
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাস্টবিন থেকে ৩১ নবজাতকের মরদেহ উদ্ধারের মত মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার রাত ৮ টার দিকে এসব মরদেহ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাওয়া যায়। যার অধিকাংশই ছিল বোতলজাত। রাত পৌনে ১০টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহগুলোর সুরতহাল শুরু করে।
সবার ধারণা ছিল ছিন্নভিন্ন এ দেহগুলো হাসপাতালে নবজাকত অ্যাবরশন করা বা “বাচ্চা নষ্ট” করার কারণে হয়েছে কিন্তু হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে ভিন্নরকম বক্তব্য দিয়েছে। তারা জানান, হাসপাতালে স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেয়া অপরিণত শিশুর মৃতদেহ কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য মেডিসিনের মাধ্যমে বোতলে ভরে রাখা হয়। ১৫/২০ বছর পূর্বে অপরিণত এসব শিশুর মৃতদেহ সংরক্ষণ করা হয়। ওই বোতলগুলো গাইনি ওয়ার্ডে সংরক্ষিত ছিল। তাছাড়া বোতলে থাকা মেডিসিনের মেয়াদও শেষপর্যায়ে থাকায় তা মাটিচাপা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ওয়ার্ড-বয়রা কোনো কিছু না বলে হাসপাতালের পেছনে ডাস্টবিনে স্তূপকারে ফেলে রাখে। পরবর্তীতে টোকাইরা সেখান থেকে অপরিণত শিশুর মৃতদেহ ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বের করে নিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার রাত ৮টার দিকে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের লোকজন হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ময়লা অপসারণ করতে গেলে জরুরি বিভাগসংলগ্ন পানির টাংকির নিচ থেকে অপরিণত শিশু এবং মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পায়। এ ঘটনা জানাজানি হলে শত শত মানুষ ভিড় করে।
হাসপাতালের পরিচালক বলেন, যেগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে সেগুলো নিয়মানুযায়ী মাটিতে পুঁতে ফেলতে হয়। কিন্ত গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. খুরশিদ জাহানের নির্দেশে ওই বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির নারী কর্মচারীরা শিশু ও মানবদেহের অঙ্গগুলো মাটিতে না পুঁতে ড্রেন ও ডাস্টবিনে ফেলেছে। যা মোটেই ঠিক হয়নি।
তবে এ বিষয়ে একজন আলেমের মতামত নেয়া হলে তিনি বলেন, অপরিণত হোক পরিণত হোক সন্তান জন্ম নেয়ার পর অবশ্যই সাথে সাথে দাফন করে ফেলতে হবে। কোনভাবেই তা সংরক্ষণ করা শরিয়তসম্মত নয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুসারে এ বাচ্চাগুলো যদি স্বাভাবিকভাবে মৃত জন্ম নিয়ে থাকে তবে তা কোনভাবেই সংরক্ষণ করার মত গর্হিত কাজ করা সমর্থনযোগ্য নয়।
এমন নির্মম ঘটনার পরও এখনও বিভাগের দায়িত্বে থাকা কেউ বরখাস্ত হয়নি এখনও। তবে বরিশাল মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. খুরশিদ জাহান এবং ওই বিভাগের ওয়ার্ড ইনচার্জ নার্স জোসনা বেগমকে সাময়িক বরখাস্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল পরিচালক ডা. এসএম বাকির হোসেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার সকালে তাদেরকে সাময়িক বরখাস্তের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হবে।
ঘটনাস্থলে থাকা কোতয়ালী থানা পুলিশের এসআই মো. রফিকুল ইসলাম জানান, অপরিণত মৃতদেহগুলো সুরতহাল করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আইনগতভাবে যা করণীয় তা করা হবে। কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মো. নুরুল ইসলাম জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

