টঙ্গী ময়দান ইজ ইকুয়াল শাপলা চত্বর

প্রকাশিত: ৭:৪৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৯

এম শামসুদদোহা তালুকদার

আমি নিজেকে ছোট হিসেবে ই জানি। তবে একটু আধটু সাহস আছে। সে জন্য মাঝেমধ্যে কিছু কথাবার্তা বলি। অনেকে আহত হন সেটাও বুঝি। ভাই সাবেরা, আমারে মাফ দিয়েন!

বিসমিল্লাহ,…

তাবলীগের মগজ ঐ দিন থেকেই পঁচতে শুরু করেছে, যেদিন থেকে উগ্রতা ঢুকেছে। তাঁরা ঈমান আমল শুদ্ধ করতে করতে জীবন কাটিয়ে দেয়, অথচ অপর সাথীকে মেরে রক্তাক্ত করে তক্তা বানিয়ে দেয়।

আরও পড়ুন: বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিচ্ছে না সা’দপন্থীরা

আবার তাঁরা শালিস মানে পুলিশকে। পুলিশ কি কোন কাজে মধ্যস্ততা করতে পারে? আইনের কোথায় আছে? পুলিশের মধ্যস্থতায় যখন তাঁরা আন্ডারটেকিং দেয়, ষ্টাম্পে সাইন দেয় তখন থেকে কি আর তাবলীগ জামায়াতের সতীত্ব বজায় আছে? তারা হয়ে গেছে বিবদমান গোষ্ঠী। আলেম ওলামারা ফিকির না করলে এতদিনে রায়ট ঘটে যেতো।

এরা যে কোন ধাতুর তৈরী (আক্ষরিক অর্থেই বলছি ধাতু মানে সিমেন) সেটা টের পাওয়ায়ে দিয়েছে গত পয়লা ডিসেম্বরে। তাঁরা হায়েনাদের মত সংঘবদ্ধ আক্রমণ করে শত শত ওলামা তোলাবাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে। বেসরকারি হিসেবে কয়েকজন শহীদ হওয়ার কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে । এখন তো এরা একটা সংঘবদ্ধ অপশক্তি।

তাঁরা যে- যেই পেশা থেকে তাবলীগে এসেছে, খোঁজ নিয়ে দেখেন সে ঐ পেশায় কতটা সৎ আছে? তাঁদের ঘরের দিকে তাকান, খাছ পর্দা আদৌ আছে কি? অধিকাংশ লোকজনের মধ্যেই গলদ পাবেন। তাঁদের মেয়ে-পুত্রবধূরা কয়জন গৃহিনী? তাঁরা জেনারেল শিক্ষিত ও চাকুরীজীবি।

এমন শক্তির সাথে আলেমদের চেয়ে নন-আলেমদের সাথে সখ্যতা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। এরা মাথায় পাগড়ি বান্ধে ঠিকই। কিন্তু অন্তরের কালিমা সফেদ হয়নি। আলেমদের প্রতি প্রচন্ড হিংসাত্মক মনোভাব সেটাই প্রমাণ করে।

আরও পড়ুন : টঙ্গীর ঘটনার বিচার আল্লাহর কাছে দিলাম; আল্লামা শফী

দেখুন, ইঞ্জিনিয়ার ওয়াসিফ সাহেব তাবলীগের হর্তাকর্তা। তাঁর ফ্যামিলির খোঁজ নিন। ছেলে ওসামা ছাড়া কেউই মাদ্রাসার বারান্দা দিয়েও হাঁটেনি। ওসামাও তো টাল্টুবাল্টু। ফেসবুকে তাঁর একটা ফ্যামিলি ফটো দেখেছি। সেটা দেখলেই বুঝা যায় ব্যক্তিগত জীবনে ওয়াসিফরা কতটা আমলওয়ালা!

সরকার যখন মধ্যস্থতাকারী তখন আলেমদের আরো দূরদর্শী হওয়ার দরকার ছিল। সরকার মানে সামথিং রং। এতায়াতিরা আন্তরিক হলে নিজেরা সমাধানের জন্য বৈঠকের পর বৈঠক করতেন। এক সময় সমাধান এসে যেতো। তাঁরা তাঁদের হিসেবে সঠিক লাইনে আছে। তাঁরা সরকারের কান্ধে চেপে বসেছে এবং ওখান থেকেই তারা ফায়দা লুটবে। সরকার কখনো প্রত্যক্ষভাবে কারো পক্ষ নিবে না, কিন্তু সহযোগিতা করে এক পক্ষকে জব্বর সুবিধা দিতে পারে। এবং এ সুবিধা পাওয়ার জন্যই তাঁরা সরকারকে মোড়ল মানছে।

