ডাকসু নির্বাচনে ইশা’র প্যানেলে নারীদের অন্তর্ভুক্তি ও কিছু কথা

প্রকাশিত: ৩:৩১ অপরাহ্ণ, মার্চ ২, ২০১৯

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। ইসলামে পুরুষদেরকে নারীদের উপর কতৃত্বশীল বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
তাই ইসলাম নারী নেতৃত্ব জায়েজ নেই। সেই বিশ্বাসের উপর আপোষহীন মনোভাব নিয়ে ১৯৯৯ সালে ঘটিত বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন ৪দলীয় জোটে ইসলামী ঐক্যজোটের সম্পৃক্ততার বিরোধিতা করেছিল ঐক্যজোটের শরীকদল ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন এর আমীর মাওলানা সৈয়দ ফজলুল করিম পীর সাহেব চরমোনাই রহঃ। এই বিরোধিতার জের ধরে ইসলমী ঐক্যজোট থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। হয়ে ওঠেন নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া আপোষহীন নেতা। তার দলে তো নয়ই, নারীর নেতৃত্বে থাকা কোন দলের সাথে কখনো রাজনৈতিক জোটেও যায়নি।

সম্প্রতি তার প্রতিষ্ঠিত ছাত্র সংগঠন ইশা ছাত্র আন্দোলন ডাকসু নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করলে নতুন করে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। প্যানেলে ৩ জন নারীকে প্রার্থী করা হলে শুরু হয় নারী নেতৃত্বের বিতর্ক।

সমালোচক মহলের দাবী ইশা আন্দোলন নারী নেতৃত্বের বিরোধিতা সবচেয়ে বেশি করেছে অথচ সুবিধার জন্য এরা নারী নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

সমালোচকরা সমালোচনা করতে গিয়ে এতোটাই নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিচ্ছে যে নারী নেতৃত্বের মূল জিনিসটাই মাথায় রাখছে না। ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন (বর্তমান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ) নারী নেতৃত্বের ব্যাপারে আজও আগের অবস্থানেই আছে। নারী নেতৃত্বকে তারা নাজায়েজ মনে করে। কোন নারীর নেতৃত্বে জোটে তো যাবেই না, বরং নারীর নেতৃত্বাধীন কোন দলের সাথেও জোটবদ্ধ হবে না। এটা তাদের দলীয় আদর্শ পরিপন্থী। বাট দলে বা নির্বাচনী প্যানেলে নারীদের অন্তর্ভুক্তি ঘটাবে। নারীরা তাদের দলের সদস্য হতে পারেন। ভোট দিয়ে সমর্থন জানাতে পারেন। সামনে হয়তো কমিটিতেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

নারী নেতৃত্ব আর নারীদের অন্তর্ভুক্তি এক জিনিস নয়। নারী নেতৃত্ব হলো দল, জোট বা প্যানেলের প্রধান নারী হবেন, এবং সেই নারীর নেতৃত্বে দল, জোট বা প্যানেল পরিচালিত হবেন। ক্ষমতা লাভ করলে নারীই পরিচালিত করবেন। এমনটি ইসলামে জায়েজ নেই। পাকিস্তান সৃষ্টির পর ১৯৫৪ সালে ৩৪টি মতের ওলামাদের সম্মেলিত ২২ সিদ্ধান্ত ছিল, যার একটি ছিল নারী নেতৃত্ব নির্বাচন করা যাবে না পাকিস্তান (পাকিস্তান বলতে বর্তমান পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সহ) পরিচালনার জন্য। ৯৯ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জোট করার ব্যাপারে রাজনৈতিক আলেমদের ফতোয়া চাওয়ার জবাবে দেশের মুফতিয়ানে কেরামদের ফতোয়ায়ও নাজায়েজ বলা হয়েছে।

হযরত আবু বাকরা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-যখন কিসরা পদানত হল তখন তাকে বলতে শুনেছি-কে তার পরবর্তী খলীফা? বলা হল-তার মেয়ে। তখন রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন-সে জাতি সফলকাম হয় না, যাদের প্রধান হল নারী। (সুনানে তিরমিযী, সহীহ বুখারী, সুনানে নাসায়ী)
পর্দার বিধানকে পালন করে যদি দল, জোট বা প্যানেলে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাহলে তো কোন অসুবিধা নেই। ইসলাম নারীদের সেই স্বাধিনতা দিয়েছে। নারীদের শিক্ষা গ্রহণ করতে যদি কোন বাঁধা না থাকে তাহলে শিক্ষাঙ্গনের ক্যাম্পাসে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করতে সমস্যা কোথায়? তাছাড়া ডাকসু নির্বাচনের ইশার প্যানেলে ভিপি এবং এজিএস তো পুরুষ। তাহলে এখানে নারী নেতৃত্বটা এলো কোথা থেকে?

এই ধরনের প্যানেলে নারীদের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে মুফতি লুৎফুর রহমান ফরাজী ভাইয়ের আহলে হক মিডিয়ার একটি ফতোয়া উল্লেখ করছি।

“নারীকে প্রধান বানিয়ে তার অধীনে কাজ করা জায়েজ নয়।তবে সহযোগী হিসেবে পর্দার সাথে কাজ করতে কোন অসুবিধা নেই।” (ফাতাওয়া মুফতী মাহমুদ-১১/৩৭৪-৩৭৫)

বিরোধিতার জন্যই বিরোধিতা করা একটি মারাত্মক রোগ। বিরোধিতা করার আগে একবার ভাবেনও না যে কাজটা সঠিক হচ্ছে কি না, বিষয় টি সঠিক তো?

ইশা ছাত্র আন্দোলন কে পছন্দ করেন না বা আপনার সংগঠন ভিন্ন বলেই বিরোধিতা করা উচিত নয়। ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও বামজোটের প্রচন্ড বিরোধিতা ও বাঁধা পেড়িয়ে ইশা ছাত্র আন্দোলন ডাকসু নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দাড় করিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল সেখানে মিছিল, মিটিং আর ক্যাম্পিং করে সে দুয়ার উন্মোচন করেছে। অথচ অন্য সকল ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ইশা ছাত্র আন্দোলন কে নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখানো সত্যিই হতাশা।

আরো পড়ুন :  ডাকসু নির্বাচনে ইশা ছাত্র আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা

-লেখকঃ সামছ্ আল ইসলাম ভূঁইয়া, শিক্ষক ও রাজনৈতিক কর্মী।

মন্তব্য করুন