহান আদর্শ ও নৈতিক শিক্ষা তাদের মাঝে তুলে ধরতে হবে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলাম যে স্থিতিশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ সমাধান দিয়েছে সেটা তাদের সামনে ফুটিয়ে তুলতে হবে। যদি এখনো আমরা ঈমানি চেতনা নিয়ে বাতিল প্রতিরোধে অগ্রসর হতে পারি তাহলে বাতিলের যে বটবৃক্ষ ইন্টারনেটের বিস্তীর্ণ ভূমিতে জেঁকে বসেছে তা নিমিষেই উপড়ে ফেলা সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।