

মওদুদিয়্যাত তথা মাওলানা আবুল আ’লা মওদূদীর কিতাব অধ্যয়ণ করলে যে কোনো ব্যাক্তি সাহাবা বিদ্ধেষী হয়ে উঠবে মন্তব্য করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ও হাটহাজারী মাদরাসার সহযোগী পরিচালক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন,
‘আমি মওদূদীর অনেক কিতাবাদী অধ্যয়ন করেছি। করে যা বুঝলাম, কোন ব্যক্তি যদি এই তার লিখিত বইপুস্তক পড়ে তাহলে মজমূ’য়ীভাবে (সামগ্রিকভাবে) সে সাহাবা ও সলফ-বিদ্ধেষী হয়ে উঠবে।’ পাশাপাশি ছাত্রদের আরও বলেন, মওদূদী জামাতসহ কেউ যদি ভয়ংকর ফেরকায়ে তাকফিরিয়্যার দালাল হিসেবে ধরা পড়ে কঠিন শাস্তিসহ বহিষ্কারের সিদ্ধান্তও নেওয়া হবে।
গত মঙ্গলবার (৯ জুলাই) হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি ইসলামের নামে বাতিল ফেরকা বা ইসলামের পবিত্র বিধান জিহাদের নামে সন্ত্রাস পরিচালনা করা দল বা গোষ্ঠির মুখোশ উম্মোচন করে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ওলামায়ে দেওবন্দ, ওলামায়ে হাটহাজারী জিহাদ করে না। জিহাদে বিশ্বাসী নয়। তারা জিহাদের বিরোধিতা করে। আল্লামা বাবুনগরী তাদের উত্তরে বলেন, আমাদের আকাবীরে দেওবন্দ জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন, শাহাদাতের অনেক দৃষ্টান্ত আছে।
কিন্তু আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যারা এসমস্ত কথাবার্তা বলে ছাত্রসমাজ ও সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টায় লিপ্ত তারাই মূলত জিহাদ অস্বীকারকারী এবং সন্ত্রাসের সাথে পবিত্র বিধান জিহাদকে গুলিয়ে ফেলার হীন চেষ্টায় লিপ্ত। তারা ইসলামের কেউ নয় বরং তারা কওমী ও ইসলামের শত্রু।
আল্লামা বাবুনগরী আরও বলেন, জিহাদ বিস-সাইফ যেমন আছে, জিহাদ বিল-কলমও আছে, জিহাদ বিল-লিসানও আছে এবং সবচেয়ে বড় জিহাদ হচ্ছে নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করা। (তখন আল্লামা বাবুনগরী তাহাজ্জুদের উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং কতজন ছাত্র আজকে তাহাজ্জুদ পড়েছে সেটাও দেখেন।) কলমের ও লিসানের জিহাদ করতে হবে। এবং নফসের বিরুদ্ধেও জিহাদ করতে হবে। আমরা এই দুই প্রকারের জিহাদই করতেছি।
তলোয়ারের জিহাদের জন্য অনেকগুলো শর্তও আছে। রাষ্ট্রদ্রোহী, দেশদ্রোহী, নাস্তিক-মুরতাদ, আল্লাহ-আল্লাহর রাসূলের দুশমনদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করাও জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। তবে সেরকম পরিবেশ ও শক্তিমত্তাও থাকতে হবে।
আল্লামা বাবুনগরী ছাত্রদের উদ্দেশ্য বলেন, আপনারা এই তাকফীরি জামাআতের ফাঁদে পা ফেলবেন না। নিজেও ধ্বংস হবেন না এবং অপরকেও ধ্বংস করবেন না। তিনি অজ্ঞাত ব্যক্তির (যোবায়ের আহমদ) বই, লিখা, পত্রিকাসহ সবকিছু বর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ছাত্রদেরকে মওদূদীর বই পুস্তকও পড়া থেকে নিষেধ করেছেন।
প্রসঙ্গত : সম্প্রতি ইসলামের পবিত্র বিধান জিহাদের নামে অনেকেই নিজস্ব কিছু ধ্যাণ-ধারণা মানুষের ওপর চাঁপিয়ে দিয়ে ইসলামকে কলূষিত করার প্রচেষ্ঠায় লিপ্ত আছেন। যারা ওলামায়ে কেরামদের নামে কুৎসা রটিয়ে মানুষকে ওলামায়ে কেরামদের থেকে দুরে সরিয়ে রাখার পায়তারা করছেন বলে অভিযোগ অনেকের। এ ছাড়াও কওমী মাদরাসার ছাত্রদের মধ্যে কৌশলে মওদূদিয়্যাত ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্ঠায়ও লিপ্ত আছেন অনেকে। যাদের ব্যাপারে সতর্ক করেই আল্লামা বাবুনগরী হাটহাজারী মাদরাসায় ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিয়েছেন। আল্লামা বাবুনগরী ছাড়াও হাটহাজারী মাদরাসার সিনিয়র উস্তাদ মুফতী জসীমুদ্দীন , মাওলানা ফোরকান , মাওলানা মাহবুবুল আলম সহ আরো অনেক সিনিয়র উস্তাদগণ উক্ত মজলিসে এই ফিরকার ব্যাপারে সাধারণ জনতার সাথে সাথে বিশেষ করে কওমী ছাত্রসমাজকে হুশিয়ার করেন।
মাওলানা ফোরকান বলেন, তাকফিরি জামাআত, আহলে হাদিস, মওদুদিপন্থী, হিজবুত তাওহীদসহ অধিকাংশ বাতেল ফেরকা ইসলামের দুশমন শিয়াদের দালাল। সুতরাং আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, যেন তারা আমাদেরকে গ্রাস করতে না পারে।