

আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ একজন বিদগ্ধ আলেম হওয়া সত্বেও দেশের আলেম সমাজের বড় একটি অংশের কাছেই তিনি অনেকটাই বিতর্কিত। উত্তাল হেফাজতের সময়ে তিনি শাহবাগ গিয়ে আলেমদের রোষানলে পড়েছিলেন।
স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতের বিরোধিতা করে তিনি জামায়াতপন্থীদের কাছেও অপছন্দনীয়। এসব রাজনৈতিক ইস্যূতে তিনি জেলও খেটেছিলেন। তবে তার জামায়াত বিরোধীতা কওমী আদর্শের অংশ হিসেবেই ধরা হয় কারণ কওমীপন্থীরা জামায়াতের কিছু আকিদাগত সমস্যার কারণে প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই বিরোধীতা করে আসছেন।
দেওবন্দের সন্তান হিসেবে ফরিদ উদ্দিন মাসউদের এই জামায়াত বিরোধীতা জায়েজ বলেই ধরা যায়। কিন্তু তাবলীগ জামাতের বিবদমান সমস্যায় তিনি ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক অনেকটাই সা’দপন্থীদের সঙ্গে মিশে গেছেন।
সারাদেশের আলেমসমাজ যেখানে সা’দপন্থীদের বাড়াবাড়ির বিষয়ে কঠোর ভূমিকায় আছেন সেখানে তিনি প্রকাশ্যে হোক অপ্রকাশ্যে হোক কোন পক্ষে না গিয়ে উভয়পক্ষকে মিলিয়ে দেয়ার কাজ করতে পারতেন। তিনি তা না করে অনেকটাই সাদ পন্থীদের সমর্থক হিসেবে পরিচিতি পেয়ে গেছেন যদিও তিনি দাবি করেন তিনি তাবলীগের কোন পক্ষকেই এক পক্ষীয় সমর্থন করেন না। “জমহুরিয়াত”কে তিনি তেমন গুরুত্ব দেন না। না দেয়ার ক্ষেত্রেও তার যুক্তি আছে, অবস্থান আছে_ তাই বলে ইজতেমা মাঠে মাদরাসা ছাত্রদের রক্তের গুরুত্বও দেবেন না এটা হতে পারে না।
আলমী শূরাপন্থী তাবলীগীরা গত ১ ডিসেম্বর টঙ্গী ইজতেমা মাঠে মাদরাসা ছাত্রদের উপর হামলার বিষয়ে তাকে দায়ী করে আসছিলেন এবং এ বিষয়ে ছাপানো পোস্টারিংয়েও তাকে দায়ী করে শাস্তির দাবি করাসহ তার ছবি সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন পর্যন্ত দাহ্ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সে দায় সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন এবং এ সমস্যা তাবলীগের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এ ছাড়াও টঙ্গী ইজতেমা মাঠে মাদরাসা ছাত্রদের উপর হামলার বিষয়ে তিনি “তৃতীয় কোন পক্ষ” রয়েছে বলে দাবি করেছেন।
পক্ষে-বিপক্ষে যত কথাই থাকুক না কেন মাও. ফরিদ উদ্দিন মাসউদের রয়েছে একটি সমর্থক জনগোষ্ঠি যারা তাবলীগ ইস্যূতে তার অবস্থান মেনে নিতে পারেনি। তিনি তাবলীগ ইস্যূতে দেওবন্দের নীতির উপর আছেন দাবি করলেও তাঁর সার্বিক অবস্থান অনেকটাই সা’দপন্থীদের সুবিধা দিয়ে আসছে। সর্বশেষ তিনি সা’দ ইস্যূতে নিজামুদ্দিন গিয়েছেন এবং বিষয়টির একটি সমাধানের চেষ্টা করেছিলেন বলে জানা যায়।
আজ শুরু হয়েছে সা’দপন্থীদের নেতৃত্বে টঙ্গী ইজতেমা মাঠে তাদের ইজতেমা কার্যক্রম। সকাল থেকে শুরু হলেও মুসুল্লিদের উপস্থিতি খুব কম দেখা গেছে। ইজতেমা মাঠে অবস্থানরত অনেকের সাথে যোগাযোগ করলে তারাও বলেছেন, তাদের আশার চেয়ে অনেক কম লোকজন জড়ো হয়েছেন।
মাও. ফরিদ উদ্দিন মাসউদ অনেকটাই ডানপিঠে মানুষ। তিনি হুট করে এই ইজতেমা মাঠে হাজির হয়ে যেতে পারেন যা হবে উনার জন্য চরম আত্মঘাতি কার্যক্রম। এমন কিছু মাও. ফরিদ উদ্দিন মাসউদ না করুক এবং সা’দপন্থীদের এই তাবলীগের মুরুব্বিহীন ইজতেমার সাথে উনার কোন সরাসরি সংশ্লিষ্ঠতা না ঘটুক এমনটা আশা করতেই পারি।