

অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর: চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে স্ত্রীর পরকিয়া সন্দেহে রায়পুরের জামাতার উপুর্যপরি ছুরিকাঘাতে স্ত্রী তানজিনা আক্তার রিতুর নিহত হওয়ার পর এবার শাশুড়ি পারভীন আক্তারও মারা গেছেন।
ছুরিকাঘাতে তাৎক্ষনিক স্ত্রী রিতুর মৃত্যু হলেও শাশুড়ি পারভীন দুইদিন চিকিৎসাধীন থেকে শুক্রবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেয়ার পথে মৃত্যু বরণ করেন।
এর আগে গত বুধবার (১৩ মে) ইফতার পূর্ব সময়ে ফরিদগঞ্জের গৃদকালিন্দিয়া বাজার এলাকায় শশুরবাড়িতে (খান বাড়ী) স্ত্রীর সাথে কথাকাটাকাটির জেরে উপর্যপুরি ছুড়িকাঘাত করে স্বামী আল মামুন মোহন মোহন। এসময় শাশুড়ি এগিয়ে এলে তার ওপরও হামলা করে মোহন।
এঘটনায় ওইদিনই স্ত্রী রিতু মারা যান। আহত অবস্থায় ঢামেকে চিকৎসাধীন থেকে শুক্রবার ভোরে পারভীনও মারা যান।
আল মামুন মোহন লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার শায়েস্তানগর গ্রামের বেপারি বাড়ীর মৃত মনতাজ মাস্টারের ছেলে। অন্যদিকে তানজিনা আক্তার রিতু ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের গৃদকালিন্দিয়া বাজারের পাশের গ্রামের খাঁন বাড়ির প্রবাসী সেলিম খানের ছোট মেয়ে।
এদিকে খুনের ঘটনায় ঘাতক জামাতা আল মামুন মোহনকে বৃহস্পতিবার বিকালে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার জন্য আদালতে হাজির করা হলেও সে অস্বীকার করায় তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
মা ও মেয়ে খুনের ঘটনায় শুক্রবার সকালে তাদের বড় মেয়ে ও স্বজনদের কান্নায় বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।
এদিকে খুনের ঘটনায় রিতুর স্বামী আল মামুন মোহনকে প্রধান ও তার ভাই এবং বোনকে আসামী করে নিহত রিতুর চাচা লিয়াকত খান বাদী হয়ে ফরিদগন্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কাজী জাকারিয়া জানিয়েছেন, অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করবেন।
জানা গেছে, লোহমর্ষক এই ঘটনার পর ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত ঘাতক মোহনের শাশুড়ি পারভীন আক্তারকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরন করে। ঢাকা নেয়ার পথে শুক্রবার ভোরে তিনি মৃত্যু বরণ করে। শুক্রবার সকালে তার লাশ থানায় আসার পর পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেছেন।
এদিকে নিহত কলেজ ছাত্রী ও গৃহবধু রিতুর ময়না তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার বিকালে তার লাশ তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে নিহতদের বড় মেয়ে ও স্বজনরা জানান, আড়াই বছর পূর্বে পাশ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার শায়েস্তানগর গ্রামের বেপারি বাড়ীর মৃত মনতাজ মাস্টারের ছেলে প্রবাস ফেরত আল মামুন মোহন রিতুকে বিয়ে করেন।
বিয়ের পর সৌদি আরবে গেলেও গত দেড় বছর পুর্বে আল মামুন মোহন দেশে ফেরত এসে কর্মহীন হযে পড়ে। বউ ও শাশুরির কাছ থেকে প্রায় সময় টাকা নিয়ে খরছ করতো। ১৩ মে বুধবার বিকালে সে তার নিজ বাড়ি রায়পুর থেকে শশুড় বাড়ি ফরিদগেঞ্জর গৃদকালিন্দিয়া আসে।
ইফতারের পুর্বে মূর্হূতে স্ত্রী তানজিনা আক্তার রিতুর সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রিতুকে উপর্যুপরি ছুরিকাহত করে। মেয়ের আত্মচিৎকারে মা পারভীন আক্তার এগিয়ে গেলে তাকেও ছুরিকাহত করে মোহন।
এসময় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আশেপাশের লোকজন টের পেয়ে মোহনকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
রক্তাক্তজখম রিতুকে দ্রুত উদ্ধার করে ফরিদগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
নিহত রিতুর মামী তাছলিমা বেগম জানায়, সৌদি আরব থেকে মোহন চলে আসার পর বেকার অবস্থায় ছিল। বিয়ের সময় রিতুকে দেয়া স্বর্ণালংকার সবকিছু বিক্রি করে ফেলে সে। এছাড়া বাড়িতে বসবাস করার জন্য কোন ব্যবস্থা না থাকায় রিতু স্বামীর বাড়িতে যেতে চাইতো না। সে বাপের বাড়ি থেকেই পড়ালেখা করতো।
এই নিয়ে মোহন স্ত্রীকে সন্দেহ করতো যে, সে পরকিয়ায় আসক্ত। এসব বিষয় নিয়ে দ্বন্ধের জের ধরে রিতুকে হত্যা করে এবং তার মা ও ভাইকেও কুপিয়ে আহত করে মোহন।
এদিকে, ঘাতক মোহন ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে আটক অবস্থায় জানিয়েছেন, তার স্ত্রী পরকিয়ায় লিপ্ত। তার প্রবাস থেকে পাঠানো সকল অর্থ তারা আত্মসাৎ করেছে। তাকে পাত্তা দিতো না। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সে ছুরিকাহত করেছে।
ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রকিব জানান, রিতুর মৃত দেহের ময়না তদন্ত সম্পন্নের পর শাশুড়ির লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চাঁদপুর প্রেরণ করা হয়েছে। নিহত রিতুর চাচা লিয়াকত খান বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ফরিদগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
/এসএস