মূর্তি ইস্যু অন্তিম শয্যায়

প্রকাশিত: ১:১২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১২, ২০২০

এম শামসুদদোহা তালুকদার: নেতৃস্থানীয় আলেমদের সাথে সরকার বসবে এ খবর শুনে আমরা একটু একটু খুশী। ‘সরকার আমগো জিগাইছে’ এমন একটা ভাবের মধ্যে আছি আমরা। রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক হতে পারে। ধর্মমন্ত্রীও বসবেন শুনেছি। এরকম একাধিক বৈঠক হলেও আশ্চর্য হবো না। পরে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক হবে। আলেম সমাজ মূর্তির পরিবর্তে বিকল্প প্রস্তাব পেশ করবেন আশা করি।

তবে আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত, আবারো আলোচনা হতে পারে। কিন্তু ফলাফল হবে ‘থোর বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোর‘’।

চায়না থেকে বঙ্গবন্ধুর বিশাল ম্যুরাল আনা হচ্ছে। নকশা ও আইডিয়া এ দেশীয়দের হলেও সেটা অক্ষয় করতে অর্ডার দিয়ে বানানো হচ্ছে চীন থেকে। এর মেটেরিয়াল ধাতব পদার্থের হবে। লোহা, সীসা, তামা ও পাথরের ইত্যাদি।

আশাকরি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ধাতব মাল দ্বারাই তৈরী হবে এখন থেকে। কেউ যেন কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ভেঙ্গে ধীরপায়ে হেঁটে পালাতে না পারে।

মনে পড়ে? তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলের খসড়া নিয়ে একটি পার্লামেন্টারি কমিটি করা হয়েছিলো, সবাই অনেক যাচাই বাছাই ও গবেষণা করে প্রাধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট পেশ করেছিলেন। তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইনটায় কিছু সংশোধনীর কথা ছিলো। তবে বিলুপ্ত করার সুপারিশ কেউ করেনি।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট সুধীসমাজের সাথে বৈঠক করেও মতামত নিয়েছিলেন, সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির পক্ষে অভিমত দিয়েছিলেন। প্রয়োজনে সংশোধনী আনা যেতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী সবার কথা মনোযোগ সহকারে শুনলেন, তবে তিনি কারো কথা রাখলেন না। ফলাফল- বাড়তি দু’টার্ম তিনি ক্ষমতায়।

হ্যাঁ, তিনি বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম ও মুফতীদের কথা মনোযোগের সাথে শ্রবন করবেন। মিষ্টি মিষ্টি কথা বলার পাশাপাশি ভালো ভালো আপ্যায়ন করায়ে তাযীম করে বিদায়ও করবেন। কিন্তু তিনি যেটা মনস্থির করেছেন সেটাই করবেন।

শেখ মুজিবের মূর্তি যথাস্থানে বসবে, তাতে কার বাপের কি? বরং তিনি হয়তো অন্যের মাধ্যমে মেসেজ দিবেন, ধোলাইপাড়ের ঐ মূর্তির দিকে আপনারা না তাকালেই তো হয়! আপনারা জনগনের কত পার্সেন্ট? আপনারা ঐ দিকটায় তাকান কিনা সেটা দেখার জন্য সেনাবাহিনী ওখানে এক বৎসর পাহাড়ায় থাকবে।

এরপর ইস্যুর তালিকা থেকে এটা উধাও হয়ে যাবে! কোথায় মূর্তি? কার মূর্তি? কেন মূর্তি? বলার কেউ থাকবে না। তখন ওটা কথ্য ভাষায় ভাস্কর্যে রূপান্তরিত হবে। মূর্তি আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। ভাস্কর্য চালু হবে।

মাহবুবুল আলম হানিফ তো বলেই দিয়েছেন, দেশের ইমাম সাহেবরা যেন ভাস্কর্য ও মূর্তি ভিন্ন বিষয়- সেটা যেন খুতবায় বলেন।

এক সিনিয়র সাংবাদিক ফেসবুকে লিখেছেন, ভাস্কর্য ও মূর্তির মাঝে কোন বিরোধ নাই। ওখানে কমেন্ট করছিলাম, আপনার জানায় এত ঘাটতি আছে, তা আগে জানতাম না। তিনি জবাব দিলেন, এখন তো জানলেন। তিনি আরো একটি ডাহা মিথ্যা কথা লিখেছেন, সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করিম ও মামুনুল হক নাকি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের সন্তান। আমি চ্যালেঞ্জ করলাম। চ্যালেঞ্জটা তিনি গ্রহন করলেন না। কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকলাম।

মূর্তি বিরোধী আন্দোলন প্রশ্নে বর্তমানেই তো কতকের সুর মিঞঁ মিঞঁ হয়ে গেছে।
“আমরা প্রতিবাদ করেছি ঈমানের তাগিদে। বঙ্গবন্ধুকে আমরাও তো ভালবাসি ও সম্মাণ করি। মূর্তি বসাবেন কি বসাবেন না, সেটা আপনাদের ইচ্ছে। আমরা ভাঙতে যাবো না। ঈমানী হাইসিয়াতে প্রতিবাদ করার দরকার ছিলো, করা হয়ে গেছে। ব্যস!”

আখেরি ফলাফল- মূর্তি ইস্যু এ এলাকা থেকে আমরা জনমের মতো বিদায় জানালাম।

লেখকঃ সংবাদ বিশ্লেষক ও গবেষক।

 

এন.এইচ/ওয়াইপি

মন্তব্য করুন