মাওলানা সাদ সাহেবের ব্যাপারে দেওবন্দ থেকে চুড়ান্ত মতামত আনার সিদ্ধান্ত শুনে যারা আহ্লাদিত হয়েছিলেন তারা এখন কই? দেওবন্দ সফর হলো না কেন? সরকার তো বলতে পারতো, যে ডিসিশান হয়েছে এর বাইরে যাওয়া যাবেনা। অবশ্যই দেওবন্দ সফর করতে হবে। ওয়াসিফরা যখন যা বলেছে সেভাবেই তা হয়েছে। যৌথভাবে নেয়া সিদ্ধান্ত যাদের জন্য বাতিল হয়েছে, সেজন্য সরকার কিন্তু তাদেরকে তিরস্কার করেনি। কোন ব্যবস্থা নেয়নি। টংগী মামলায় কয়েকজন আসামীকে ধরলে ওরা পালিয়ে বেড়াতো আর বাপ-বাপ করতো।

মিডিয়ায় খবর আসলো দুই তাবলীগ নাই। এক হয়ে গেছে। এক তাবলীগ, এক ইজতেমা। সবাই বাহবা মারলাম। ইজতেমায় সাদ সাহেব আসবেন না। বয়ান ও মুনাজাত ধরবেন না। সবাই খুশী।

কিন্তু গতকাল যে সিদ্ধান্ত হলো- সেটা আমি বলবো ওয়াসিফরা জয় পেয়েছে। তাঁদেরও সমান মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইজতেমা দুইদিন দুইদিন মোট চারদিন। শেষ দু’দিন তারা নিয়ন্ত্রণ করবে। ওয়াসিফরা যা বলে, সেটা করে ছাড়ে। এখন শুধু একটা দাবি বাকী- সাদ সাহেব কেন্দ্রীক, তাঁর আসা না আসার প্রসংগ। তিনি আদৌ কখনো এ দেশে আসতে পারবেন না সেটা কি সরকার বলেছে? লাইফটাইম এমবারগো। সেটা কিন্তু বলে নাই।

আরও পড়ুন : বিশ্ব ইজতেমার তারিখ একই কিন্তু ভাগ হচ্ছে কর্তৃত্ব

একটি হাইপোথেটিকাল প্রশ্ন, ওয়াসিফরা যদি এখন দাবী জানায়, সাদ সাহেব এবারের ইজতেমায় আসবেন, বয়ান করবেন ও শেষ মুনাজাত ধরবেন। তখন তাঁদেরে কে বাধা দিবে?

সরকার হয়তো বলবে, তোমরা সাদকে আনতে পারবা না। এরপর যদি তারা হাইকোর্টে যায় তখন রুখবেন কিভাবে? এ দেশে কাদিয়ানীদের আস্তানা আছে না?শিয়ারা আছে না? বাতিল ফেরকাদের বিচরণ আছে না? সেখানে সাদ সাহেব তো আরবের খোরমা খেজুর।

এতাআতিরা দাবী করবে, আমরা আলাদা, ইজতেমার সময়সূচি আলাদা, বয়ান আলাদা, মুনাজাত আলাদা। আমরা কার দ্বারা মোনাজাত ধরাবো সেটা আমাদের সিদ্ধান্ত। আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমরা তো তাদের ব্যাপারে নাক গলাইনি! এ পর্যায়ে কার কি করার থাকবে?

এমন বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছেন কওমি আলেমগণ। তাবলীগ ইস্যুতে আলেম ওলামা বলতে কওমিয়ানদেরকেই মিন করে। তাঁদের বাইরে যেন কোন আলেম নাই। আলীয়া লাইনের আলেম ধর্তব্যের মধ্যে নয়। তাঁদেরকে সম্পৃক্ত করতে পারলে যে বিশাল শক্তির সমাহার ঘটতো, সেটা উপেক্ষা করা হয়েছে। এ ইস্যুতে তরিকতপন্থী উলামা মাশায়েখকেও খুব একটা পাশে দেখা যায় না। একলা চলো নীতির খেসারত দিতে হচ্ছে এখন।

সরকারের উচ্চ মহলের সাথে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। ঐ সব বৈঠকে জোরালোভাবে খুনী, সন্ত্রাসীদের বিচার ও আহত নিহতদের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবী তোলা হয়েছিল কি? মিডিয়ায় এমন কোন নিউজ দেখি নাই।

এই একটা দাবিতে যদি তাঁরা অটল থাকতেন, তাহলে আলেমদেরকে উপেক্ষা করার সুযোগ থাকতো না,আর কালপ্রিটরা তখন প্রচন্ড চাপে থাকতো। সরকারকে যদি তাঁরা চেপে ধরতেন, রক্তাক্ত ঐ হামলায় অভিযুক্ত আসামীদের মধ্য থেকে কয়জনকে ধরেছেন? বিচারের কি হলো? তাহলে এমন একপার্শ্বিক সিদ্ধান্ত আসতো না।

শত শত আলেমের শরীরের রক্ত এখন পাতলা ডাইলের দরে বিক্রি হচ্ছে। যদি বলা হয়- এ ক্ষেত্রে আপোষ করা হয়েছে, সেটা এখন অনেকেই বিশ্বাস করছেন।

তাই এখন বলাই যায়, টংগী ময়দান সমান সমান শাপলা চত্বর।

লেখক, এক্টিভিস্ট, বিশ্লেষক।

আরও পড়ুন:

বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত করবেন কে?

একই মাসে বিশ্ব ইজতেমা ও চরমোনাই মাহফিল, অংশ নিন দুটোতেই

মন্তব্য করুন