মুফতি শহিদুল ইসলাম সিয়াম
অতিথি লেখক
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই আমাদের লালন পালন করছেন। সুতরাং সৃষ্ট হিসেবে আমাদের করণীয় হচ্ছে, স্রষ্টাকে সন্তুষ্ট রাখা। তাই আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে প্রতিদিন যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন তা আবশ্যিকভাবে নিয়মিত আদায় করব।
পাশাপাশি আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করতে আমাদের নফল আদায়ে সচেষ্ট হতে হবে। আর নফল ইবাদাতের মাঝে গুরুত্বপূর্ণ নফল হচ্ছে তাহাজ্জুদের নামাজ।
তাহাজ্জুদ অর্থ ঘুম থেকে জাগা / রাত্রি জাগরন করা।
তাহাজ্জুদের সময় হলো ইশার নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে তারপর অর্ধেক রাতের পর নামাজ আদায় করা। সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত থাকে। গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে নামাজ আদায়ে সাওয়াব বেশি এবং এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ।
পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে, যারা শেষ রাতে ইবাদাত ও প্রার্থনা করেন তাদের প্রশংসাস্বরূপ কিয়ামতের দিনে বলবেন, ‘তারা রাতের সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত করে এবং রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে। (সূরা আয-যারিয়াত আয়াত-১৭-১৮)
রাসূল সা.কে সম্বোধন করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক আরও বলেন, 'وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَكَ عَسَىٰ أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا' অর্থ: এবং রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ পড়তে থাকুন। এটি আপনার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, আপনার প্রভু আপনাকে মাকামে মাহমুদে অধিষ্ঠিত করবেন। (সূরা বাণী-ইসরাঈল আয়াত- ৭৯)
আল্লাহর কোরআনে তার প্রিয় বান্দাদের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি এরশাদ করেন, وَالَّذِينَ يَبِيتُونَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَقِيَامًا অর্থাৎ ‘আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।’
হাদিস শরিফেও তাহাজ্জুদের গুরুত্ব
মিশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থকার সুনানে আহমদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘আবু হোরায়রা রা. বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সা.কে বলতে শুনেছি- ' أفضلُ الصَّلاةِ بعدَ المَفروضةِ صلاةُ اللَّيلِ 'অর্থাৎ ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো রাতের (তথা তাহাজ্জুদের) নামাজ। (হাদিস নম্বর ১১৬৭/২।)
সহীহ বুখারী ও মুসলিম এর বর্ণনায় এসেছে, হজরত আবু হোরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন, ‘আল্লাহ প্রতি রাতেই নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন যখন রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে।
তিনি তখন বলতে থাকেন- কে আছো যে আমায় ডাকবে, আর আমি তার ডাকে সাড়া দেবো? কে আছো যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আর আমি তাকে তা দান করব? কে আছো যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করব? (বুখারি ১১৪৫/ মুসলিম ৭৫৮)
উপরোক্ত কোরআন ও হাদিসের বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, নফল নামজের মধ্যে তাহাজ্জুদ খুবই মর্যাদাপূর্ণ নামাজ। এই নামাজ প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীরই পালন করা উচিত। আর সামনে যেহেতু রমজান মাস আসছে, সেহেতু আমরা সবাই সহজেই তাহাজ্জুদের প্রতি যত্নবান হতে পারি। আশা করা যায় এই নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ সহজ হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই মহা পুণ্যবান তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: মুশরিফ- উচ্চতর ইসলামী আইন গবেষণা অনুষদ, মারকাযুত তাকওয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা